প্রতিবেশীর হক
সেনানী ডেস্ক
নিজের বাসস্থানের নিকটে অবস্থানকৃত লােকদেরকে প্রতিবেশী বলে। বাড়ীর চতুর্দিকের ৪০ বাড়ি হলাে প্রতিবেশী। ইমাম যুহরী (র.) বলেন- কারাে চারপাশে 8০ গজের মধ্যে যারা আছে তারা হলাে প্রতিবেশী। প্রতিবেশীরা আত্মীয়-স্বজনের চেয়ে অধিক কাজে আসে। প্রতিবেশীরাই বিপদে-আপদে, দুঃখ-দুর্দশায় প্রথমে এগিয়ে আসে। বিয়ে-শাদীসহ বিভিন্ন সামাজিক আচার-অনুষ্ঠানে প্রতিবেশীর ভূমিকা থাকে উল্লেখযােগ্য।
পবিত্র কুরআনে পিতা-মাতার সাথে প্রতিবেশীর হকের কথাও বলা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন- والجار ذي القربى الحنب “নিকটবর্তী ও দূরবর্তী প্রতিবেশীর সাথে সদয় ব্যবহার কর।” (সুরা নিসা)
এদের হক হল তিনটি। একটি আত্মীয়তার, দ্বিতীয়টি মুসলিম হিসেবে, তৃতীয়টি প্রতিবেশী হওয়ার জন্য। এতে প্রতীয়মান হয় যে, প্রতিবেশী অমুসলিম হলেও তাদের
সাথে সদ্ব্যবহার করতে হবে। প্রতিবেশীকে কষ্ট দেওয়া ঈমানের পরিপন্থী কাজ।
“যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন তার প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়।” (মিশকাত)
হযরত আয়েশা ও ইবনে ওমর (রা) থেকে বর্ণিত, নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন- ما زال جبريل يوصيني بالجار،حتى ظننت انه سيورثه “জিব্রাইল (আ.) আমাকে প্রতিবেশী সম্পর্কে এত বেশী তাকীদ দিতেন, মনে হয়েছিল তিনি তাদেরকে আমার
ওয়ারিশ বানিয়ে দিবেন।” (বুখারী ও মুসলিম শরীফ)
والله لا يؤمن والله لا يؤمن والله لا يؤمن قيل من يا رسول الله لا يامن جاره –
“আল্লাহর কসম! সে ব্যক্তি ঈমানদার নয়। প্রশ্ন করা হলাে, হে আল্লাহর রাসূল! কে সে ব্যক্তি? উত্তরে তিনি বলেন- যার প্রতিবেশী তার অনিষ্ট থেকে নিরাপদ থাকতে পারেনা।” (বুখারী ও মুসলিম শরীফ)
প্রতিবেশীর সাথে সদ্ব্যবহার করা, তাদের মঙ্গল কামনা করা, তাদের কোন প্রকার কষ্ট-যন্ত্রণা না দেওয়া , তাদের উপকার করা, গরীব প্রতিবেশীকে দান করা এবং ক্ষুধার্ত প্রতিবেশীকে খাবার দেওয়া প্রত্যক ঈমানদারের ঈমানী দায়িত্ব।
“ঐ ব্যক্তি পূর্ণ ঈমানদার নয়, যে তৃপ্তিসহকারে খাবার খায় অথচ তার প্রতিবেশী তার পাশে অভুক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে।” (শুয়াবুল ঈমান)
হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন, নবী করিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন।
এরশাদ করেন- لايدخل الجنة من لا يامن جاره بوائقه
“সে ব্যক্তি প্রথম দফায় বেহেস্তে প্রবেশ করবেনা,
যার প্রতিবেশী তার ক্ষতিসমূহ থেকে নিরাপদ নয়।” (সহীহ মুসলিম)
আাল্লাহর নিকট সেই প্রতিবেশীই উত্তম, যে নিজের প্রতিবেশীর কাছে উত্তম।” (তিরমীযি শরীফ)
প্রতিবেশীই হলাে মানুষের ভাল-মন্দের বিচারক। হাদিস শরীফে আছে- এক ব্যক্তি নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল!
كيف لي أن أعلم إذا أحسنت أو إذا أسأت، فقال التبي صلى الله عليه وسلم: إذا سمغت جيرانك يقولون: قذ أخسنت فقَد أحسنت،و إذا سمعتهم يقولون: قد أسات فقد أسات-
আমি কিভাবে জানবাে যে, আমি ভাল কাজ করলাম না মন্দ করলাম? উত্তরে তিনি বললেন, যখন তুমি তােমার প্রতিবেশীগণকে বলতে শুনবে যে, তুমি ভাল কাজ করেছ, তাহলে তুমি বুঝবে নিশ্চয় তুমি ভালকাজ করেছ। আর যখন তুমি তাদেরকে বলতে শুনবে যে, তুমি মন্দ কাজ করেছ, তাহলে বুঝবে যে, নিশ্চয় তুমি মন্দ কাজ করেছ। (ইবনে মাজাহ শরীফ)
নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, هي فى النار সে জাহান্নামে যাবে। লােকটি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! অমুক মহিলা সম্পর্কে জনশ্রতি আছে যে, সে রােযা কম রাখে, সাদকা কম দেয় এবং নামায কম পড়ে। অবশ্য দু’এক টুকরাে পনির সাদকা করে। কিন্তু সে নিজের মুখ দ্বারা প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয়না।
হাদিয়া আদান-প্রদান করলে মানুষের মধ্যে আন্তরিকতা ও ভালবাসা সৃষ্টি হয়। তাই প্রতিবেশীর সাথে আন্তরিকতা ও ভালােবাসা সৃষ্টি কিংবা বৃদ্ধির জন্যে নবী করিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতিবেশীকে হাদিয়া প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন- إذا طبخت مرقة، فأكثر ماءها، وتعاهد جيرانك
“যখন তুমি তরকারী রান্না করবে তাতে কিছু ঝােল বেশী দেবে, আর তােমার প্রতিবেশীকে হাদিয়া দিবে।” (সহীহ মুসলিম শরীফ)
কেউ যদি পছন্দ করে যে , আল্লাহ এবং রাসূল তাকে ভাল বাসবে, তাহলে সে যেন সত্য কথা বলে, আমানত আদায় করে এবং নিজের প্রতিবেশীকে যেন কষ্ট না দেয়। (শুয়াবুল ঈমান)
প্রতিবেশীকে সম্মান করা নৈতিক কর্তব্য। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন-
من كان يؤمن بالله واليوم الآخر فليكرم جاره، ومن كان يؤمن بالله واليوم الآخر فليكرم ضيفه-
যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন প্রতিবেশীকে এবং মেহমানকে সম্মান করে। (সহীহ বুখারী শরীফ)
با نساء المسلمّات: لا تحقر ن جارة لجا رتھا ولو فرسن شاة-
হে মুসলিম রমণীগণ! কোন প্রতিবেশী নারী যেন তার অপর প্রতিবেশী নারীকে (তার হাদিয়া ফেরত দিয়ে) হেয় প্রতিপন্ন না করে। যদিও তা বকরীর পায়ের ক্ষুর হােক না কেন। (সহীহ বুখারী শরীফ)