গেয়ারভী শরীফ কী
সেনানী ডেস্ক
হুযূর গাউসে পাকের স্মরণে ও সম্মানে প্রতি আরবি মাসের ১১ তারিখ যে বিশেষ দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়, তাকেই গেয়ারভী শরীফ বলা হয়।
বড়পীর রাহমাতুল্লাহি আলাইহি পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উদযাপন উপলক্ষে প্রতি মাসের ১২ তারিখ বারভী শরীফ পালন করতেন। একদিন গাউসে পাক স্বপ্নের মধ্যে নবী পাককে দেখলেন নবীজী গাউসে পাককে উদ্দেশ্য করে বলেন, “আমার ১২’ই রবিউল আউয়ালকে তুমি যেভাবে সম্মান করে পালন করে আসছো, আমি এর বিনিময়ে তোমাকে ‘গেয়ারভী শরীফ’ দান করলাম।”
সাধারণ মুসলিম ভাইয়েরা এ দিবসটি উপলক্ষে পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত, হামদ-না’ত, জিকির-আযকার, দো‘আ-দুরুদ, বয়ান-তাক্বরীর, মিলাদ-ক্বিয়াম, সালাত-সালাম সহ আরো অনেক উত্তম ও নফল কাজ করেন। উন্নত মানের খানা পাকিয়ে ১১ শরীফ উপলক্ষে তা পরিবার-পরিজন, গরিব-দুঃখী, অনাথ-এতিমদের মাঝে বিতরণ করা হয়। যা ইসলামের অন্যতম আদর্শ ও গ্রহণীয় সংস্কৃতি।
মুফতী আহমদ ইয়ার খান নঈমী (রহঃ) স্বীয় রচিত তাফসীর-আহ্ছানুত তাফসীরে নঈমীর প্রথম পাড়া সূরার বাকারা ২৭ নম্বর আয়াত পৃষ্ঠা ২৯৭’তে হযরত আদম (আ.) তাওবা প্রসঙ্গে সংক্ষেপে গেয়ারভী শরীফের ভিত্তি ও ইতিকথা লিপিবদ্ধ করেছেন। সেখানে তিনি প্রসিদ্ধ আম্বিয়ায়ে কেরাম আলাইহিমুস সালামগণের গেয়ারভী শরীফ পালনের ইতিকথা বর্ণনা করেছেন। নিম্নে তা উল্লেখ করা হল-
২। হযরত নূহ্ (আ.) মহা প্লাবনের সময় রজব মাসের ১০ তারিখ থেকে মুহররম মাসের ১০ তারিখে পর্যন্ত ছয় মাস ৭২জন সঙ্গী নিয়ে কিস্তির মধ্যে ভাসমান ছিলেন। গাছ-গাছালী, পাহাড়-পর্বত সব কিছু ছিল পানির নীচে। অতঃপর আল্লাহর রহমতে ছয়মাস পর তাঁর নৌকা জুদী পাহাড়ের চূড়ায় এসে ঠেকলো। পানি কমে কমে গেলে তিনি নৌকা থেকে নেমে আসেন। ঐ তারিখটিও ছিল আশুরার দিবস। তিনি এই মহাবিপদের মহামুক্তি উপলক্ষে সকলকে নিয়ে ১১ই রাত্রে শুকরিয়া স্বরূপ ইবাদত করেছিলেন। এটা ছিল নূহ নবীর (আ.) গেয়ারভী শরীফ।
৪। হযরত ইয়াকুব (আ.) আপন প্রিয়তম পুত্র হযরত ইউসুফ (আ.) কে হারিয়ে চল্লিশ বৎসর একাধারে কান্নারত ছিলেন। কুরআনে বর্ণিত বহু ঘটনার পর অবশেষে তিনি হারানো পুত্রকে ফিরে পেলেন এবং তাঁর অন্ধ চক্ষু হযরত ইউসুফ (আঃ) এর জামার বরকতে ফিরে পেলেন। এই দীর্ঘ বিপদ মুক্তির দিনটিও ছিল আশুরার দিন। তিনি ঐ রাত্রে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করলেন। এটা ছিল হযরত ইয়াকুব (আ.)-এর গেয়ারভী শরীফ।
৬। হযরত মুসা (আ.) ও বণি ইসরাঈলকে মিশরের অধিপতি ফেরাউন বহু কষ্ট দিয়েছিল। নবীর সাথে তাঁর বেয়াদবী যখন সীমা ছাড়িয়ে যায় এবং তার খোদায়ী দাবীর মেয়াদ ফুরিয়ে যায়, তখন আল্লার নির্দেশে হযরত মুছা (আ.) শিশুসহ বার লক্ষ বনি ইসরাঈলকে নিয়ে মিশর ত্যাগ করেন। সামনে নীল নদ। আল্লাহর নির্দেশে তাঁর লাঠির আঘাতে নীল নদের পানি দ্বিখন্ডিত হয়ে দু’দিকে পাহাড়ের মত দেয়াল স্বরূপ দাঁড়িয়ে যায় এবং ১২টি শুকনো রাস্তা হয়ে যায়। প্রত্যেক রাস্তা দিয়ে এক লক্ষ লোক তড়িৎ গেিত অতিক্রম করে নদীর ফর তীরে এশিয়া ভূখন্ডে প্রবেশ করে। ফেরাউন তাঁদের পশ্চাদ্ধাবন করতে দিয়ে দু’দিকের পাহাড়সম পানির আঘাত স্বাসৈন্যে ডুবে মরে। হযরত মুসা (আ.) ও তাঁর সঙ্গীদের এই মহা মুক্তির দিনটিও ছিল আশুরার দিন। তিনি সঙ্গীসহ ১১ তারিখ রাত্রে শুকরিয়া আল্লাহর ইবাদতে নিমগ্ন থাকেন। এটা ছিল হযরত মুছা (আ.) গেয়ারভী শরীফ। নবী করিম (দ.) মদিনার ইহুদী জাতিকে আশুরার দিনে রোযা পালন করতে দেখেছেন। তাই উম্মতে মোহাম্মাদির জন্য আশুরার রোযা রাখা নফল করে দিয়েছেন।
৮। হযরত দাউদ (আ.) সালাম একশতম বৈধ বিবাহের কারণে আল্লাহর ইঙ্গিতে অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে সিজদায় পড়ে তাওবা করেন। আল্লাহ তাঁর তাওবা কবুল করে খুশী হয়ে যান। ঐ দিনটিও ছিল আশুরার দিন। তাই তিনি ঐ রাত্রে শুকরিয়া আদায় করেন। এটা ছিল হযরত দাউদ (আ.)- এর গেয়ারভী শরীফ।
১০। হযরত ঈসা (আ.) ইহুদী জাতি কখনও বরদাস্ত করতে পারেনি। ইহুদী রাজা হোরোডেটাস গুপ্তচর মাফরত হযরত ঈসা (আ.) কে গ্রেফতার করার ষড়যন্ত্র করে। কিন্তু আল্লাহ পাক ঈসা (আ.)কে জিব্রাইলের মাধ্যমে আকাশে তুলে নেন এবং ঐ গুপ্তচরের আকৃতি পরিবর্তন করে ঈসা (আ.) এর আকৃতির অনুরূপ করে দেন। অবশেষে ঈসা (আ.)-এর শত্রু কে ধৃত হয়ে শুলে বিদ্ধ হয়। হযরত ঈসা (আ.) এর আকাশে উত্তোলনের দিনটিও ছিল আশুরার দিন। তিনি মহাবিপদ থেকে মুক্তি পেয়ে ঐ রাত্রে আকাশে খোদার কাছে শুকরিয়া আদায় করেন। এটাই হযরত ঈসা (আ.)- এর গেয়ারভী শরীফ।
যেদিন এই সুসংবাদবাহী আয়াত নাযিল হয়- সেদিনটিও ছিল মুহররম মাসের ১০ তারিখ। মহা বিজয় ও গুনাহ্ মাগফিরাতের সুসংবাদ শ্রবণ করে সাহাবায়ে কেরাম হোদায়বিয়া চুক্তির প্রকৃত রহস্য বুঝতে পারেন। নবী করীম (দ.) এবং সাহাবায়ে কেরাম ঐ ১১’ই রাত্র আল্লাহ তায়ালার শুকরিয়া আদায় করে কাটিয়ে দেন। এটা ছিল হুযুর (দ.)-এর গেয়ারভী শরীফ।
গেয়ারভী শরীফের ফযীলত
‘মিলাদে শাইখে বরহক্ব’ বা ‘ফাজায়েলে গাউসিয়া’ নামক কিতাবে বর্ণিত আছে যে, গেয়ারভী শরীফের ফজিলত অগণিত, যার বর্ণনা লিপিবদ্ধ করা সম্ভব নয়। তবে মুমিন মুসলমান বিশেষ করে গাউসে পাকের আশেকানের অবগতির জন্য কয়েকটি ফজিলত নিম্নে প্রদত্ত হল-
• তানাযযার্লু রাহমাতু ইনদা যিকরিছ সোয়ালিহীন‘র বর্ণনা অনুযায়ী, গেয়ারভী শরীফ যেখানে পালিত হয় আল্লাহর রহমত সেখানে অবতীর্ণ হয়।
• যে ব্যক্তি এটা পালন করবে সে খায়ের ও বরকত লাভ করবে এবং পৃথিবীর পূর্ব হতে পশ্চিম প্রান্ত পর্যন্ত এটা ক্বিয়ামত অবধি জারি থাকবে।
অতএব, অজুর সাথে জাঁকজমকপূর্ণ পরিবেশে সম্মান সহকারে গেয়ারভী শরীফ পালন করা প্রত্যেক মুসলমানের কর্তব্য।
দরুদে তাজ পাঠের পর, প্রত্যেক তসবীহ ১১ বার করে পড়বে-
১। বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম ১১ বার।
৩। দরূদ শরীফ (পূর্ব নিয়মে) ১১ বার।
৫। সূরা ইখলাছ ১১ বার।
৭। আস্-সলাতু ওয়াস্ সালামু আলাইকা সাইয়্যেদী ইয়া হাবীবাল্লাহ্ ১১বার।
৯। ইল্লাল্লাহু ১১ বার।
১১। আল্লাহ্- ১১ বার।
১৩। হু- ১১ বার।
১৫। আল্লাহু লা-ইলাহা ইল্লাহু ১১ বার।
১৭। আন্তাল্ হাদী আল্ হক্ব, লাইসাল্ হাদী ইল্লাহু- ১১বার।
১৯। মা-ফী কালবী গাইরুল্লাহ্ ১১ বার।
২২। লা মাওজুদা ইল্লাল্লাহ্ ১১ বার।
২৪। হুওয়াল্ মুছাওউয়িরুল্ মুহীত্বো আল্লাহ্ ১১বার
২৬। আস্-সলাতু ওয়াস্ সালামু আলাইকা সাইয়্যেদী ইয়া রাসূলাল্লাহ্ ১১ বার
২৮। ইয়া শায়খ সুলতান সৈয়দ আবদুল কাদের জীলানী শাইআঁনলিল্লাহ্ ১১ বার
৩০। ক্বাসীদায়ে গাউসিয়া শরীফ (পর পৃষ্ঠায় দ্রষ্টব্য) ১ বার
৩২। যিকর শরীফ :
(খ) ইল্লাল্লাহ্ ১০০ বার
(গ) আল্লাহু ১০০বার
৩৪। আখেরী মুনাজাত