রমজান ও কুরআন
লেখকঃ এম সাইফুল ইসলাম নেজামী
সাহারি গ্রহণ করে ফরজের নামাজ শেষে সামান্য বিশ্রাম। ওঠে গেলাম কিছুক্ষণ পর। রাত্রিশেষে গোলাপী আলোর আভা পূর্বাকাশে। এখনো ফুটেনি দিনের আলো। পূর্ব গগনে সূয্যিমামা এখনো হাসেনি। সকালের শুভ্র স্নিগ্ধ হাওয়া। কী এক জান্নাতি পরিবেশ! এ হাওয়া গায়ে লাগনোও পূণ্যের। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ পাঠশালা মকতব থেকে ভেসে আসছে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ সুর: বিসমিল্লাহর রহমানির রাহিম। আল হামদুলিল্লা—হি রাব্বিল ‘আ—লামীন। আররাহমা—নির রাহীম…। এ সুর পবিত্র কুরআনের। এ সুরের রচয়িতা পরওয়ার দিগার। যে সুরে আছে প্রেম। আছে মুগ্ধতা। আছে আলো। যে আলো হেরার। যে আলো লওহে মাহফুজের। যে আলোতে আলোকিত ব্যক্তিজীবন। যে আলোর ঝলকানিতে অজ্ঞতার তিমির মুক্ত হয়েছে এ নীল গগন।
রমজান আর কুরআন একই সুত্রে গাঁথা। বলা হয় কুরআনের মাস রমজান। আল্লাহও মাহে রমজানকে কুরআন প্রেরণের জন্য নির্বাচন করেছেন। নিঃসন্দেহে হিজরি বর্ষে শ্রেষ্ঠ মাস মাহে রমজান। রমজান মাস শুধুমাত্র সিয়াম সাধনার কারণে শ্রেষ্ঠ তা কিন্তু নয়। রমজান শ্রেষ্ঠত্বের অন্যতম কারণ, এ মাসে সর্বাধিক পঠিত ও সর্বাধিক সমাদৃত এবং সর্বোচ্চ মর্যাদার কিতাব পবিত্র কুরআন নাযিল হয়েছেন। যেমন সুরা বাকারায় আল্লাহ তায়ালা বলেন, “রমজান মাস, এতে নাজিল হয়েছে কুরআন, যা মানুষের দিশারি ও স্পষ্ট নিদর্শন এবং সত্য—মিথ্যার পার্থক্যকারী।” রমজান হলো কুরআন চর্চার মোক্ষম সময়। প্রিয়নবীর জীবনাদর্শও সে কথা বলে। বুখারী শরীফের এসেছে: সাহেবে কুরআন নবী মোস্তফা (দ.) প্রতি রমজানে হজরত জিবরাইল (আ.)—কে অবতীর্ণ পূর্ণ কুরআন একবার শোনাতেন এবং হজরত জিবরাইল (আ.)ও প্রিয়নবী (দ.)—কে অবতীর্ণ পূর্ণ কুরআন একবার শোনাতেন। প্রিয়নবী (দ.)—এর জাহেরি জীবনের শেষ রমজানে মহানবী (দ.) রুহুল আমিন (আ.)—কে পূর্ণ কুরআন শরিফ দু’বার শোনান এবং সৈয়দুল মালায়েকা (আ.)—ও মহানবী (দ.)—কে পূর্ণ কুরআন শরিফ দু’বার শোনান। এতে পরিষ্কার হয়ে যায়, রমজান মাস হলো কুরআন শিক্ষণ—প্রশিক্ষণ, কুরআন পঠন—পাঠন ও কুরআন চর্চার মাস। মাহে রমজান কুরআন নাজিলের মাস হওয়ায় এ মাসে পবিত্র কুরআন তেলাওয়াতের সওয়াবও অপরিসীম। প্রিয় নবীর বাণী— “অন্তরের কলুষতা পরিষ্কার করার উপায় হলো বেশি বেশি মৃত্যুকে স্মরণ করা এবং কুরআন তেলাওয়াত করা।” সাহেবে কুরআন (দ.) আরও বলেছেন, “রোজাসমূহ এবং কুরআন আল্লাহর দরবারে বান্দার জন্য সুপারিশ করবে।” দিনে রোজামুখে কুরআন তেলোয়াত করা। রাতে তারাবির জামাতে হাফেজে কুরআনদের মন্ত্রমুগ্ধ কণ্ঠে তেলাওয়াত শুনে বরকত হাসিলের সুযোগটা শুধুমাত্র রমজানেই পাওয়া যায়। কুরআনে কারিম তেলাওয়াতের মতো শুনলেও একই রকম সওয়াবের সুসংবাদ আছে।
মহা—সম্মানিত সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ি, তাবে—তাবেয়ি ও সালফে সালেহীন এবং ইমামগনের জীবনী রিসার্চ করলে দেখা যায় যে, তারা এবং পরিবারের সদস্যগণ প্রত্যেকে রমজানে সাধ্যমতো কুরআন শরীফ খতম করতেন। তাঁরা কুরআনের মাঝে নিমগ্ন হয়ে যেতেন। কুরআন তেলাওয়াকে তাঁরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতেন। ইসলামের ৩য় খলিফা, প্রিয় নবী (দ.)’র প্রিয় জামাতা হযরত উসমান যুন্নুরাইন (রা.) প্রতিরাতে এক খতম কুরআন তেলাওয়াত করতেন। এটা ছিল জামিউল কুরআন উসমান (রা.)’র কুরআনের প্রতি নিরেট প্রেমের বহিঃপ্রকাশ। অবশ্য এ আমল তিনি সারাবছর করতেন। রমজান মাসে এ আমল আরো বৃদ্ধি পেত। বিশ্ব নন্দিত হাফিজুল হাদিস, বুখারী শরীফের সংকলক, মুহাম্মদ বিন ইসমাঈল বুখারী (রহ.) সম্পর্কে মুসাব্বিহ বিন সাঈদ (রহ.) বলেছেন, তিনি রমযানের প্রতি দিবসে এক খতম করে কুরআন তেলাওয়াত করতেন। ফিকাহ শাস্ত্রের প্রবর্তক ইমামে আজম আবু হানিফা (রা.) রমজান মাসে কুরআন শরীফ মোট ৬১ (একষট্টি) খতম দিতেন। সুবহানাল্লাহ। যুগের হক্কানি ওলামায়ে কেরাম ও মুত্তাকী পরহেজগার আল্লাহর বান্দারাও কুরবানী প্রতি সমধিক যত্নবান। হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে রহমতের দৃষ্টিতে মাগফিরাত দান করে নাজাত প্রদানে ধন্য করুন। বিশ্বময় কুরআনের বাণী প্রচারে আমাদের সহায় হোন। রমজানের ইবাদত ও কুরআন তেলোয়াতের মধুর সুরে মহামারি করোনার অন্ধকার দূর করে দিন। (আমিন)
খতিব—গাউসিয়া উসমান চৌধুরী জামে মসজিদ, চট্টগ্রাম।