ইসলামে নবীদ্রোহীদের পরিণতি
অধ্যক্ষ মাওলানা মুহাম্মদ বদিউল আলম রিজভি
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। যিনি তাঁর প্রিয় রাসূলের মর্যাদাকে সমুন্নত করেছেন। তাঁর প্রতি ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান স্থাপন মু’মীনের জন্য অপরিহার্য করেছেন। এরশাদ করেছেন, “হে মুমীনগণ তোমরা আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আন।” (সূরা: নিসা, আয়াত: ১৩৬)
আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই। তিনি একক অদ্বিতীয়, তাঁর কোন অংশীদার নেই। আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি আমাদের অভিভাবক সর্দার সত্যের দিশারী শাফায়াতের কান্ডারী হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর প্রিয় বান্দা ও প্রিয় রাসূল। তাঁর প্রতি অসংখ্য দরুদ সালাম বর্ষিত হোক। তাঁর পবিত্র বংশধরগণ সম্মানিত সাহাবাগণ নিষ্ঠার সাথে তাঁর পদাঙ্ক অনুসারীদের প্রতি করুণাধারা বর্ষিত হোক।
আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করুন। আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করুন। আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেছেন, “এবং যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে তারা অবশ্যই মহাসাফল্য অর্জন করবে।” (সূরা: আহযাব, আয়াত: ৭১)
রাসূলের প্রতি আনুগত্য ঈমানের মাপকাঠি :
খোদাদোহী নবী দোহীদের জন্য আল্লাহ তা’আলা কঠিন শাস্তি নির্ধারণ করে রেখেছেন। এরশাদ করেছেন, “যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনেনা আমি সে সব কাফিরদের জন্য জলন্ত অগ্নি প্রস্তুত রেখেছি। (সূরা: ফাতহ, আয়াত:১৩)
মানব জাতিকে আল্লাহতা’আলা তারই দাসত্ব করার জন্য সৃষ্টি করেছেন। পক্ষান্তরে আল্লাহ ও তদীয় রাসূলকে অস্বীকারকারী, বিরোধীতাকারী ও অবমাননাকারীদের জন্য ইহকাল পরকালে অসম্মান, অপমান, লাঞ্ছনা প্রস্তুত করে রেখেছেন। আল্লাহতা’আলা এরশাদ করেছেন, “যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তো তাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতে অভিশপ্ত করেন এবং তিনি তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন লাঞ্ছনা দায়ক শাস্তি। (সূরা: আহযাব, আয়াত: ৫৭)
নবীদ্রোহীদের শাস্তির বিধান :
নবীজির ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন; ইসলাম বিদ্বেষীদের ধৃষ্টতা :
নবীজির প্রচারিত ধর্ম পবিত্র ইসলামের বাণী সত্যের বাণী। তৌহিদ ও রিসালতের জয় ধ্বনি কলেমার আহবান আজ কেবল আরব ভূখন্ডের ভৌগোলিক সীমারেখায় সীমাবদ্ধ নেই। পৃথিবীর দিগ দিগন্তে এ বাণী আজ প্রচারিত প্রসারিত। নূর নবীজির আদর্শের বাণী আজ এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়ার প্রান্ত ছাড়িয়ে আমেরিকা প্রতিটি জনপদে আজ বিদ্যুৎগতিতে ছড়িয়ে পড়েছে। মুসলমানদের সংখ্যা ক্রমাগতভাবে এগিয়ে চলছে। ইসলাম বিদ্বেষীরা বেসামাল হয়ে পড়েছে। ফ্রান্সে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় বিশ্বনবী মানবতার অগ্রদূত কল্যাণের মূর্তপ্রতীক নবী মুহাম্মদ রাসূলুল্লাহর ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন করে ন্যক্কারজনক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। বিশ্ব ইতিহাসে বর্বরতার এক ঘৃণ্য কলংকিত অধ্যায় রচনা করেছে। ইসলামের দৃষ্টিতে নবী অবমাননা ধর্ম অবমাননার ধৃষ্টতা হত্যাযোগ্য অপরাধ। এর সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড।
ইসলামী বিশ্বে সমাদৃত সর্বজনগ্রাহ্য ফাতওয়াগ্রন্থ ‘দুররুল মুখতার’ এ উল্লেখ রয়েছে, “যে ব্যক্তি প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে গালমন্দ করল কিংবা তাঁকে মিথ্যারোপ করল অথবা তাঁর মানহানি করল অথবা তাঁর সমালোচনা বা দোষক্রটি বর্ণনা করল। সে আল্লাহর সঙ্গে কুফরি করল। এতে তার স্ত্রী তালাক হয়ে যাবে। (মুসলিম হলে) এমন ব্যক্তি যদি এহেন ধৃষ্টতাপূর্ণ বক্তব্য মন্তব্য প্রত্যাহার করে নেয় ক্ষমা প্রার্থনা করে তাওবা করে নিলে কোনভাবে বেঁচে গেল। অন্যথায় তাকে হত্যা করা হবে।
ইমাম মালিক (রা.) ইবনে হাবীব ও মাবসূত কিতাব দ্বয়ে উল্লেখ করেন, “ইহুদী ও খ্রিস্টানদের মধ্যে যারা আল্লাহ তা’আলাকে গালমন্দ করার কারণে কাফির হয়েছে তাদেরকে হত্যা করতে হবে। (আশ শিফা ২য় খন্ড)
বিধর্মী ব্যক্তি তার বিকৃত গ্রন্থের উদ্ধৃতি দিয়ে অনর্থক আল্লাহ তা’আলাকে গালমন্দ করলে তাকে হত্যা করতে হবে। অনুরূপ কেউ হুযুর করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শানে বেআদবী মূলক অবমাননা করল তাকে হত্যা করতে হবে। (ইমাম কাযী আয়ায আন্দুলসী প্রণীত, আশ শিফা, ২য় খন্ড)
বিখ্যাত-ফাতওয়া গ্রন্থ কাযীখানে উল্লেখ রয়েছে যদি কেউ কোন বিষয়ে রাসূলুল্লাহর শানে বিন্দুমাত্র দোষ বর্ণনা বা সমালোচনা বা তাঁর প্রতি অবমাননা প্রদর্শন করল সে কাফির হয়ে গেল।
নবীর প্রতি অবমাননাকারীর ভর্ৎসনা:
নবীর শানে বেআদবী প্রদর্শনকারী ওয়ালীদ ইবনে মুগীরাহর প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে তার দশটি দোষ বর্ণনা করেছেন, পরিশেষে বলেছে সে হচ্ছে হারামী (জারজ সন্তান) এরশাদ হয়েছে, “ যে অধিক শপথ করে, যে লাঞ্ছিত আপনি তার আনুগত্য করবেন না, যে পশ্চাতে নিন্দা করে একের কথা অপরের নিকট লাগিয়ে খুব বিচরণকারী, সৎ কাজে বাধা প্রদানকারী, সীমালঙ্ঘনকারী, পাপিষ্ট, কঠোর স্বভাব তদুপরি তার মূলে ক্রটি। (সূরা: আল কালম, পারা:২৯, আয়াত: ৮-১৩)
বর্ণিত আয়াত শরীফ অবতীর্ণ হলে ওয়ালীদ ইবনে মুগীরাহ তার মায়ের নিকট গেল, তার মাকে বলল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর অবতীর্ণ কুরআনে আমার দশটি দোষ বর্ণনা করা হয়েছে, নয়টি দোষ আমি স্বয়ং আমার মধ্যে দেখতে পাচ্ছি, দশম দোষটি সম্পর্কে তুমিই জান। সত্যকরে বল আমি কি হারামী (জারজ) না হালালী (বৈধ সন্তান) সত্যটিই বল, মা উত্তর দিল, তোমরা পিতা নামর্দ (নপুংসক) ছিলো আমি আশঙ্কা করলাম তার মৃত্যেুর পর তার সম্পদ অন্য লোকেরা নিয়ে যাবে তখন আমি অমুক রাখালের সাথে ব্যভিচার করেছি। তুমি তারই থেকে জন্মলাভ করেছ। (কানযুল ঈমান তাফসীর নুরুল ইরফান: কৃত ইমাম আহমদ রেযা (র.) ও মুফতি আহমদ ইয়ার খান নঈমী (র.)।
হাদীসের আলোকে নবীর প্রতি অবমাননার পরিণতি:
সুপ্রিয় মুসলিম ভাইয়েরা! আসুন সেসব দেশের পণ্য বয়কট করি। মুসলমানদের ব্যবসা বাণিজ্য প্রসার ঘটাতে ও অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা সৃষ্টিতে আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা (র.) প্রণীত চারটি নির্দেশনা অনুসরণ করি। (তাদবীরে ফালাহ ওয়া নাজাত ওয়া ইসলাহ, কৃত: ইমাম আহমদ রেযা (র.))
লেখক : অধ্যক্ষ, মাদরাসা-এ তৈয়্যবিয়া ইসলামিয়া সুন্নিয়া ফাযিল (ডিগ্রী), বন্দর, চট্টগ্রাম।