পবিত্র মহররম মাস ও আশুরা দিবসের আমল
মাওলানা আবুল আসাদ মুহাম্মদ জুবাইর রজভী
পবিত্র মহররম মাসের আমল:
১) হযরত রাসুলে কারীম রাউফুর রাহিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি মহররম মাসের প্রথম জুমার রােজা রাখবে, তার অতীতের গুনাহ মাফ হয়ে যাবে।
২) প্রিয় নবীজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি মহররম মাসে বৃহস্পতি, জুমা ও শনিবার তিনটি রােজা পালন করবে, তার আমলনামায় নয় বছর ইবাদাতের সাওয়াব লিখা হবে।
৩) প্রিয় নবীজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেছেন, মহররম মাসের একটি নফল রােজা অন্য মাসের ৩০ টি নফল রােজার সমান।
৪) প্রিয় নবীজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি মহররম মাসের প্রথম দশ দিন (১ তারিখ থেকে ১০ তারিখ পর্যন্ত) রােজা রাখবে, সেই ব্যক্তি জান্নাতুল ফেরদৌসের ওয়ারিশ বা অধিকারী হবে।
প্রথম রাতের ইবাদত:
১) যে ব্যক্তি মহররম মাসের প্রথম রাতে (চাঁদ রাত) দুই রাকাত নফল নামাজ পড়বে, প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতিহার পর সূরা ইখলাস ১১ বার এবং সালাম ফিরানাের পর سبوح قدوس ربنا ورب الملائكة والروح “সুব্বুহুন কুদ্দুসুন রাব্বুনা ওয়া রাব্বুল মালাইকাতি ওয়ার রুহ” পাঠ করবে, সে অনেক সাওয়াবের অধিকারী হবে।
২) হযরত খাজা গরীব নেওয়াজ (রহ.)’র অজিফায় এসেছে, চাঁদরাতে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করা। প্রত্যেক রাকাতে সুরা ফাতেহার সাথে সুরা ইয়াসিন একবার করে পাঠ করা। এতে অনেক সাওয়াবের অধিকারী হবে।
৩) অপর একটি বর্ণনায় এসেছে, যে ব্যক্তি চাঁদরাতে দুই রাকাত করে ৬ রাকাত নফল নামাজ আদায় করবে, প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতেহার সাথে সূরা এখলাছ দশ বার পড়বে; সেই ব্যক্তিকে দয়াময় আল্লাহ জান্নাতে দুই হাজার মহল দান করবেন, তার থেকে ৬ হাজার বালা- মুসিবত উঠিয়ে নেওয়া হবে এবং ৬ হাজার নেকি তার আমলনামায় লিখে দেওয়া হবে।
প্রথম দিনের আমল:
দু’রাকাত নফল নামাজ আদায় করা, প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতিহার পর তিনবার করে সূরা ইখলাস পাঠ করবে।
সালাম ফিরানাের পর নিম্নের দোয়াটি পড়বে-
اللهم انت الله الابد القديم هذه سنة جديدة اسالك فيها العصمة من الشيطان الرجيم والأمان من السلطان الجابر ومن
شر كل ذي شر ومن البلاء والافات واسالك العون والعدل علي هذه النفس الأمارة بالسوء والاشتغال بما يقربني اليك
یا بر يا رؤوف يا رحیم يا ذا الجلال والاكرام
বাংলা উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আনতাল্লাহুল আবাদুল কাদীমু, হাযিহী ছানাতুন জাদীদাতুন, আছুআলুকা ফীহাল ইছমাতা মিনাশ শাইতানির রাজীম, ওয়াল আমানা মিনাছ্ সুলতানিল জাবির, ওয়া মিন শাররি কুল্লি যী’ শারুরিন ওয়া মিনাল বালায়ি ওয়াল আ’ফাত, ওয়া আছআলুকাল আউনা ওয়াল আদ্ লা আলা হাযিহিন নাফছিল আম্মারাতি বিছু ছুয়ি, ওয়াল ইশতিগালা বিমা ইউকররিকুনী ইলাইকা ইয়া বাররু ইয়া রাউফু ইয়া রাহিমু ইয়া যাল জালালি ওয়াল ইকরাম।
যে ব্যক্তি এই আমলটি করবে, আল্লাহ তাআলা তার জন্য দু’জন ফেরেশতা নিয়ােগ করবেন যাঁরা তাকে কাজে-কর্মে সাহায্য করবেন এবং অভিশপ্ত শয়তান বলবে, হায় আফসােস! সারাবছর আমি তার থেকে নিরাশ হলাম।
আশুরার রাতের আমল:
১) যে ব্যক্তি এ রাতে দু’রাকাত করে চার রাকাত নামাজ আদায় করবে এবং প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতিহার পর ৫০ বার করে সুরা এখলাছ পড়বে, দয়াময় আল্লাহ তার অতীত জীবনের ৫০ বছর এবং ভবিষ্যত জীবনের ৫০ বছরের গুনাহ মাফ করে দিবেন এবং তার জন্য বেহেশতে এক হাজার মহল তৈরি করবেন।
২) যে ব্যক্তি এ রাতে দুই রাকাত নফল নামাজ আদয় করবে, প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতিহার পর সূরা এখলাছ তিন তিনবার করে পড়বে: আল্লাহ তাআলা কেয়ামত পর্যন্ত তার কবর আলােকিত রাখবেন।
আশুরার দিনের আমল:
ইমামুল আম্বিয়া সাইয়্যেদুল মুরসালিন (দ.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আশুরার দিনে দুই রাকাত করে চার রাকাত নামাজ আদায় করবে এবং প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতেহার পর সূরা এখলাছ ১১ বার করে পড়বে, আল্লাহ তা’আলা তার ৫০ বছরের গুনাহ মাফ করে দিবেন এবং তাঁর জন্য নূরানী মিম্বর তৈরি করবেন।
নফল রােজা:
সম্ভব হলে প্রথম তারিখ থেকে আশুরার দিন পর্যন্ত দশটি রােজা পালন করবেন। তা না হলে নয় ও দশ অথবা দশ ও এগারাে তারিখে দুটি রােজা অবশ্যই রাখবেন। পবিত্র রমজান মাসের ফরজ রােজার পর নফল রােজার মধ্যে এই রােজাগুলাের ফজিলত সবচেয়ে বেশি।
আশুরা দিবসের অন্যান্য নেক আমল সমূহ:
১) বেশি বেশি কুরআন শরিফ তিলাওয়াত করা
২) এতিমের মাথায় হাত বুলিয়ে দেওয়া এবং তাদের সাহায্য করা।
৩) গােসল করা। এতে অনেক বালা-মুসিবত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
৪) বিগত জীবনের গুনাহ হতে তওবা করা। এই তাওবা আল্লাহ তা’আলা বেশি কবুল করেন।
৫) রােগীদের খবরা-খবর নেওয়া।
৬) গরিব-দুঃগীদের দান করা।
৭) চোখে সুরমা লাগনাে।
আশুরার দিনের নিষিদ্ধ আমল সমূহঃ
১) কালাে কাপড় পরিধান করা।
২) কাপড় ছিড়ে ফেলা।
৩) মাতম/বিলাপ করে কাঁন্না করা।
৪) তাজিয়া বের করা ইত্যাদি।
৫) বুকে হাত মারা।
৬) মাথার চুল টানাটানি করা।
৭) চাকু/চুরি দ্বারা শরীরে আঘাত করা।
এগুলাে ঘৃণ্য কাজ এবং সম্পূর্ণ হারাম। এ ধরনের ঘৃণ্য কাজ থেকে নিজেকে সম্পূর্ণ বিরত রাখুন এবং অন্যদেরও সতর্ক করুন।
তথ্যসূত্র: সহিহ মুসলিম শরিফ, মিশকাতুল মাসাবিহ, মুসনাদ আহমদ, গুনিয়াতুত তালিবীন, নুজহাতুল মাজালিস, ফয়যুল কাদীর, মাওদুআতুল কাবীর, জামেউস সগীর, রাহাতুল কুলুব, জাওয়াহেরে গায়বী এবং বারাহ মাহ কে ফাযায়েল ইত্যাদি।
সিনিয়র আরবী প্রভাষক, জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া (মাদ্রাসা)