প্রবন্ধ

কোর’আনের মাস রমযানের বিদায়

মুহাম্মদ নাঈমুল হক

যে ব্যক্তি রমজান পেল এবং রমজানের রোজা পেলো কিন্তু নিজেকে গোনাহমুক্ত করতে পারল না তার মতো অভাগা আর কেউ নেই। আর যে ব্যক্তি পবিত্র রমজান পেল এবং তার হক সঠিকভাবে পালন করলো, সে এমনভাবে পাপমুক্ত হলো যেন সে সদ্য মায়ের গর্ভ থেকে ভূমিষ্ট হলো।

প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সে বিখ্যাত হাদিসটিতে রোজার আবশ্যক কর্তব্য সুস্পষ্টভাবে ফুটে ওঠেছে। যেখানে তিনি রমজানের হক আদায় না করলে কী পরিণতি হবে তা বর্ণনা করেছেন।

 

বিদায় শব্দটির সঙ্গে কষ্ট জড়িয়ে আছে। যে কোন বিদায় অনুভূতিতে নাড়া দেয়। আর রমজান তো এসেছিল রহমত, মাগফিরাত এবং নাজাতের প্রাচুর্য নিয়ে। এ থেকে আমরা বঞ্চিত হবো, এরকম ভাবতেই কষ্ট হয়।

 

মুমিনরা রমজান মাসকে বিদায় জানাবে অশ্রুসিক্ত চোখে। মহান প্রভুর দরবারে তওবারত অবস্থায় বরকতের এ মাসকে বিদায় জানাব। কারণ মুমিন জানে না, ক্ষমার এ মাসে নিজের পাপগুলো তারা ক্ষমা করিয়ে নিতে পেরেছে কি-না! পাপ-পঙ্কিলতা থেকে নিজের অন্তঃকরণ পবিত্র করে মহান রবের রেজামন্দি হাসিল করতে পেরেছে কি-না।

 

যে ঐশী বার্তা নিয়ে মুমিন জীবনে এ মাসের আগমন ঘটেছে, তা থেকে সে কতটুকু আহরণ করতে পেরেছে, আগামী ১১টি মাস পাপ থেকে বাঁচার জন্য নিজেকে কতটা প্রস্তুত করতে পেরেছে, রমজানের শেষলগ্নে সে এই চিন্তায়ই বিভোর থাকে। এ জন্য রমজান যতই শেষের দিকে যায়, ততই তার মস্তক মহান রবের প্রতি অবনত হতে থাকে।

 

রমজান আমাদের ছেড়ে চলে যাচ্ছে।আমরা কি পেরেছি রহমতের বৃষ্টিতে অবগাহন করতে, মাগফিরাতের সাগরে ভাসতে, আমরা কি পেয়েছি নাজাতের সুবাতাস?

 

রমজান তো তাকওয়া অর্জনের মাস অর্থাৎ খোদাভীতি লাভ। আমরা কি পেরেছি খোদাভীতি হতে। আল্লাহর ভয়ে সব রকম অন্যায়, অপকর্ম, লোভ ছাড়তে পেরেছি কি? তবে রমজান থেকে আমাদের অর্জন কি?

 

রমজান তো সহনশীল ও সহমর্মিতার শিক্ষা দেয়। এই শিক্ষা কি আমরা গ্রহণ করতে পেরেছি, না রমজান আসা-যাওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকলো।

 

নিজেকে শুধরে নেয়ার সময় ছিল রমজান। আমরা কি আত্মশুদ্ধি অর্জন করতে পেরেছি। অর্থাৎ লোভ-লালসা, গিবত, হিংসা, পরশ্রীকাতরতা, আত্ম-অহঙ্কার, মিথ্যা বলা, কার্পণ্য ইত্যাদি থেকে মুক্ত হতে পেরেছি।

 

 

প্রিয় নবী (সা.) নিজেও রমজানের শেষের দিকে ইবাদতের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতেন। হাদিসে এসেছে, যখন রমজানের শেষ ১০ দিন আগমন করত, তখন মহানবী (সা.) নিজেকে ইবাদতের জন্য সর্বোচ্চ প্রস্তুত করে নিতেন। রাত্রি জাগরণ করতেন এবং পরিবারের লোকদের ইবাদতের জন্য জাগিয়ে দিতেন। (বুখারি)

 

মুমিনদের উচিত রমজানের বিদায়লগ্নে সর্বোচ্চ পরিমাণ ইবাদত করা, রাত জেগে বেশি বেশি তওবা করা, সব ধরনের পাপ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখা। কারণ, রমজান পেয়েও যে ব্যক্তি নিজের পাপগুলো ক্ষমা করাতে পারল না, তার মতো হতভাগা আর কেউ নেই।

 

আসুন রমজানের যতটুকু সময় আছে এর প্রতিটি মুহূর্তকে কাজে লাগাই। কল্যাণকামী হই এবং আল্লাহর কৃপা লাভ করি।