জুমার-খুৎবা

সুন্নি সম্প্রদায়ের ৫ম সম্প্রদায় কারা?

ভূমিকা

সুন্নি ইসলাম মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে বড় সম্প্রদায়, যা চারটি প্রধান ফিকহ্ শাখা (মাজহাব) দ্বারা পরিচালিত হয়। তবে, অনেকের মধ্যে একটি প্রশ্ন জাগে: সুন্নি সম্প্রদায়ের ৫ম সম্প্রদায় কি আছে? যদি থাকে, তবে তারা কারা? এই প্রবন্ধে আমরা এই বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

সুন্নি সম্প্রদায়ের চারটি প্রধান মাজহাব হলো হানাফী, মালিকী, শাফিঈ এবং হানবালী। এই চার মাজহাবের তুলনামূলক উল্লেখগুলো সাধারণত সবাই জানে। এদের মধ্যে হানাফীগুলি সবচেয়ে বর্ধিত মানচিত্র রয়েছে। তথাপি, পশ্চিম বিশ্বের বা দক্ষিণ এশিয়ার সুন্নি মুসলিম বাস্তবায়না অনুসরণ করে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন বিশ্লেষণ করা সহজ।

সুন্নি ইসলামের মূল শাখাগুলি

হানাফি

হানাফি মাজহাব হলো সুন্নি ইসলামের চারটি প্রধান মাজহাবের মধ্যে সবচেয়ে বড়। এটি আবু হানিফা দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং এটি মূলত মধ্য এশিয়া, দক্ষিণ এশিয়া, এবং তুরস্কের মুসলিমদের মধ্যে প্রচলিত।

মালিকি

মালিকি মাজহাব হলো উত্তর ও পশ্চিম আফ্রিকা এবং কিছু আরব দেশের মধ্যে জনপ্রিয়। এটি ইমাম মালিক ইবনে আনাস দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই মাজহাবটি স্থানীয় রীতিনীতির প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেয়।

শাফেয়ী

শাফেয়ী মাজহাব হলো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, পূর্ব আফ্রিকা, এবং ইয়েমেনের মধ্যে প্রচলিত। এটি ইমাম শাফি দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং এটি ফিকহ্ এবং সুন্নাহের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়।

হাম্বলি

হাম্বলি মাজহাব হলো সৌদি আরবের প্রধান মাজহাব। এটি ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং এটি কুরআন ও হাদিসের উপর কঠোর অনুসরণ করে।

সুন্নি সম্প্রদায়ের পঞ্চম সম্প্রদায়ের ধারণা

সূফিবাদ এবং এর প্রভাব

সূফিবাদ বা তাসাওউফ হল ইসলামি আধ্যাত্মিকতা এবং মরমী সাধনার একটি বিশেষ শাখা। এটি মূলত ব্যক্তিগত এবং আধ্যাত্মিক উন্নতির উপর জোর দেয়, যা একজন ব্যক্তিকে আল্লাহর সাথে গভীর এবং অন্তরঙ্গ সম্পর্ক স্থাপন করতে সহায়তা করে। সূফিবাদের মূল লক্ষ্য হল আধ্যাত্মিক পরিশুদ্ধি এবং আল্লাহর প্রেমে আত্মনিবেদন।

সূফিবাদের উৎপত্তি এবং বিকাশ

সূফিবাদের শিকড় ইসলামের প্রথম যুগেই প্রোথিত। প্রাথমিক সূফিরা মূলত পবিত্র কুরআন এবং হাদিসের শিক্ষাকে গভীরভাবে পালন করতেন এবং আধ্যাত্মিক সাধনার মাধ্যমে নিজেদের আল্লাহর কাছাকাছি নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতেন। ধীরে ধীরে, এই আধ্যাত্মিক অনুশীলন একটি সংগঠিত রূপ নেয় এবং বিভিন্ন সুফি তরীকাগুলির (পথ) মাধ্যমে প্রসার লাভ করে। প্রখ্যাত সুফি সাধকগণের মধ্যে আছেন হযরত আলী, হযরত হাসান বাসরি, ইমাম গাযযালী এবং মাওলানা রুমি।

সূফি তরীকা

সূফিবাদ বিভিন্ন তরীকার মাধ্যমে সংগঠিত হয়েছে, যা বিশেষ সুফি গুরুর (শেখ বা পীর) নির্দেশনার অধীনে আধ্যাত্মিক অনুশীলন করে। প্রতিটি তরীকা নিজস্ব আচার-অনুষ্ঠান এবং আধ্যাত্মিক অনুশীলন পদ্ধতি অনুসরণ করে। উল্লেখযোগ্য কিছু সূফি তরীকা হল:

  • কাদরিয়া: প্রতিষ্ঠাতা আব্দুল কাদের জিলানী, এটি সবচেয়ে প্রাচীন এবং প্রভাবশালী সুফি তরীকাগুলির একটি।
  • নকশবন্দিয়া: প্রতিষ্ঠাতা বাহাউদ্দিন নকশবন্দ, এই তরীকা মৌন ও অভ্যন্তরীণ ধ্যানের উপর জোর দেয়।
  • চিশতিয়া: প্রতিষ্ঠাতা খাজা মইনুদ্দিন চিশতি, এটি দক্ষিণ এশিয়ায় ব্যাপকভাবে প্রচলিত এবং সঙ্গীত ও ভজনের মাধ্যমে আল্লাহর প্রেম প্রকাশ করে।
  • শাজিলিয়া: প্রতিষ্ঠাতা আবুল হাসান আশ-শাজিলি, এই তরীকা আধ্যাত্মিক চর্চার পাশাপাশি সামাজিক ও জনসেবা কার্যক্রমে গুরুত্ব দেয়।

আধ্যাত্মিক অনুশীলন

সূফিদের আধ্যাত্মিক অনুশীলনের মধ্যে রয়েছে:

  • জিকির: আল্লাহর নাম বা কুরআনের আয়াত পুনরাবৃত্তি করে স্মরণ করা।
  • মুরাকাবা: ধ্যান ও অভ্যন্তরীণ পরমার্থের চিন্তা করা।
  • সামা: সঙ্গীত এবং নৃত্যের মাধ্যমে আধ্যাত্মিক আনন্দ উদযাপন।
  • খলওয়া: নির্জন বাসস্থান বা নির্জনতায় ধ্যান।

সূফিবাদের প্রভাব

সূফিবাদ ইসলামি সংস্কৃতি, সাহিত্য, এবং সঙ্গীতের উপর গভীর প্রভাব ফেলেছে। বিশেষ করে, সুফি কাব্য এবং সঙ্গীত আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা এবং আল্লাহর প্রেমের গভীরতা প্রকাশ করে। মাওলানা রুমি, হাফিজ, এবং খাজা গরিব নেওয়াজের মত সুফি কবিদের রচনাগুলি আজও মুসলিম বিশ্বে জনপ্রিয়।

সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক প্রভাব

সূফিবাদ বিভিন্ন অঞ্চলে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে গভীর প্রভাব ফেলেছে। সুফি দরগাহ এবং খানকাহগুলি সামাজিক ও ধর্মীয় জীবনের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। এখানে মানুষ আধ্যাত্মিক শিক্ষা, সেবা এবং সাহায্যের জন্য আসে। সুফি দরগাহগুলি প্রায়শই বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে ঐক্য এবং সহনশীলতার বার্তা প্রচার করে।

রাজনৈতিক প্রভাব

যদিও সূফিরা সাধারণত রাজনীতি থেকে দূরে থাকে, তবে তারা প্রায়শই রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং শাসকদের সাথে সংযোগ রাখে। অনেক শাসক সুফিদের আধ্যাত্মিক পরামর্শ গ্রহণ করত এবং তাদেরকে সমর্থন করত।

সলাফি আন্দোলন

সলাফি আন্দোলন হল আধুনিককালে সুন্নি ইসলামের একটি বিশুদ্ধিকরণ আন্দোলন। এটি মূলত ইসলামের প্রাথমিক যুগের মুসলমানদের, অর্থাৎ সলাফ-উস-সালেহিন (প্রথম তিন প্রজন্মের মুসলিম) এর অনুসরণে কঠোর অনুশীলন করে। সলাফি আন্দোলন কুরআন এবং হাদিসের সরাসরি অনুসরণে বিশ্বাসী এবং ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে যে কোন নবপ্রবর্তন বা বিদআত পরিহারের উপর গুরুত্ব দেয়।

সলাফি আন্দোলনের উৎপত্তি এবং ইতিহাস

সলাফি আন্দোলনের শিকড় ১৮ শতকের আরব উপদ্বীপে প্রোথিত। ইবনে তায়মিয়াহর চিন্তাধারার উপর ভিত্তি করে, মোহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওহাব এই আন্দোলনের সূচনা করেন। তিনি ইসলামকে পুনরায় বিশুদ্ধ এবং প্রাথমিক ইসলামের দিকে ফিরিয়ে নিতে চান। তার এই আন্দোলনকে “ওহাবি” আন্দোলনও বলা হয়। সলাফি আন্দোলনের মূল লক্ষ্য হল ইসলামের মৌলিক শিক্ষাগুলিকে পুনরায় জীবিত করা এবং যে কোন ধরণের বিদআত বা ধর্মীয় নবপ্রবর্তন থেকে দূরে থাকা।

সলাফি আন্দোলনের মূল নীতি

সলাফি আন্দোলন কয়েকটি মৌলিক নীতির উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে:

  1. কুরআন এবং হাদিসের সরাসরি অনুসরণ: সলাফিরা কুরআন এবং হাদিসকে ইসলামের প্রধান উৎস হিসেবে গ্রহণ করে এবং ইজতিহাদ বা যুক্তির পরিবর্তে সরাসরি কুরআন এবং হাদিসের অনুসরণ করে।
  2. তাওহীদের উপর জোর: সলাফিরা একত্ববাদে (তাওহীদ) দৃঢ় বিশ্বাসী এবং যে কোন ধরণের শিরক (আল্লাহর সাথে অংশীদারিত্ব) থেকে দূরে থাকার উপর গুরুত্ব দেয়।
  3. বিদআতের পরিহার: সলাফিরা যে কোন ধরণের নবপ্রবর্তন বা বিদআতকে প্রত্যাখ্যান করে এবং শুধুমাত্র প্রাথমিক ইসলামী অনুশীলনগুলিকে মেনে চলে।
  4. শুদ্ধিকরণ: ধর্মীয় এবং সামাজিক জীবনে যে কোন ধরণের অসঙ্গতি এবং অশুদ্ধতাকে পরিহার করে একটি বিশুদ্ধ ইসলামী সমাজ গঠন করা।

সলাফি আন্দোলনের বিভিন্ন ধারা

সলাফি আন্দোলনের মধ্যে বিভিন্ন ধারা রয়েছে, যেগুলি নিজেদের বিশেষ মতবাদ এবং কার্যকলাপ দ্বারা পৃথক। প্রধান সলাফি ধারাগুলির মধ্যে রয়েছে:

  1. আল-ইখওয়ান (ভাইয়েরা): এটি রাজনৈতিক সলাফি আন্দোলনের একটি ধারা, যা মুসলিম বিশ্বের রাজনৈতিক এবং সামাজিক পরিবর্তনের মাধ্যমে ইসলামী রাষ্ট্র গঠনের প্রচেষ্টা করে।
  2. জামিয়া সলাফিয়া: এটি শিক্ষা এবং ধর্মীয় প্রচারের উপর গুরুত্ব দেয় এবং কুরআন এবং হাদিসের শিক্ষাগুলি প্রচার করে।
  3. জিহাদি সলাফি: এটি একটি চরমপন্থী ধারা, যা জিহাদের মাধ্যমে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা করে। এই ধারা প্রায়ই সহিংসতা এবং সন্ত্রাসবাদের সাথে জড়িত।

সলাফি আন্দোলনের প্রভাব

সলাফি আন্দোলনের প্রভাব বিশ্বজুড়ে অনুভূত হয়েছে। এর কিছু উল্লেখযোগ্য প্রভাব হল:

  1. ধর্মীয় শিক্ষার পুনর্জাগরণ: সলাফি আন্দোলন ধর্মীয় শিক্ষার ক্ষেত্রে নতুন গতি সঞ্চার করেছে এবং অনেক ইসলামিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
  2. বিশুদ্ধিকরণ আন্দোলন: সলাফি আন্দোলন অনেক মুসলিম দেশে ধর্মীয় বিশুদ্ধিকরণ আন্দোলন চালু করেছে, যা ধর্মীয় নবপ্রবর্তন এবং অশুদ্ধতাকে চিহ্নিত করে এবং সেগুলিকে পরিহার করার চেষ্টা করে।
  3. রাজনৈতিক প্রভাব: সলাফি আন্দোলনের রাজনৈতিক শাখাগুলি বিভিন্ন মুসলিম দেশে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করেছে এবং ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা চালিয়েছে।
  4. চরমপন্থা এবং সন্ত্রাসবাদ: সলাফি আন্দোলনের কিছু চরমপন্থী ধারা সহিংসতা এবং সন্ত্রাসবাদের সাথে জড়িত হয়েছে, যা বিশ্বজুড়ে নিরাপত্তা এবং শান্তির জন্য হুমকি সৃষ্টি করেছে।

আথারি বিশ্বাস

আথারি বা আহল আল-হাদিস হলো সুন্নি ইসলামের একটি বিশ্বাস, যা সরাসরি কুরআন এবং হাদিসের অনুসরণে বিশ্বাসী। এটি কোনো নির্দিষ্ট মাজহাব নয়, বরং এটি ইসলামের মৌলিক শিক্ষার প্রতি একটি বিশ্বাস। আথারি বিশ্বাস বিশেষ করে ইসলামের প্রথম তিন প্রজন্মের মুসলিমদের (সলাফ-উস-সালেহিন) আদর্শকে অনুসরণ করে এবং ইজমা (সম্মিলিত ঐক্যমত্য) ও কিয়াস (যুক্তি দ্বারা সিদ্ধান্ত) এর পরিবর্তে সরাসরি কুরআন এবং হাদিসের উপর নির্ভর করে।

আথারি বিশ্বাসের মূল নীতি

আথারি বিশ্বাস কয়েকটি মৌলিক নীতির উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে:

  1. কুরআন এবং হাদিসের সরাসরি অনুসরণ: আথারিরা কুরআন এবং হাদিসকে ইসলামের একমাত্র বিশ্বাসযোগ্য উৎস হিসেবে গ্রহণ করে এবং ধর্মীয় নির্দেশিকা পাওয়ার জন্য এই দুই উৎসের বাইরে কিছু ব্যবহার করে না।
  2. তাওহীদের উপর জোর: আথারিরা তাওহীদ বা একত্ববাদে দৃঢ় বিশ্বাসী এবং যে কোন ধরণের শিরক (আল্লাহর সাথে অংশীদারিত্ব) থেকে দূরে থাকার উপর জোর দেয়।
  3. আল্লাহর গুণাবলীর বর্ণনা: আথারিরা আল্লাহর গুণাবলী কুরআন এবং হাদিসে যেভাবে বর্ণিত হয়েছে, সেভাবে গ্রহণ করে। তারা আল্লাহর গুণাবলীকে আক্ষরিক অর্থে বোঝে এবং তা ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করে না।
  4. বিদআতের পরিহার: আথারিরা যে কোন ধরণের বিদআত বা নবপ্রবর্তনকে প্রত্যাখ্যান করে এবং শুধুমাত্র প্রাথমিক ইসলামী অনুশীলনগুলিকে মেনে চলে।

আথারি বিশ্বাসের ইতিহাস

আথারি বিশ্বাসের শিকড় প্রাথমিক ইসলামিক যুগে প্রোথিত। এটি ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল এবং ইবনে তায়মিয়াহর চিন্তাধারার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল, যিনি হাম্বলি মাজহাবের প্রতিষ্ঠাতা, আথারি বিশ্বাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবক্তা ছিলেন। তার অনুসারীরা কুরআন এবং হাদিসের সরাসরি অনুসরণ এবং ইজমা ও কিয়াসকে সীমিতভাবে ব্যবহার করার উপর জোর দেয়।

আথারি এবং অন্যান্য মাজহাবের মধ্যে পার্থক্য

আথারি বিশ্বাস সুন্নি ইসলামের অন্যান্য মাজহাবের থেকে কিছু মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। অন্য মাজহাবগুলি যেমন হানাফি, মালিকি, শাফেয়ী, এবং হাম্বলি ইজমা এবং কিয়াসের মতো বিভিন্ন ফিকহ্ পদ্ধতি ব্যবহার করে, আথারি বিশ্বাস সরাসরি কুরআন এবং হাদিসের অনুসরণে জোর দেয়। তারা যুক্তি এবং ব্যাখ্যার পরিবর্তে আক্ষরিক অর্থে কুরআন এবং হাদিসকে গ্রহণ করে।

আথারি বিশ্বাসের প্রভাব

আথারি বিশ্বাসের প্রভাব বিশ্বজুড়ে সুন্নি মুসলিমদের মধ্যে গভীরভাবে অনুভূত হয়েছে। এর কিছু উল্লেখযোগ্য প্রভাব হল:

  1. ধর্মীয় বিশুদ্ধিকরণ: আথারি বিশ্বাস ধর্মীয় বিশুদ্ধিকরণের উপর জোর দেয় এবং যে কোন ধরণের বিদআত বা নবপ্রবর্তনকে প্রত্যাখ্যান করে।
  2. শিক্ষা এবং প্রচার: আথারি বিশ্বাসের অনুসারীরা কুরআন এবং হাদিসের শিক্ষাগুলি প্রচার এবং শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে ইসলামের মূল শিক্ষাগুলি পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করে।
  3. সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক প্রভাব: আথারি বিশ্বাস বিভিন্ন অঞ্চলে সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক জীবনে প্রভাব ফেলেছে, বিশেষ করে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান এবং অনুশীলনের ক্ষেত্রে।

আধুনিক যুগে সুন্নি সম্প্রদায়ের বিবর্তন

রাজনৈতিক প্রভাব এবং আন্দোলন

আধুনিক যুগে, সুন্নি ইসলামের বিভিন্ন শাখা রাজনৈতিক প্রভাব এবং আন্দোলনের মাধ্যমে প্রভাবিত হয়েছে। এটি বিভিন্ন মুসলিম দেশের রাজনৈতিক অবস্থান এবং আন্দোলনের সঙ্গে সম্পর্কিত।

সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তন

আধুনিককালে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের ফলে সুন্নি ইসলামের বিভিন্ন শাখা ও আন্দোলনের মধ্যে পরিবর্তন ঘটেছে।

সুন্নি সম্প্রদায়ের বর্তমান অবস্থা

বৈশ্বিক উপস্থিতি এবং প্রভাব

সুন্নি ইসলাম বর্তমান বিশ্বে মুসলিম জনসংখ্যার বৃহত্তম অংশ গঠন করে, প্রায় ৮৫-৯০ শতাংশ মুসলমান সুন্নি। সুন্নি সম্প্রদায়ের বৈশ্বিক উপস্থিতি এবং প্রভাব বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে আছে, যার মধ্যে মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা, দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, এবং সাব-সাহারান আফ্রিকা প্রধান।

মধ্যপ্রাচ্য

মধ্যপ্রাচ্যে সুন্নি মুসলমানরা একটি বড় অংশ গঠন করে। সৌদি আরব, মিশর, তুরস্ক, এবং জর্ডানের মতো দেশগুলোতে সুন্নি মুসলিমদের প্রভাব ব্যাপক। সৌদি আরবের সুন্নি মুসলমানদের মধ্যে হাম্বলি মাজহাবের অনুসারীরা প্রধান।

দক্ষিণ এশিয়া

দক্ষিণ এশিয়ায় সুন্নি মুসলমানদের বৃহত্তম উপস্থিতি রয়েছে। পাকিস্তান, বাংলাদেশ, এবং ভারতের মতো দেশে হানাফি মাজহাবের সুন্নি মুসলমানদের সংখ্যা বেশি। এছাড়া, দক্ষিণ এশিয়ায় তাবলীগ জামাত এবং দেওবন্দি আন্দোলনের মতো সুন্নি আন্দোলনগুলির প্রভাবও উল্লেখযোগ্য।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া

ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, এবং থাইল্যান্ডের মতো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতেও সুন্নি মুসলমানদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য। এখানে শাফেয়ী মাজহাবের অনুসারীরা বেশি।

উপসংহার

সুন্নি ইসলামের মূল শাখাগুলি এবং তাদের প্রভাব আমাদেরকে একটি ব্যাপক ধারণা দেয় যে সুন্নি সম্প্রদায়ের পঞ্চম সম্প্রদায়ের ধারণা মূলত বিভিন্ন আধ্যাত্মিক এবং আন্দোলনের মাধ্যমে প্রভাবিত হয়েছে। এই প্রবন্ধে আমরা সুন্নি ইসলামের বিবর্তন, বর্তমান অবস্থা, এবং তাদের বৈশ্বিক প্রভাব নিয়ে আলোচনা করেছি।