মুজাদ্দিদে আলফেছানী শেখ আহমদ সেরহিন্দী (রহ.)’র সংক্ষিপ্ত জীবন ইতিহাস
জন্ম
তার নাম শেখ আহমদ। পিতার নাম শেখ আবদুল আহাদ। তিনি বংশ পরম্পরায় আমিরুল মু’মিননি হজরত উমর ফারুক (রা.) এর সহিত মিলিত হয়েছেন। এ মহান ব্যক্তি ৯৭১ হিজরী সনের ১৪ই শাউয়াল জুমারাত (বৃহস্পতিবার) ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের সেরহিন্দ শরীফে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি ভূমিষ্ট হওয়ার পূর্বে তার শ্রদ্ধেয় আব্বাজান স্বপ্নের মাধ্যমে বহু অলৌকিক ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছিলেন।
শিক্ষা জীবন
তার পিতার নিকটই প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন করেন। অতি স্বল্প বয়সে তিনি পবিত্র কুরআন মজীদ মুখস্থ করে নেন। অতঃপর তিনি ধর্মীয় বিভিন্ন বিষয়ে উচ্চ শিক্ষা লাভের উদ্দেশ্যে সুদূর ‘সিয়ালকুট’ হজরতুল আল্লামা কামাল কাশ্মীরী (রাহ.) এর কাছে গিয়ে ইলমে হাদীছ অধ্যয়ণ করেন। তিনি যুগশ্রেষ্ঠ মুফাসসির ও মুহাদ্দিস হযরত কাজী বাহলুল বখশানী (রাহ.) এর নিকট ছিহাহ্ সিত্তাহ্ ও তাফসীর গ্রন্থাদি অধ্যয়নের জন্য হেরমাইন শরীফাইন গমন করেন। এভাবে তিনি নানা বিষয়ে পান্ডিত্য অর্জন করেন।
১. মুবাত শরীফ,
২. রিসালয়ে রদ্দে শিয়া,
৩. রিসালায়ে ফী ইছবাতিন নুরুয়াত,
৪. রিসালায়ে তাহলীলিয়্যাহ্,
৫. মা’রিফে লুদুনিয়া,
৬. রিসালায়ে মাবদা ওয়া মাআদ,
৭. রিসালাতে গশিফাতে গাইবিয়্যাহ,
৮. আদাবুল মু’রিদীন ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে তিনি মূল্যবান কিতাবাদি প্রণয়ন করেন।
বায়আত গ্রহণ
সতের বছর বয়সে তিনি ইলমে জাহিরীর পরিপূর্ণতা অর্জন করেন। তার আব্বা হুজুরের কাছ থেকে তিনি চিশ্তীয়া-ছাবেরীয়া সিলসিলায় বায়আত গ্রহণ করেন। পরে তিনি এ সিলসিলায়ে খিলাফত প্রাপ্ত হন। এরপর তিনি আধ্যাত্মিক জ্ঞানাজর্নে মনোনিবেশ করেন। ১০০৭ হিজরী সনে তার শ্রদ্ধেয় আব্বাজানের ইতিকালের পর হজ্ব পালনের উদ্দেশ্যে মক্কা যাওয়ার প্রাক্কালে দিল্লীর প্রখ্যাত অলীয়ে কামিল হজরত খাজা মুহাম্মদ বাকী বিল্লাহ্ (রাহ.) এর খিদমতে হাজির হন। তিনি তাকে দেখে মাত্র বলে উঠলেন, হে শেখ আহমদ! আমি আপনার অপেক্ষায় রয়েছি। তারপর ইরশাদ করেন, বায়তুল্লাহ শরীফ জিয়ারতের পূর্বে ছাহেবে বায়তুল্লাহ আল্লাহকে আবশ্যক। এই বাণী তার হৃদয়ে বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়। ফলে তিনি তারই হতে নকশবন্দীয়া তুরীকায় বায়আত গ্রহণ করে ধন্য হন। স্বল্প সময়ের মধ্যে তিনি এ ত্বরীকায় সকল স্তর অতিক্রম করে কামালিয়াতের সর্বোচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত হন এবং খিলাফত প্রাপ্ত হন। খাজা বাকী বিল্লাহ্ তার সম্পর্কে বলেন, শেখ আহমদ একটি সূর্য স্বরপ,যার আলোতে নক্ষত্র-রাজির জ্যোতি ঢাকা পড়ে যায়।
তিনি মহৎ ও উন্নত চরিত্রের অধিকারী ছিলেন। সরলতা, সহনশীলতা, বদান্যতা, আতিথিয়েতা ইত্যাদি অসাধারণ গুনে গুণান্বিত ছিলেন। প্রিয় নবীজীর (দ.) প্রত্যেকটি সুন্নাতকে তিনি খুবই গুরুত্ব ও মর্যাদা সহকারে আদায় করতেন।
কারামত
এক. সৈয়দ জামাল নামক তার এক বিশিষ্ট শিষ্য বর্ণনা করেন, একদা আমি জঙ্গলের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ একটি বাঘ জঙ্গল হতে বের হয়ে আমাকে আক্রমন করার জন্য এগিয়ে আসছিল। এমতাবস্থায় আমি গত্যান্তর না দেখে “হৈ মুজাদ্দিদে আলফেছানী আমাকে রক্ষা করুন” বলে চিৎকার দেয়া মাত্রই বিদ্যুৎ গতিতে একটি লাঠি হস্তে তিনি উপস্থিত হন, এবং তারা দ্বারা তিনি বাঘটিকে খুব জোরে আঘাত করলেন। ফলে বাঘটি পলায়ন করল। এরপর তিনি অদৃশ্য হয়ে যান।
দুই, এক মুরীদ হজরতের দরবারে উপস্থিত হয়ে আরজ করল যে, হুজুর যৌবন পেরিয়ে বার্ধকে উপনীত হতে চলেছি। দুঃখের বিষয়! বিবাহ করেছি বহু বছর,কিন্তু আমার কোন ছেলে সন্তান আজও ভূমিষ্ঠ হয়নি। দয়া করে আপনি একটু উহার দিকে মনোনিবেশ করুন। হুজুর কিছুক্ষন গভীর ধ্যানে নিমগ্ন থাকার পর বললেন, লৌহ মাহফুজে তোমার বর্তমান পত্নির ঘরে কোন ছেলে সন্তান নেই। যদি তুমি অন্য কোন মহিলাকে বিবাহ কর তাহলে ছেলে সন্তান হবে। যারা তোমার মৃত্যুর পর তোমাকে স্মরণ করবে। তারপর তিনি দ্বিতীয় মহি লাকে বিবাহ করে। সে ঘরে তার এক পুত্র সন্তান ও এক কন্যা সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়।
ইন্তেকাল
তিনি ১০৩৪ হিজরীর ২৮শে সফর মঙ্গলবার ৬৩ বছর বয়সে সেরহিন্দ শরীফ ইন্তেকাল করেন। সেখানেই তাঁর মাজার শরীফ বিদ্যামান।