জীবনী

হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (রাদ্বিঃ) এর জীবনী

পরিচয়ঃ

জন্মঃ
৪৭১ হিজরী সনের ১লা রমজান / ১০৭৭ খ্রিঃ কাস্পিয়ান সাগরের দক্ষিন দিকে অবস্থিত জীলান বা গীলান অঞ্চলের ‘নীফ’ নামক স্থানে বড়পীর হযরত শায়খ আবদুল কাদের জিলানী (রহঃ)জন্মগ্রহন করেন। তাঁর পিতার নাম হযরত আবু সালেহ মুছা জঙ্গি (রাহ.) ও মাতার নাম সৈয়দা উম্মুল খায়ের ফাতিমা (রাহ.)।

বংশধারাঃ
আবদুল কাদের জিলানী (রহঃ) বংশধারা ছিল হাসানী হোসাইনী। তিনি বাবা-মা উভয় দিক থেকে রাসুল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে বংশীয়ভাবে সম্পর্কিত।

 

পিতার বংশ ধারা-

 

আবদুল কাদের জিলানী (রহঃ)-এর পিতার নাম (১) হযরত সাইয়্যিদ আবু সালেহ মূসা (রহঃ), তাঁর পিতার নাম (২) হযরত সাইয়্যেদ আবু আবদুল্লাহ (রহঃ), তাঁর পিতার নাম (৩) হযরত সাইয়্যেদ ইয়াহইয়া জাহেদ (রহঃ), তাঁর পিতার নাম (৪) হযরত সাইয়্যেদ মােহাম্মদ (রহঃ), তাঁর পিতার নাম (৫) হযরত সাইয়্যেদ দাউদ (রহঃ), তাঁর পিতার নাম (৬) হযরত সাইয়্যেদ মূসা সানী (রহঃ), তাঁর পিতার নাম (৭) হযরত সাইয়্যেদ আবদুল্লাহ সানী (রহঃ), তাঁর পিতার নাম (৮) হযরত সাইয়্যেদ মূসা আল জোহন (রহঃ), তাঁর পিতার নাম (৯) হযরত সাইয়্যেদ আবদুল্লাহ আল-মহজ (রহঃ), তাঁর পিতার নাম (১০) হযরত সাইয়্যেদ হাসান মােসান্নাহ (রহঃ), তাঁর পিতার নাম (১১) হযরত সাইয়্যেদ হাসান (রাঃ), এবং তাঁর পিতার নাম (১২) শেরে খােদা হযরত আলী মাের্তজা (রাঃ)।

মাতার বংশ ধারা-
হযরত বড়পীর আবদুল কাদের জিলানী (রহঃ)-এর মাতার নাম (১) সাইয়্যেদা উম্মুল খায়ের ফাতেমা (রহঃ), তাঁর পিতার নাম (২) হযরত আবদুল্লাহ সাউমেয়ী (রহঃ), তাঁর পিতার নাম (৩) হযরত সাইয়্যেদ আবু জামাল (রহঃ), তাঁর পিতার নাম (৪) হযরত মােহাম্মদ (রহঃ), তাঁর পিতার নাম (৫) হযরত আবু আতা আবদুল্লাহ (রহঃ), তাঁর পিতার নাম (৬) হযরত আবু আলাউদ্দিন (রহঃ), তাঁর পিতার নাম (৭) হযরত আলী জওয়াদ (রহঃ), তাঁর
পিতার নাম (৮) আলী রেজা (রহঃ), তাঁর  পিতার নাম (৯) হযরত মূসা কাজেম (রহঃ), তাঁর পিতার নাম (১০) হযরত ইমাম জাফর সাদেক (রহঃ), তাঁর পিতার নাম (১১) হযরত ইমাম বাকের (রহঃ), তাঁর পিতার নাম (১২) হযরত ইমাম জয়নুল আবেদীন (রহঃ), তাঁর পিতার নাম (১৩) হযরত ইমাম হােসেন (রাঃ) এবং তাঁর পিতার নাম (১৪) হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু।

 

বাল্যকালঃ

 

ভূমিষ্ঠ হয়ে শরীয়ত পালন :

 

২৯ শাবান। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকায় জিলানবাসীদের কেউ রমজানের চাঁদ দেখতে পায়নি। সকলে রোজা রাখা না রাখার বিষয় নিয়ে সংশয়ের মধ্যে পড়ে গেলেন। এমতবস্থায় রাতের শেষাংশে সুবহে সাদেকের পূর্বে তথা ১ রমজান ধরাধামে আসেন হযরত আবদুল কাদের জিলানী (রহ.)। শিশু আবদুল কাদের জিলানী (রহ.) জন্মের পর সুবহে সাদিকের পূর্ব পর্যন্ত দুধ ও মধু পান করেন। কিন্তু সুবহে সাদিকের পর তাকে আর কিছু খাওয়ানো যায়নি। এ আশ্চার্যজনক খবর ছড়িয়ে পড়লে সকলে বুঝতে পারল মাহে রমজান শুরু হয়েছে।

 

শিক্ষাজীবনঃ

 

প্রাথমিক শিক্ষাঃ

 

নিতান্ত বালক বয়সেই এতিম হয়ে পিতার স্নেহের ছায়া থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন তিনি। ঠাই হলো তাঁর বয়োবৃদ্ধ নানার সংসারে। আর বুযুর্গ নানার প্রত্যক্ষ তদারকীতে গ্রামের পাঠশালাতেই তাঁর প্রাথমিক শিক্ষার পর্ব শুরু হয়। প্রথম যেদিন তিনি মক্তবে  যান সেদিন সেখানে ছিল শিক্ষার্থীদের প্রচন্ড ভীড়। তখন মক্তবের ছাত্ররা “আল্লাহর অলীর জন্য বসার জায়গা করে দাও” এই গায়েবী আওয়াজ শুনতে পায়। তখন উপস্থিত ছাত্ররা তাঁর বসার জন্য জায়গা ছেড়ে দেয়। মক্তবের ওস্তাদজী যখন তাঁকে বিসমিল্লাহ্-র সবক দিলেন তখনই ঘটে গেল এক অবাক কান্ড। ওস্তাদজীকে একাধারে তিনি বিসমিল্লাহ্ থেকে শুরু করে আঠার পারা পর্যন্ত মুখস্থ শুনিয়ে দিয়ে থেমে গেলেন। বিস্ময়ে হতবাক ওস্তাদজী তখন তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, বাছা এগুলো তুমি কোথা থেকে শিখেছ ? তিনি উত্তরে যা বললেন তাতো আরো বিস্ময়কর। তিনি বললেন, “হুজুর আমি মায়ের পেটে থাকতে আমার মা প্রতিদিন কুরআন শরীফ তিলাওয়াৎ করতেন। আমি আমার মায়ের কুরআন শরীফ তিলাওয়াৎ শুনে শুনে তা মুখস্থ করে নিয়েছি”। এভাবে একদিন শেষ হলো তাঁর মক্তবে পড়াশোনার পাঠ। এবার তিনি উচ্চ শিক্ষার্থে ছুটলেন রাজধানী বাগদাদ নগরীরব দিকে।

 

উচ্চ শিক্ষার জন্য বাগদাদ গমনঃ

 

৫৮৮ হিজরীতে তিনি যখন অষ্টাদশ বর্ষীয় যুবক তখন জিলান হতে উচ্চ শিক্ষার্থে মুসলিম বিশ্বের রাজধানী বাগদাদে গমন করেন। পথিমধ্যে ডাকাত দল কর্তৃক আক্রান্ত হওয়া এবং তাঁর অসাধারন সত্যবাদীতা ও মাতৃভক্তির পারাকাষ্ঠায় মুগ্ধ তস্করদের সদলবলে দস্যুবৃত্তি ত্যাগের ঘটনাতো বিশ্বখ্যাত।

 

শুরু হলো জ্ঞান সাধনাঃ

 

জ্ঞান পিপাসা মিটাতে বাগদাদের সুবিখ্যাত জ্ঞানী ও গুনী ব্যক্তিদের সাহচার্যে এসে শুরু করলেন জ্ঞান সাধনা। প্রথমেই শায়েখ হাফেজ আবু তালেব বিন ইউসুফের তত্বাবধানে তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ ভালভাবে  হিফজ করে নিলেন। বহু খ্যাতনামা বিদ্বৎজ্জনের সান্নিধ্যে তিনি জ্ঞান বিজ্ঞানের তেরটি শাখায় অসাধারন পান্ডিত্য অর্জন করেন। এলমে কেরাত, তাফসীর, হাদীস, আকাঈদ, এলমে কালাম, এলমে ফিরাসাত (মনোবিজ্ঞান),তারিখ (ইতিহাস), এলমে আনসাব (বংশ বিদ্যা), এলমে লুগাত (অভিধান শাস্ত্র),আদব (সাহিত্য), এলমে উরূজ (ছন্দ বিদ্যা), এলমে নাহু (ব্যাকরণ শাস্ত্র), এলমে  মুনাজিরা (তর্কবিদ্যা), প্রভৃতি বিষয়ে তিনি সুগভীর বিদ্যাবত্তা অর্জন করেছিলেন। হাম্বলী মাজহাবের তিনি ছিলেন একজন শীর্ষস্থানীয় পন্ডিত। এভাবে অভাব অনটন ও দুঃখ-কষ্টের মধ্যে কেটে গেল একে একে তাঁর নয়টি বছর। শেষ হলো জ্ঞান সাধনা। পড়াশুনার ফাঁকে ফাঁকে সমানতালে চলতে লাগলো তাঁর আধ্যাত্মিক সাধনা।

 

তাঁর শিক্ষকঃ

 

বাগদাদ এসে তিনি শায়খ আবু সাইদ ইবনে মোবারক মাখযুমী হাম্বলী, আবুল ওয়াফা আলী ইবনে আকীল (রহ:) এবং আবু মোহাম্মদ ইবনে হোসাইন ইবনে মুহাম্মদ (রহ:) এর নিকট ইলমে ফিকাহ, শায়খ আবু গালিব মুহাম্মদ ইবনে হাসান বাকিল্লানী(রহ:), শায়খ আবু সাইদ ইবনে আব্দুল করীম ও শায়েখ আবুল গানায়েম মুহম্মদ ইবনে আলী ইবনে মুহম্মদ (রহ:) প্রমুখের নিকট এলমে হাদীস এবং শায়খ আবু যাকারিয়া তাবরেয়ী (রহ:) নিকট সাহিত্যের উচ্চতর পাঠ লাভ করেন। হযরত জিলানী (রহ.) এর বাহ্যিক ও আধ্যাত্নিক জ্ঞান চর্চার গুরু শায়খ আবু সাঈদ মাখযুমীর মনে তরুন এ শিষ্যের যোগ্যতা ও প্রতিভা সম্পর্কে এতই সুধারনা ও আস্হাশীলতার সৃষ্টি করল যে, নিজ হাতে প্রতিষ্ঠিত মাদরাসা তত্ত্বাবধান ও পরিচালনার দায়িত্ব শায়খ আব্দুল কাদির জিলানী (রহ:) এর নিকট অর্পন করে তিনি নিজে অবসর গ্রহন করেন।

 

তরীকতের দীক্ষা গ্রহণঃ

 

তরীকতের পথ খুবই কষ্টকর ও সমস্যা সংকুল। প্রতি পদে পদে এতে রয়েছে বিপদের সম্ভাবনা। আরো আছে চিরশত্রু শয়তানের পাতা ফাঁদে পড়ে ঈমানচ্যুত হয়ে পথভ্রষ্ট হবার আশংকা। তাই একাকী এ পথে চলা মোটেই বুদ্ধিমানের কাজ নয়। আর এটা সমীচিনও নয়।  ডাক্তারী শাস্ত্র আয়ত্ব করার জন্য যেমন কেবলমাত্র পুঁথিগত বিদ্যা লাভই যথেষ্ট নয় বরং একজন বিজ্ঞ চিকিৎসকের অধীনে থেকে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা অর্জন করাও অত্যাবশ্যকীয়। একজন শিক্ষাগুরুর পথ নির্দেশও তাই এপথে চলার জন্য একান্ত অপরিহার্য্য।  বাগদাদ নগরীর মুজাফফরিয়া মহল্লায় বাস করেন শায়খ হাম্মাদ বিন মুসলিম দাব্বাস (রহঃ) । সহজ সরল অনাড়ম্বর তাঁর জীবন যাত্রা। আঙ্গুর ও খেজুরের রস বিক্রি করা তাঁর পেশা। তাই মানুষ তাঁকে দাব্বাস বলে ডাকে। দাব্বাস শব্দের অর্থ রস বিক্রেতা। এই মহান বুজুর্গের রসে কোনাদিনও মাছি বসেনা। সিরিয়ার রাহবা গ্রামে জন্ম নিয়েছিলেন তিনি। বাগদাদে আসার পর আর কখনও ফিরে যাননি স্বীয় জন্মভূমিতে এ মহান দরবেশ।  বেছে নিয়েছেন তালেবে মাওলাগণকে সঠিক পথে পরিচালিত করার মহান দায়িত্ব। যুগের কর্ণধার এই মহান সাধকের নিকটই তরীকতের প্রাথমিক দীক্ষা নিলেন হযরত আবদুল কাদের জিলানী (রহঃ)। আত্মনিয়োগ করলেন কঠিন আধ্যাত্মিক সাধনায়। প্রথম দর্শনেই নবাগত সদস্যের অতি উজ্জল ভবিষ্যতের বিষয়ে জানতে পারলেন শায়খ হাম্মাদ বিন মুসলিম দাব্বাস (রহঃ)। আল্লাহ তা’য়ালার অশেষ রহমতের চির জ্যোর্তিময় বলয় সদা পরিবেষ্টন করে আছে তাঁর এ নতুন শিষ্যকে।  সময় তাঁর জন্য অপেক্ষমান। সে সময় সন্নিকটে যখন এ অনারব যুবক অভিসিক্ত হবেন সমস্ত গাউসদের নেতা বা ‘গাউসুল আযম’রূপে। একদিন তামাম শিষ্যদের ভরা মজলিসে তিনি বলেই ফেললেন সেকথা। তিনি বললেন, “সেই সময় সমাগত প্রায়, যখন দুনিয়ার সমস্ত অলি আল্লাহ্গণের গর্দানে থাকবে তাঁর কদম। এই অনারব ব্যক্তির মুখে এক সময় উচ্চারিত হবে একথা, আমার কদম সকল অলি আল্লাহ্গণের স্কন্ধে” তাঁর এই ঘোষনার সময় তখনকার সমস্ত অলি আল্লাহ্গণ তাঁর কদমের উদ্দেশ্যে নিজেদের ঘাড় নত করে দেবে। মহান সাধক শায়েখ হাম্মাদ বিন মুসলিম দাব্বাস (রহঃ) এর সান্নিধ্যে দীর্ঘদিন কাটিয়ে সাধনা পথের সুকঠিন ও বিপদসংকুল বাঁকগুলো একে একে পার হয়ে গেলেন তিনি।  কঠিন রিয়াজত ও মুশাহিদার মাধ্যমে তরীকতের সুকঠিন পথ পাড়ি দেবার মত  শক্তি ও সাহস সঞ্চার হলো তাঁর নিজের মধ্যে। এবার শুধুই এগিয়ে চলার পালা। যে বাজ পাখী দুর আকাশে  উড়ে বেড়াবার জন্যই জন্ম নিয়েছে তাকে কী করে খাঁচায় আটকাবেন শায়খ হাম্মাদ ? কিন্তু তিনি যে তাঁকে নির্বিঘ্নে অসীম নীলাকাশে রাজত্ব করার মত একটা শক্ত ভিত তৈরী করে দিতে পেরেছেন সেটাইবা কম কীসে ?  প্রভুর প্রেম ও মারিফাতের প্রচন্ড নেশায় পেয়ে বসেছে তরূণ আবদুল কাদের জিলানীকে (রহঃ) । দয়াময় প্রভুর মিলন সুধা আকন্ঠ পান না করে যেন কিছুতেই নিস্তার নেই তাঁর। অতি উচ্চাশা মনে নিয়ে দুরু দুরু বুকে এবার তিনি গিয়ে হাজির হলেন যুগশ্রেষ্ট তাপস শায়খ হযরত আবু সাঈদ মুবারক মাখযুমী (রহঃ) এর নিকট। তাঁকে মুরীদ করে নিলেন এ সাধক। তাঁর মনের আশা পূরণের পথও বাতলে দিলেন তিনি। এভাবে দিন-রাত কঠোর তপস্যা ও রিয়াজত-মুশাহিদা-মুজাহিদার মধ্য দিয়ে কেটে গেল তাঁর আরো পঁচিশটি বছর। সার্থক হলো তাঁর রিয়াজত, আর পরিপূর্ণতা পেল তাঁর কঠোর সাধনা।

 

তাঁর তরীকতের শাজারাঃ

 

১) শেরে খোদা হযরত সায়্যিদিনা মাওলা আলী ইবনে আবি তালিব (রাঃআঃ) ৬০০-৬৬২খৃঃ/ওফাত-৪০হিজরী)
২) হযরত সায়্যিদিনা ইমাম হোসাইন (রাঃআঃ) জন্ম-৫ই শাবান ৪র্থ হিঃ-ওফাত-১০ই মুহররম,৬১ হিজরী ৬২৬-৬৮০খৃঃ।
৩) হযরত সায়্যিদিনা ইমাম জয়নুল  আবেদীন (রহঃ) জন্ম-৩৬ হিজরী-ওফাত-১৮ই মুহররম,৯৪ হিজরী  ৬৫৮-৭১৬খৃঃ।
৪) হযরত সায়্যিদিনা  ইমাম  বাকের (রহঃ) জন্ম-৫৭ হিজরী-ওফাত-৭ই জিলহজ্ব,১১৩ হিজরী/  ৬৭৬-৭৩১খৃঃ ।
৫) হযরত সায়্যিদিনা ইমাম জাফর  সাদেক (রহঃ) জন্ম-৮০ হিঃ ওফাত-১৫ই রজব,১৪৮ হিঃ/৬৯৭-৭৬৫খৃঃ।
৬)হযরত সায়্যিদিনা ইমাম  মুসা  আল কাজিম (রহঃ) জন্ম-১২৯ হিঃ ওফাত-২৫ রজব,১৮৩ হিঃ/৭৪৬-৭৯৯খৃঃ।
৭) হযরত সায়্যিদিনা ইমাম আলী আর  রিযা (রহঃ) জন্ম- ১৫৩ হিজরী ওফাত-২রা মুহররম,২০২ হিজরী /৭৭০-৮১৭খৃঃ।
৮)হযরত সায়্যিদিনা মারুফ আল কারখী (রহঃ) ওফাত- ২০০হিঃ/৮১৬খৃঃ
৯)হযরত সায়্যিদিনা সিররি ঊস সাকতী (রহঃ) ওফাত-৮৬৭ হিজরী
১০) হযরত সায়্যিদিনা জুনাঈদ বাগদাদী (রহঃ) ওফাত- ২৭ই রজব- ২২৮-২৯৮ হিজরী/৮৫০-৯২০খৃঃ
১১) হযরত সায়্যিদিনা আবু বকর শিবলী (রহঃ) ওফাত- ১৭ই জিলহজ্ব, ৩৩৫ হিজরী।
১২)হযরত সায়্যিদিনা আবদুল ওয়াহেদ তামিমী (রহঃ)
১৩) হযরত সায়্যিদিনা  আবুল ফারাহ তারতুসী  (রহঃ)      ১৪) হযরত সায়্যিদিনা আবুল হাসান আলী আল হানকারী (রহঃ)
১৫) হযরত সায়্যিদিনা আবু  সাইদ মোবারক মাখযুমী (রহঃ) ওফাত- ৫১৩  হিজরী।

 

তাঁর রচনাবলী সমূহঃ

 

তিনি কাব্য, সাহিত্য, ইতিহাস, দর্শন, ভূগোল ইত্যাদি বিষয়ের পণ্ডিত ছিলেন। তার রচিত বহু গ্রন্থ রয়েছে। এসব গ্রন্থের মধ্যে ফতহুল গায়েব, গুনিয়াতুত তালেবীন, ফতহুর রাব্বানী, ক্বসীদায়ে গাউসিয়া উল্লেখযোগ্য।

 

চারিত্রিক গুণাবলিঃ

 

স্বভাব–চরিত্রঃ

 

তিনি ছিলেন রাসুলে করিম (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)–এর পূর্ণ অনুসারী। মানুষে মানুষে তিনি কোনো পার্থক্য করতেন না। বাদশাহ-ফকিরকে দেখতেন একই নজরে। এমনকি গরিবকে দিতেন তিনি প্রাধান্য। আমির লোকদের হাদিয়া তিনি গ্রহণ করতেন না। তবে গরিবের হাদিয়া গ্রহণ করতেন সন্তুষ্টচিত্তে। জীবনে শাহি–দরবারে কখনো গমন করেননি। তাঁর দরবারে যত হাদিয়া উপস্থিত, হতো তিনি দরিদ্র ও অভাবগ্রস্ত লোকদের মধ্যে তা বিলিয়ে দিতেন। মানুষের দুঃখ সহ্য করতে পারতেন না। তা দূর করার জন্য ব্যাকুল ছিলেন। তিনি বন্ধুবৎসল, বিনয়ী, মিষ্টভাষী ও অমায়িক ব্যক্তিত্বসম্পন্ন। অপরের সালামের অপেক্ষা তিনি করতেন না। আগেই সালাম দিতেন, মুসাফাহার জন্য আগেই হাত বাড়িয়ে দিতেন।

 

আচার ব্যবহারঃ

 

তিনি উপরােক্ত অনুপম চরিত্রের অধিকারী ছিলেন বলে তাঁর আচার ব্যবহার ছিল অত্যন্ত মধুর এবং আকর্ষণীয়। মানুষ তাঁর আচার ও ব্যবহারে যেমনই মুগ্ধ হত, তেমনই তাঁর বশহয়ে যেত। তিনি মানুষকে যােগ্য সম্মান দান করতেন। ছােটদেরকে স্নেহ ও আদর করতেন পক্ষান্তরে তাঁর ব্যক্তিত্ব এবং আত্মসচেতনতা এই ধরনের ছিল যে, তাঁর সামনে উপস্থিত স্বয়ং রাজ্যের খলীফা পর্যন্ত নিজেকে তাঁর নিকট ক্ষুদ্র মনে করতেন। অথচ হযরত বড়পীর (রহঃ) সাহেব সকলের সাথেই একান্ত বিনয় ও বিনম্র ব্যবহার করতেন।

 

ধৈর্য ও সংযমঃ

 

ধৈর্য ও সংযম তাঁর মহান চরিত্রের বৈশিষ্ট্য ছিল এ বিষয়ে তিনি নিজেই বলেন, কখনও কখনও আমার উপর ইলমে বাতেনের এমন গুরুতর বােঝা চাপায় দেওয়া হত যে, পৃথিবীর কোন পাহাড় পর্বতের উপর তা অর্পিত হলে নিরমিষেই তা চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে যেত।

 

স্নেহ-মমতা গাম্ভীর্যঃ

 

স্নেহ-মমতা ও গান্ভীর্যের মূর্ত প্রতীক ছিলেন হযরত বড় পীর (রহঃ) সাহেব। তিনি স্বীয় ভক্ত এবং শিষ্য মণ্ডলীকে যেমন মায়া মমতার বন্ধনে বেঁধে  রাখতেন, তেমনি তাঁর অকৃত্রিম, অনুপম স্নেহ আকর্ষণে তারা তাঁকে মনে প্রাণে ভালোবাসতো ও গভীর ভাবে শ্রদ্ধা করত।

 

এইজন্য ভক্ত ও অনুরক্তগণ তাঁর সাহচর্যে ও তাঁর পবিত্র দরবারে উপস্থিত থাকা কালে পরম আনন্দ অনুভব করত।

সাহসিকতাঃ

 

তিনি দৃঢ় মনােবল, সৎসাহস এবং নির্ভিকতায় ছিলেন সুউচ্চ হিমাদ্রীর মত। তাঁর প্রতিটি কাজে, কর্তব্যে এবং দায়িত্ব পালনে কখনও অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেন নাই। সর্বদা তিনি ন্যায়ের ঝান্ডা উচ্চ রাখতেন। বাদশাহ বা খলীফাদের কাছে চিঠি পত্র লিখার প্রচলিত রীতি প্রথমে বাদশাহর সীমাহীন স্তুতি, প্রশংসা এবং নিজেকে অধম হতে অধমের স্তরে অবনমত করা (যাহা বিনয় নয় বরং সৎ সাহসের অভাবজনিত ভীরুতা) হযরত বড় পীর (রহঃ) এই প্রচলনকে খুবই খারাপ মনে করতেন এবং নিজে এই রীতি হতে সর্বোতভাবে দূরে থাকতেন।

 

দয়ামায়া ও দানশীলতাঃ

হযরত বড়পীর (রহঃ)-এর তুল্য দয়ালু, ক্ষমাশীল এবং দানশীল ব্যক্তি সারা দুনিয়ায় বিরল বৈ কি! মানুষের জন্য  তাঁর দয়ামায়া ছিল অসীম। পরদুঃখ দেখলে তার হৃদয় কেঁদে উঠতো। কাকেও বিপন্ন দেখলে তার বিপদ উদ্ধার করতে তিনি অবিলম্বে ঝাঁপাইয়া পড়তেন। দানের ক্ষেত্রে তিনি মুক্ত হস্ত ছিলেন। কখনও কোন প্রার্থী তার দরজা হতে বঞ্চিত হয়ে ফিরে গেছে বলে শুনা যায় না।

ইবাদতের কঠোর সাধনাঃ

তিনি একাধারে ৪০ বছর পর্যন্ত ইশার নামাজের অযু দিয়ে ফজরের নামাজ আদায় করেছেন। প্রত্যহ শেষ রাত্রে পাঠ করতেন, আল মুহিতুল আলমে, আর রাব্বুশ শহীদ, আল হাসীবুল ফায়্যায়িল খাল্লাকি, আল খালিকু, আল বারিউ, আল মুসাব্বিরু। উক্ত দোয়া পাঠ করার সাথে সাথে লোক চক্ষুর সামন থেকে অদৃশ্য হয়ে যেতেন। তিনি রাতের একটা সময় জিকির ও মোরাকাবা করে কাটাতেন। যৌবনের অধিকাংশ সময় রোজা রেখে কাটিয়েছেন। যখন নফল নামাজ আদায় করতেন সুরা ফাতেহার পর সূরা আর রহমান, সূরা মুজাম্মিল কিম্বা সুরা ইখলাস পড়তেন। তন্দ্রার ভাব আসলে দেখে দেখে কোরআন তেলাওয়াত করতেন।

কেরামত ও উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনাঃ

০১। কথিত আছে যে তিনি মাতৃগর্ভে থাকাকালীন সময়ে পবিত্র কুরআনের পনের পারা মুখস্ত করেন। বাল্যকালে যখন তাকে মক্তবে কুরআন শিক্ষার জন্য পাঠানো হয় তখনই তার এ মহান কেরামত প্রকাশিত হয়।

০২। অত্যন্ত শিশু অবস্থায় রমজানের ও ঈদের চাঁদ দেখার ব্যাপারে সংশয় দেখা দিলে গাউছ পাকের মায়ের দুধপান করা না করার উপর তার সমাধান নির্ধারিত হয় কারণ গাউছ পাক পবিত্র রমজান মাসে জন্ম গ্রহণ করলে তার মায়ের বর্ণনানুযায়ী তিনি সুবহে সাদেক থেকে ইফতার পর্যন্ত রমজান মাসে কোনদিনও মায়ের দুধ পান করেননি।

০৩। তিনি শৈশবকালে যখনি খেলাধুলার মনোনিবেশ করতে আগ্রহী হতেন তখনি একটি গায়েবী আওয়াজ শুনতে পেতেন,“হে মোবারক শিশু আমার দিকে এস! অন্যত্র আবদুল কাদের রহ:) নিজে বর্ণনা করেন, রাত্রিকালে যখনি আমি অসাবধানবশতঃ নিদ্রায় অভিভূত হয়ে পড়তাম তখনি এ বানী আমার অন্তরে প্রতিধ্বনি হত, হে আবদুল কাদের, ঘুমাবার জন্য তুমি দুনিয়াতে আসনি বরং ঘুমন্ত ও মোহান্বিত মানবকুলকে জাগ্রত করার জন্য তোমাকে প্রেরণ করা হয়েছে।

০৪। আব্দুল কাদির জিলানী (রহঃ) যখন মাতৃগর্ভে তখন একদিন তার মাতা সাইয়্যেদেনা উম্মুল খায়ের ফাতেমা(রঃ) স্বপ্নে দেখেন যে মানব জাতির আদি মাতা, হযরত আদম আ: এর স্ত্রী হজরত হাওয়া আ: সহাস্য আনন্দে তাকে বলছেন,”ওগো ফাতেমা! তুমি বিশ্বচরাচরের ভাগ্যবতী মহিলা। তোমার গর্ভে যে সন্তান আছে,সে হবে আওলিয়াকুল শিরমনি গাউসুল আজম।”
অনুরুপ আরেক স্বপ্নে দেখিলেন হযরত হযরত ইব্রাহিম আ: এর স্ত্রী বিবি সারা র: মধুর স্বরে বললেন,”হে সৌভাগ্যবতী ফাতেমা! আল্লাহ পাকের মারেফাত তত্ত্বের শ্রেষ্ঠ পথ প্রদর্শক ‘নুরে আজম’ তোমার গর্ভে আছে। সুতরাং তুমি নিবিষ্ট মনে আল্লাহর গুনগানে নিমগ্ন থেক।”
একই ভাবে আবার দেখলেন ফেরাউনের পুন্যবতী স্ত্রী আসিয়া আ: মধুর কন্ঠে বলছেন,”ওগো সৌভাগ্যবতী ও মর্যাদাশীলা ফাতেমা ! আমি তোমাকে এক অনির্বচনীয় শুভসংবাদ প্রদান করছি। তুমি অতিশয় সৌভাগ্যবতী ও মর্যাদাশীলা রমনী।তোমার গর্ভে যে আওলিয়াকুল শ্রেষ্ঠ সন্তানের আবির্ভাব হয়েছে,পৃতিবীর বুকে তার উপাধি হবে ‘রওশন জমির’। সুতরাং তুমি সতর্কতার সহিত সেই শুভক্ষনের জন্য অপেক্ষা করতে থাক।”এরকম আরো বহু স্বপ্ন তিনি তার গর্ভাবস্হায় দেখেন।

৫। একবার তিনি মক্তবে উপস্হিত হলে সেখানে বসার জন্য কোন স্হান পাচ্ছিলেন না। এমন সময় অদৃশ্য হতে আওয়াজ হলো,”হে শিক্ষার্থীগন! এই বালকের জন্য তোমরা একটু স্হান করে দাও, যাহাতে তিনি বসতে পারেন।” কেহই আওয়াজের দিকে তেমন লক্ষ্য দিল না। পরিশেষে আবার গম্ভীর কন্ঠে দৈববানী ঘোষিত হলো, ”হে শিক্ষার্থীগন! তোমরা কি দেখিত এ পাইতেছ না যে, আল্লাহর প্রিয় অলী দ্বারে দাড়িয়ে আছে? উঠ, তাহাকে সসিবার স্হান করে দাও। অযথা বিলম্ব করে সময় অপচয় কর না।”এই অদৃশ্য বানী ছাত্র শিক্ষক সকলের কর্নেই ভীষনভাবে আঘাত করল। সকলেই হতচকিত ও বিস্ময়াপন্ন হয়ে গেল এবং বড় পীর আব্দুল কাদির (র:) কে বসবার স্হান করে দিল।

কাদেরিয়া ত্বরিকার প্রবর্তকঃ

হযরত আবদুল কাদের জিলানী (রহঃ) বিশ্বব্যাপী ইসলাম প্রচার ও প্রসারে অবিস্মরণীয় ভূমিকা পালন করেছেন। মুসলামানকে ভ্রান্তির বেড়াজাল থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে কোরআন সুন্নাহ ভিত্তিক মানুষকে ইসলামের দাওয়াত দিতে থাকেন। মানুষকে আল্লাহ ও রাসূল (সা.) মুখী করার জন্য বিভিন্ন আমল বাতলিয়ে দিতেন। হযরত আবদুল কাদের জিলানী (রহ.) যখন দুনিয়ার জীবন ত্যাগ করে পরপারে যান। তখন হযরত আবদুল কাদের জিলানী (রহ.)-এর ভক্ত অনুসারীরা তাঁর আমল ও চরিত্রকে সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে কাদেরীয়া তরিকা প্রবর্তন করেন। সে সময়কাল থেকে কাদেরীয়া তরিকার প্রচলন আমাদের দেশেও প্রচলিত হয়েছে।
বেলায়াতের উচ্চস্তরের গাউসুল আজম সারা জাহানে প্রত্যেক জামানায় ৩১৩ জন অলি জমিনে বিদ্যমান থেকে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর শান মান প্রচার ও প্রতিষ্ঠার কাজে নিয়োজিত থাকেন। সূফীতাত্ত্বিক পরিভাষায় তাঁদের আখইয়ার বলা হয়। ৩১৩ জন অলির মধ্যে ৪০ জন আবদাল, ৭ জনকে আবরার, ৫ জনকে আওতাদ, ৩ জন নকীব, ৪ জন নুজবা ও ১ জন গাউসুল আজম থাকেন। যাকে কুতুবুল আউলিয়া বা সুলতানুল আউলিয়া বলা হয়। বাকিরা অন্যান্য সাধারণ পর্যায়ের অলি। তৎজমানায় গাউসগণের মধ্যে যিনি সর্বোচ্চ মর্যাদায় অভিষিক্ত, বেলায়েতে ওজমা ও গাউসিয়তে কোবরার সুমহান আসনে অধিষ্ঠিত ছিলেন তিনি হচ্ছেন হযরত আবদুল কাদের জিলানী (রহ.)।

উপদেশঃ

গাউসুল আজম বড় পীর আবদুল কাদের জিলানি (রহ.) উপদেশের এমন সব মণি-মুক্তা ছড়িয়ে রেখে গেছেন, যার ঔজ্জ্বল্য কোনো দিনই হারাবে না। যেমন: তিনি বলেন, মুমিনের কাজ তিনটি: আল্লাহর হুকুম পালন করা, তাঁর নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত থাকা এবং তাঁর ইচ্ছা–সিন্ধুতে নিজেকে বিলীন করে দেওয়া। প্রথমে ফরজ, পরে সুন্নত ও তারপরে নফল। ফরজ ছেড়ে সুন্নত–নফল নিয়ে মশগুল থাকা আহম্মকি। সুন্নত আদায় বাকি রেখে নফল আদায়ের চেষ্টারও কোনো মূল্য নেই। ফরজ ছেড়ে দিয়ে সুন্নত ও নফল নিয়ে থাকা বাদশাহকে পরিত্যাগ করে গোলামের খিদমতে আত্মনিয়োগের শামিল। শুধু প্রতিমাপূজার নামই শিরক নয়, প্রবৃত্তির দাসত্ব করাও শিরকের শামিল। আসুন তাঁর জীবনের দু’টি ঘটনা থেকে আমরা উপদেশ গ্রহণ করি। যথাঃ

০১। একবার এক মরুপ্রান্তরে হযরত বড়পীর (রহ.) ভ্রমণ করছিলেন। ইবাদত-বন্দেগী ও ধ্যানসাধনার এক বিশেষ ক্ষণে অদৃশ্য থেকে আওয়াজ এলো! হে আবদুল কাদের আমি তোমার প্রতি সন্তুষ্ট। সাধনার মাধ্যমে তুমি আজ এমন এক পর্যায়ে উপনীত হয়েছ যে, আমি আল্লাহ তোমার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে গিয়েছি। অতএব, এখন থেকে শরীয়তের কোন বিধান তোমার উপর বাধ্যতামূলক নেই। তুমি ইবাদত কর বা না কর, এতে কিছু আসবে যাবে না। যে কোন ধরনের কাজে তুমি এখন থেকে স্বাধীন। এ ধরনের কথা শুনে হযরত জিলানী (রহ.) খুব দৃঢ়তার সাথে ‘লা-হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ পড়লেন। অদৃশ্য আওয়াজটি বন্ধ হয়ে গেল। তিনি বলতে লাগলেন হে অভিশপ্ত শয়তান, তোর কুমন্ত্রণা থেকে আমি আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করি। তোর এ প্রস্তাব শুনেই আমি বুঝতে পেরেছি যে, এ তোর ভয়াবহ কৌশল। আমকে পথচ্যুত করার এক মারাত্মক কূটচাল। কেননা, পবিত্র কোরআনে আছে, আল্লাহ কোন মানব সন্তানের সাথে সরাসরি কথা বলেন না। তাছাড়া সাধনার কোন পর্যায়েই ইবাদ-বন্দেগীর দায়িত্ব কারো উপর থেকে তুলে নেয়া হয় না। শরীয়ত অমান্য করার নির্দেশ আল্লাহ কখনও কোন ব্যক্তিকে দেন না। তোর আওয়াজ শোনামাত্রই আমি বুঝতে পেরেছি যে, এমন বাণী আল্লাহর পক্ষ থেকে আসতে পারে না। এ নিশ্চয়ই শয়তানের কৌশল। এ কথা শুনে শয়তান বলল, এ ধরনের কথা বলে এর আগে আমি এই প্রান্তরেই অন্তত ২৭ জন সাধকের সর্বনাশ করেছি। আজ আপনি নিজ প্রজ্ঞা, জ্ঞান ও উচ্চপর্যায়ের সাধনাবলেই রক্ষা পেয়ে গেলেন, হে যুগশ্রেষ্ঠ ওলী। তখন এ কথা শুনে হযরত জিলানী (রহ.) আবার পড়লেন ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’। অর্থাৎ আল্লাহর খাস রহমত ছাড়া ধূর্ত প্রতারক শয়তান থেকে বেঁচে থাকার কোন শক্তি ও ক্ষমতা আমার নেই। শয়তানের প্ররোচনা থেকে রক্ষা পাওয়ারও দোয়া আল্লাহর প্রিয় নবী (সা.) আমাদের শিক্ষা দিয়ে গিয়েছেন। হযরত জিলানী (রহ.) এ দোয়া পড়ে বলতে লাগলেন, ঘটনার শেষ অংশে এসে তুই আমাকে নতুন করে আবার ধোঁকা দেয়ার চেষ্টা করছিস হে বিতাড়িত শয়তান। তুই বুঝাতে চাইছিস যে, আমার জ্ঞান ও প্রজ্ঞার দ্বারা আমি রক্ষা পেয়েছি। অথচ আমি যে দোয়াটি পড়েছি, এতে বলা আছে ‘আল্লাহর সাহায্য ও করুনা ছাড়া রক্ষার কোন উপায় বান্দার নেই। এ মন্তব্য শুনে শয়তান বলল, সত্যিই আপনি আল্লাহর প্রকৃত খাস বান্দা। কোনভাবেই আমি আপনাকে খোদাবিমুখ করতে পারলাম না। একথা বলে শয়তান ব্যর্থ হয়ে দূরে সরে গেল।

০২। তার মাতা তাকে জ্ঞান অর্জনের উদ্দেশ্যে বাগদাদে পাঠানোর প্রাককালে চল্লিশটি দিরহাম তার কাপড়ে সেলাই করে দিলেন। এবং মিথ্যা কথা না বলার জন্য নছিয়ত করেন। পথিমধ্যে একদল দস্যু কর্তৃক তার কাফেলা আক্রানত হল। সবার কাছ থেকে সবকিছুই লুট পাট করে নিল। আব্দুল কাদের জিলানী একপাশে দাড়ানো ছিলেন। দস্যুরা তার কাছে কিচু আছে কিনা জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন,তার কাছে চল্লিশ দিরহাম আছে। অতঃপর তারা আব্দুল কাদের জিলানীকে তাদের সর্দারের কাছে নিয়ে গেলেন। সর্দার পুনরায় তার কাছে জানতে চাইলো একথা সত্য কিনা? গাউছুল আযম নির্দ্বিধায় বললেন,তা সত্য। দস্যু সর্দার জানতে চাইলো,এ রকম অকপটে সত্য কথা বলার কারণ কি? গাউছুল আযম বললেন, মায়ের নির্দেশ সর্বাবস্থায় সত্য কথা বলার। একথা শুনে দস্যু সর্দারের ভাবানতর সৃষ্টি হল, এবং মনে হতে লাগলো এ বালক তার মায়ের আদেশ পালন করার নিমিত্তে নিজের শেষ সম্বলটুকু হাতছাড়া হবে জেনেও অকপটে সত্য কথা বললো আর আমরা আল্লাহ ও রাসুলের (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নির্দেশ ভুলে গিয়ে আজীবন মানুষের উপর কতইনা অত্যাচার জুলুম করে চলেছি।  তার সততার গুনে অনেকগুল মানুষ হিদায়াত পেল।

তিরোধানঃ

৫৬১ হিজরি ১১ রবিউস সানি তিনি (রহ.) নশ্বর পৃথিবী ত্যাগ করে। তাঁর স্মরণে প্রতিবছর ১১ রবিউস সানী বিশ্বব্যাপী পালিত হয়েছে ফাতেহা-ই-ইয়াজদহম। বাংলাদেশেও যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগাম্বির্য্যরে মাধ্যমে হযরত আবদুল কাদের জিলানী (রহঃ) এর ওফাত দিবস উপলক্ষে ফাতেহা-ই-ইয়াজদহম পালিত হয়েছে। এছাড়া প্রত্যেক চন্দ্র মাসের ১১ তারিখ কাদেরীয়া তরিকার অনুসারীরা হযরত আবদুল কাদের জিলানী (রহঃ) এর ওফাতের তারিখে গেয়ারভী শরীফ পালন করেন।

সংগ্রহেঃ আহমদ শাহ আদীল