প্রবন্ধ

ইতিকাফ

আহমদ শাহ আদীল

ইতিকাফঃ

ইতিকাফের শাব্দিক অর্থ অবস্থান করা। শরীয়তের পরিভাষায় ইতিকাফ বলা হয়, পুরুষের জন্য নিয়্যতসহ এমন মসজিদে অবস্থান করা যেখানে পাঁচওয়াক্ত নামাযের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। আর মহিলাদের জন্য ইতিকাফ হল নিয়্যত সহকারে ঘরের ভিতরে নামাযের জন্য নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থান করা।

 

ইতিকাফের প্রকারঃ

 

ইতেকাফ তিন প্রকার। যথা-
সুন্নত ইতেকাফ : রমজান মাসের শেষ ১০ দিনের ইতেকাফ সুন্নতে মোয়াক্কাদা আলাল কেফায়া। অর্থাৎ মহল্লার যে কোনো একজন ইতেকাফ করলে পুরো মহল্লাবাসীর পক্ষ থেকে ইতেকাফ আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু মহল্লার একজন ব্যক্তিও যদি ইতেকাফ না করে তবে মহল্লার সবার সুন্নত পরিত্যাগের গোনাহ হবে। -দুররে মুখতার: ২/৪৪০

 

২১ তারিখের রাত থেকে ঈদুল ফিতরের চাঁদ দেখা পর্যন্ত এই ইতেকাফের সময়। কারণ হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) প্রত্যেক বছর এই দিনগুলোতেই ইতেকাফ করতেন। এ কারণে এটাকে সুন্নত ইতেকাফ বলা হয়।

 

ওয়াজিব ইতেকাফ : মান্নতের ইতিকাফ ওয়াজিব। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তারা যেন তাদের মানৎ পূর্ণ করে। ’ -সূরা হজ: ২৯
তাতে কোনো শর্ত থাকুক বা না থাকুক। যেমন- কেউ বললো, ‘আমার এই কাজ সমাধা হলে আমি ইতেকাফ করবো’, এতে যেমন ইতেকাফ ওয়াজিব হবে ঠিক তেমনই কেউ যদি বলে- ‘আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ইতেকাফ করবো’, এ অবস্থাতেও ইতেকাফ করা ওয়াজিব বলে সাব্যস্ত হবে। -ফাতাওয়া হিন্দিয়া: ১/২১৩, দুররে মুখতার: ২/৪৪১

 

সুন্নাত ইতেকাফ ভঙ্গ হয়ে গেলে তা কাজা করা ওয়াজিব।

 

নফল ইতেকাফ: উপরোক্ত দুই প্রকার ইতেকাফ ছাড়া বাকি সব ইতেকাফ নফল। এ ইতেকাফ মানুষ যেকোনো সময় করতে পারে। অর্থাৎ কিছু সময়ের জন্য ইতেকাফের নিয়তে মসজিদে অবস্থান করা। এর জন্য নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই। যতক্ষণ চায় করতে পারে। রোজারও প্রয়োজন নেই। এমনকি যখনই মসজিদে প্রবেশ করবে নফল ইতেকাফের নিয়ত করা সুন্নত।

 

ইতিকাফের শর্তাবলীঃ

 

(১) নিয়ত করা। নিয়ত ব্যতীত সারাজীবন মসজিদে অবস্থান করলেও ইতিকাফ হবে না। (২) এমন মসজিদে ইতিকাফ করা যেখানে পাঁচওয়াক্ত নামাযের নিয়মিত জামাত হয়। জাওয়াহেরুল ফিক্হ গ্রন্থে বলা হয়েছে, নির্দিষ্ট ইমাম ও মুয়াযযিন দ্বারা পাঁচ ওয়াক্ত নামায জামাত সহকারে হয় এমন মসজিদ ছাড়া ইতিকাফ শুদ্ধ হবে না। ইতিকাফের জন্য সর্বোত্তম স্থান হল মসজিদে হারাম, অতঃপর মসজিদে নববী এরপর বায়তুল মােকাদ্দাস, তারপর জামে মসজিদ এবং এরপর যে মসজিদে মুসল্লী সংখ্যা বেশী। মহিলারা তাদের নিজ ঘরে নামাযের স্থানে ইতিকাফ করবে। মান্নতের ইতিকাফের জন্য রােযা শর্ত। নফল ইতিকাফের জন্য রােজা শর্ত নয় এবং কোন নির্দিষ্ট সময় সীমাও নেই। ই’তিকাফ সহীহ হওয়ার জন্য শর্ত হল (১) মুসলমান হওয়া। (২) জ্ঞানবান হওয়া। (৩) জানাবত এবং হায়িয ও নিফাস থেকে পবিত্র হওয়া। বালিগ হওয়া শর্ত নয় তাই নাবালেগও ইতিকাফ করতে হবে। মহিলাদের জন্য স্বামীর অনুমতি নেয়া প্রয়োজন।

 

ইতিকাফ ভঙ্গের কারণঃ

 

পুরুষেরা বিনা ওযরে মসজিদ থেকে আর মহিলারা নির্দিষ্ট নামাযের স্থান হতে বের হলে ইতিকাফ ভঙ্গ হয়ে যাবে।তবে পেশাব, পায়খানা ও জুমার জন্য বের হওয়া জায়েয। অনুরূপভাবে মসজিদ ভেঙ্গে যাওয়ার কারণে অথবা জোরপূর্বক মসজিদ থেকে বের করে দিলে সঙ্গে সঙ্গে অন্য মসজিদে প্রবেশ করলে ইতিকাফ ভঙ্গ হবে না।জানমালের আশঙ্কা হলেও উক্ত হুকুম প্রযােজ্য হবে। সহবাসের দিকে আকৃষ্টকারী কাজ দ্বারা দিনে হােক কিংবা রাতে হােক ইতিকাফ ভঙ্গ হয়ে যাবে। তবে স্বপ্ন দোষের দ্বারা ইতিকাফ ভঙ্গ হয় না। ইতিকাফ অবস্থায় কুরআন তিলাওয়াত, দুরূদ শরীফ পাঠ,যিকর-আযকার, দ্বীনি বই-পুস্তক পাঠ এবং ধর্মীয় গ্রন্থাদি লেখা বৈধ। অনর্থক কথা-বার্তা, দুনিয়াবী কিংবা পারিবারিক কাজ ইতিকাফ অবস্থায় করা মাকরূহ।

ইতেকাফকারীদের জন্য বৈধ কাজঃ

একান্ত প্রয়োজনীয় কথাবার্তা বলা। চুল আঁচড়ানো, মাথা মুণ্ডানো, নখ কাটা, শরীর থেকে ময়লা পরিষ্কার করা, এবং সুগন্ধি ব্যবহার ও উত্তম পোষাক পরিচ্ছদ পরিধান করা। মসজিদের ভিতরে পানাহার করা, ঘুমানো এবং বিশেষ প্রয়োজনে বিবাহের কাবিননামা ও ক্রয়-বিক্রয়ের চুক্তিও সম্পাদন করা যাবে।