শাওয়াল মাসের ছয় রোযা ও অন্যান্য নফল রোযা
সৈয়দ মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন আল আযহারী
আল্লাহ তায়ালা মানুষের আত্মিক পরিশুদ্ধির এক সুবর্ণ সুযোগ হিসেবে ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের অন্যতম রোযাকে বান্দার জন্য নির্ধারণ করেছেন। রোযা মানুষকে গুনাহমাফের মাধ্যমে নিষ্কলুষ ও নির্ভেজাল করে। রোযার মাধ্যমে আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন বান্দার গুনাহ মাফ করে দেন। ধর্মপ্রাণ মুসলমান ব্যক্তি যাতে শুধু মাহে রমাদানের ফরয রোযা রেখে থেমে না যান, বরং তিনি কীভাবে সহজেই পূর্ণ বছরটা মহান আল্লাহ্ তায়ালার প্রিয় বান্দা ও ভালোবাসার পাত্র হয়ে থাকতে পারেন এবং কী করে চিরস্থায়ী জান্নাতের বাসিন্দা হতে পারেন এবং পরকালে তিনি কীভাবে সফলকাম থাকতে পারেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মতের সামনে এই পথ সুস্পষ্ট করে দিয়ে গেছেন। তাই শাওয়াল মাসের ছয়টি নফল রোযা পালন সারা বছর রোযার সওয়াব প্রাপ্তির এমনি একটি পরম সুযোগ এনে দেয়।
শাওয়াল শব্দের বিশ্লেষণ:
পবিত্র মাহে রমযানের পরবর্তী মাস এবং চন্দ্র মাসের দশম মাস হচ্ছে শাওয়াল মাস। শাওয়াল শব্দটি ‘শাওলুন’ থেকে এসেছে, যার অর্থ হচ্ছে- বের হওয়া। যেহেতু এ মাসে আরববাসী আনন্দ-উল্লাসের জন্য ভ্রমণে বের হতো এজন্য শাওয়ালকে শাওয়াল বলা হয়। (গিয়াসুল্লুগাত-২৮৭)
শাওয়াল মাসের আমল:
শাওয়াল মাসে অনেক আমল রয়েছে এসব আমলের ফযীলতও অনেক বেশী। এ মাসের গুরত্বপূর্ণ একটি আমল হচ্ছে শাওয়ালের ‘ছয় রোযা’। রমযানের ফরয রোযা পালনের পর শাওয়াল মাসের ছয়টি রোযা রাখা মুস্তাহাব। আর এ রোযাকে শাওয়ালের ছয় রোযা বলে। এই রোযার অনেক ফযীলত রয়েছে যা হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে এ রোযা রাখতেন এবং সাহাবায়ে ক্বেরামকেও রাখার জন্য নির্দেশ দিতেন।
শাওয়ালের রোযার ফযীলত:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শাওয়াল মাসে ছয়টি রোযা রাখার প্রতি উম্মতকে উদ্বুদ্ধ করে ইরশাদ করেন,
عَنْ أَبِي أَيُّوبَ الْأَنْصَارِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: “مَنْ صَامَ رَمَضَانَ ثُمَّ أَتْبَعَهُ سِتًّا مِنْ شَوَّالٍ كَانَ كَصِيَامِ الدَّهْرِ”.
“যে ব্যক্তি রমযানের রোযা রাখবে অতপর শাওয়ালে ছয়টি রোযা পালন করবে সে যেন পুরো বছর রোযা রাখল। (মুসলিম ১১৬৪)
উপরোক্ত হাদিস প্রসঙ্গে ইমাম নবভী তাঁর ‘শরহে মুসলিম’ গ্রন্থে মন্তব্য কওে বলেছেন,
قَالَ الْعُلَمَاء: وَإِنَّمَا كَانَ ذَلِكَ كَصِيَامِ الدَّهْر، لِأَنَّ الْحَسَنَةَ بِعَشْرِ أَمْثَالِهَا، فَرَمَضَانُ بِعَشَرَةِ أَشْهُرٍ، وَالسِّتَّة بِشَهْرَيْنِ). شرح مسلم ৫৬/৮
যদি রমযানের ৩০টি রোযার সঙ্গে শাওয়ালের ছয়টি রোযা যুক্ত হয়, তাহলে মোট রোযার সংখ্যা হয় ৩৬ ইসলমী শরিয়ত অনুযায়ী, প্রতিটি পুণ্যের জন্য কমপক্ষে ১০ গুণ পুরস্কারের কথা উল্লেখ রয়েছে।
আল-কুরআন কারীমের সূরা আন-আমের ১৬০ নম্বর আয়াতে ইরশাদ করেন,
مَن جَآءَ بِٱلْحَسَنَةِ فَلَهُۥ عَشْرُ أَمْثَالِهَا ۖ وَمَن جَآءَ بِٱلسَّيِّئَةِ فَلَا يُجْزَىٰٓ إِلَّا مِثْلَهَا وَهُمْ لَا يُظْلَمُونَ
“যে একটি সৎকর্ম করবে, সে তার দশগুণ পাবে এবং যে, একটি মন্দ কাজ করবে, সে তার সমান শাস্তিই পাবে। বস্তুতঃ তাদের প্রতি জুলুম করা হবে না। (সূরা আন-আমের -১৬০)
তা’হলে ৩৬টি রোযা ১০ গুণ পুরস্কারে পরিণত করলে তা ৩৬০টি রোযার সমতুল্য হবে। অর্থাৎ সারা বছরের রোযার সমতুল্য হবে।
অপর রেওয়ায়াতে আছে,
جَعَلَ اللهُ الْحَسَنَةَ بِعَشْرِ أَمْثَالِهَا، الشَّهْرُ بِعَشَرَةِ أَشْهُرٍ، وَصِيَامُ سِتَّةِ أَيَّامٍ بَعْدَ الشَّهْرِ، تَمَامُ السَّنَةِ
)في صحيح الإرواء تحت حديث: ৯৫০، وصَحِيحِ التَّرْغِيبِ وَالتَّرْهِيب: ১০০৭
আল্লাহ তাআলা প্রতিটি সৎকর্মের সাওয়াব দশগুন বৃদ্ধি করে দেন। তাই রমযানের রোযা দশ মাসের রোযার সমতুল্য, আর (শাওয়ালের) ছয় রোযা দু’মাসের রোযার সমান। সুতরাং এ হলো এক বছরের রোযা৷(তারগীব তারহীব-১০০৭)
عَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ بْنِ مُسْلِمٍ الْقُرَشِيِّ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ سَأَلْتُ أَوْ سُئِلَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَنْ صِيَامِ الدَّهْرِ فَقَالَ “ إِنَّ لأَهْلِكَ عَلَيْكَ حَقًّا صُمْ رَمَضَانَ وَالَّذِي يَلِيهِ وَكُلَّ أَرْبِعَاءٍ وَخَمِيسٍ فَإِذًا أَنْتَ قَدْ صُمْتَ الدَّهْرَ وَأَفْطَرْتَ ”
হযরত মুসলিম কারশী রাদিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন একদা আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খেদমতে সারা বছর রোযা রাখা সম্পর্কে আরয করলাম; রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করলেন, “তোমার উপর তোমার পরিবার-পরিজনের হক রয়েছে। অতঃএব তুমি রমাদান মাস ও এর পরবর্তী মাস তাতে রোযা রাখবে এবং প্রত্যেক বুধবার, বৃহস্পতি বার রোযা রাখবে। আর যখনই এরূপ করবে তাহলে তুমি যেন সারা বছর রোযা রাখলে। (আবু দাউদ, তিরমিযি: হাদীস নং-৭৪৮)
হযরত সাওবান রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
عَنْ ثَوْبَانَ، مَوْلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ قَالَ: “مَنْ صَامَ سِتَّةَ أَيَّامٍ بَعْدَ الْفِطْرِ كَانَ تَمَامَ السَّنَةِ، مَنْ جَاءَ بِالْحَسَنَةِ فَلَهُ عَشْرُ أَمْثَالِهَا” في صحيح ابن ماجة، ১৭১৫:
যে উদুল ফিতরের (রমযানের) পর ছয়টি রোযা রাখল সে যেন পূর্ণবছর রোযা পালন করল। কেননা আল্লাহ তাআলা প্রতিটি সৎকর্মের সাওয়াব দশগুন বৃদ্ধি করে দেন। (ইবনু মাজা-১৭১৫)
কারন, রমযানের রোযা দশ মাসের রোযার সমতুল্য আর (শাওয়ালের) ছয় রোযা দু’মাসের রোযার সমান। সুতরাং এ হলো এক বছরের রোযা।
অপর রেওয়ায়েতে আছে, যে ব্যক্তি রমযানের রোযা শেষ করে ছয়দিন রোযা রাখবে সেটা তার জন্য পুরো বছর রোযা রাখার সমতুল্য। (আহমদ: ৫/২৮০, দারেমি : ১৭৫৫)
শাওয়াল মাসের ছয় রোযার উপকারিতা:
উপরোক্ত হাদিস শরীফগুলো দ্বারা প্রমানিত যে, রমযানের রোযা রাখার পর শাওয়ালের ছয়টি রোযা রাখলে সারা বছর রোযা রাখার সওয়াব পাওয়া যাবে। এ ছাড়া শাওয়ালের ছয় রোযা রাখার আরও ফায়দা হচ্ছে।ফরয আমলের কমতি নফল আমল দিয়ে পূরণ করা হয়।
অবহেলার কারণে অথবা গুনাহের কারণে রমযানের রোযার উপর যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে থাকে সেটা পুষিয়ে নেয়া হয় নফল রোযার মাধ্যমে। কেয়ামতের দিন ফরয আমলের কমতি নফল আমল দিয়ে পূরণ করা হবে। যেমন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন,
عن أَبِي هُرَيْرَةَ رضي الله عنه قَالَ : سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ : إِنَّ أَوَّلَ مَا يُحَاسَبُ بِهِ الْعَبْدُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مِنْ عَمَلِهِ صَلَاتُهُ فَإِنْ صَلُحَتْ فَقَدْ أَفْلَحَ وَأَنْجَحَ وَإِنْ فَسَدَتْ فَقَدْ خَابَ وَخَسِرَ ، فَإِنْ انْتَقَصَ مِنْ فَرِيضَتِهِ شَيْءٌ قَالَ الرَّبُّ عَزَّ وَجَلَّ : انْظُرُوا هَلْ لِعَبْدِي مِنْ تَطَوُّعٍ فَيُكَمَّلَ بِهَا مَا انْتَقَصَ مِنْ الْفَرِيضَةِ ؟ ثُمَّ يَكُونُ سَائِرُ عَمَلِهِ عَلَى ذَلِكَ.
) أبو داود (৮৬৪) ، والترمذي (৪১৩) ، والنسائي (৪৬৫)
“কেয়ামতের দিন মানুষের আমলের মধ্যে সর্বপ্রথম নামাযের হিসাব নেয়া হবে। যদি তা সঠিকভাবে আদায় করা হয় তাহলে সে ব্যক্তি সফল ও কৃতকার্য হল, আর যদি তা সঠিকভাবে আদায় করা না হয় তাহলে সে ব্যক্তি ব্যর্থ ও বিফল হল। তিনি আরো এরশাদ করেন, আমাদের রব ফেরেশতাদেরকে বলেন অথচ তিনি সবকিছু জানেন- তোমরা আমার বান্দার নামায দেখ; সেকি নামায পূর্ণভাবে আদায় করেছে নাকি নামাযে ঘাটতি করেছে। যদি পূর্ণভাবে আদায় করে থাকে তাহলে পূর্ণ নামায লেখা হয়। আর যদি কিছু ঘাটতি থাকে তখন বলেন: দেখ আমার বান্দার কোন নফল নামায আছে কিনা? যদি নফল নামায থাকে তখন বলেন: নফল নামায দিয়ে বান্দার ফরযের ঘাটতি পূর্ণ কর। এরপর অন্য আমলের হিসাব নেয়া হবে। (সুনানে আবু দাউদ-৮৬৪, তিরমিযী-৪১৩. নাসায়ী-৪৬৫)
মহান শরিয়ত প্রণেতা ফরযের আগে-পরে নফল প্রবর্তন করেছেন যেমন, ফরয সালাতের আগে-পরের সুন্নতগুলো এবং রমযানের আগে শাবানের রোযা আর পরে শাওয়ালের রোযা। এই নফলসমূহ ফরযের ত্রুটি গুলোর ক্ষতি পূরণ করে। কারণ রোযাদার অনর্থক বাক্যালাপ, কুদৃষ্টি প্রভৃতি কাজ থেকে সম্পূর্ণ বাঁচতে পারে না যা তার রোযার পুণ্যকে কমিয়ে দেয়।
ইবনু রজব হাম্বলী তাঁর ‘লাতায়েফুল মা’রেফ’ নামক কিতাবে “শাওয়াল মাস” অধ্যায়ে বলেন,
إن صيام شوال وشعبان كصلاة السنن الرواتب قبل الصلاة المفروضة وبعدها، فيكمل بذلك ما حصل في الفرض من خلل ونقص، فإن الفرائض تكمل بالنوافل يوم القيامة.. وأكثر الناس في صيامه للفرض نقص وخلل، فيحتاج إلى ما يجبره من الأعمال.
মাহে শা’বন ও শাওয়ালের রোযা ফরয নামাযের আগের ও পরের সুন্নাতগুলোর মতো। যা ফরয নামাযের অসম্পূর্ণতাকে পরিপূর্ণ করে দেয়। অনুরূপভাবে শাওয়াল মাসের ৬ রোযা রমযানের ফরয রোযার অসম্পূর্ণতাকে পূর্ণতা দান করে এবং তাতে কোনো ত্রুটি ঘটে থাকলে তা দূর করে থাকে। সে অসম্পূর্ণতা ও ত্রুটির কথা রোযাদার জানতে পারুক আর নাই পারুক।
অধিকাংশ মানুষের ফরয রোযা সমূহে অনেক অসম্পূর্ণতা ও ত্রুটি রয়েছে, তাই সে অসম্পূর্ণতাকে পূর্ণতা দান করার মত কিছু আমল প্রয়োজন। আর শাওয়াল মাসের ৬ রোযা রমযানের ফরয রোযার অসম্পূর্ণতাকে পূর্ণতা দান করে এবং তাতে কোনো ত্রুটি ঘটে থাকলে তা দূর করে দেয়।
(ইবনু রজব হাম্বলী: ‘লাতায়েফুল মা’রেফ’ “শাওয়াল মাস” অধ্যায়:৩০৬-৩১৫ )
রমযানের রোযা কবুল হওয়ার লক্ষণ:
ইবনু রজব হাম্বলী তাঁর ‘লাতায়েফুল মা’রেফ’ নামক কিতাবে “শাওয়াল মাস” অধ্যায়ে আরও বলেন,
إن معاودة الصيام بعد صيام رمضان علامة على قبول صوم رمضان، فإن الله تعالى إذا تقبل عمل عبد، وفقه لعمل صالح بعده، كما قال بعضهم: ثواب الحسنة الحسنة بعدها، فمن عمل حسنة ثم أتبعها بحسنة بعدها، كان ذلك علامة على قبول الحسنة الأولى، كما أن من عمل حسنة ثم أتبعها بسيئة كان ذلك علامة رد الحسنة وعدم قبولها.
তাছাড়া রমযানের ফরয রোযা পালনের পরপর পুনরায় রোযা রাখার মানেই হলো রমযানের রোযা কবুল হওয়ার একটি লক্ষণ। যেহেতু মহান আল্লাহ্ যখন কোনো বান্দার নেক আমল কবুল করেন, তখন তার পরেই তাকে আরও নেক আমল করার তাওফিক দান করে থাকেন। যেমন উলামাগণ বলে থাকেন, ‘নেক কাজের ছাওয়াব হলো, তার পরে পুনরায় নেক কাজ করা। সুতরাং যে নেক কাজের পর পুনরায় নেক কাজ করল তার মানে হলো তার পূর্বের আমল কবুল হওয়ার একটি লক্ষণ। আর যে নেক কাজের পর বদ কাজ করল তার মানে হলো তার পূর্বের আমল কবুল না হওয়ার একটি লক্ষণ। (ইবনু রজব হাম্বলী: ‘লাতায়েফুল মা’রেফ’ “শাওয়াল মাস” অধ্যায়:৩০৬-৩১৫ )
রমযানের কাযা রোযা ও শাওয়ালের ছয় রোযা একসাথে এক নিয়তে আদায় করা:
যে ব্যক্তি আরাফা দিবসে রোযা রাখল অথবা আশুরা দিবসে রোযা রাখল, এমতাবস্থায় যে তার উপর রমযানের কাযা রোযা রয়ে গেছে আর সে তার রমযানের কাযা রোযার নিয়্যত করল, তাহলে তার রমযানের কাযা আদায়ও হয়ে যাবে এবং একই সাথে আরাফা দিবস বা আশুরা দিবসে রোযা রাখার ছাওয়াবও পেয়ে যাবে। এটা হল কেবল সাধারণ নফল রোযার ক্ষেত্রে যার সাথে রমযানের কোনো যোগগসূত্র নেই। অবশ্য শাওয়ালের ছয় রোযার বিষয়টি ভিন্ন। শাওয়ালের ছয় রোযা রমযানের সাথে যোগসূত্রে বাঁধা। এ কারণে রমযানের কাযা রোযা থাকলে তা আদায় করার পরই শাওয়ালের ছয় রোযা আদায় করা যাবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
مَنْ صَامَ رَمَضَانَ ثُمَّ أَتْبَعَهُ سِتًّا مِنْ شَوَّالٍ كَانَ كَصِيَامِ الدَّهْرِ
“যে ব্যক্তি রমযানের রোযা রাখল, অতঃপর শাওয়ালের ছয় রোযা রাখল সে যেন পুরা বছরই রোযা রাখল।” যে ব্যক্তির উপর রমযানের কাযা রোযা রয়েছে তাকে রমযানের রোযা আদায়কারী বা পূর্ণকারী বলা হবে না যতক্ষণ না তার দায়িত্বে থাকা কাযা রোযা সে পূর্ণ করে নেবে। তাছাড়া ফরয আদায়ের দায়িত্ব পালন নফল আদায়ের চেয়ে অধিক গুরুত্ব রাখে।
শাওয়ালের ছয় রোযায় কি ধারাবাহিকতা বজায় রাখা জরুরি?
উপরোক্ত হাদিস প্রসঙ্গে ইমাম নবভী তাঁর ‘শরহে মুসলিম’ গ্রন্থে মন্তব্য করেছেন,
قَالَ أَصْحَابنَا : وَالْأَفْضَل أَنْ تُصَامَ السِّتَّةُ مُتَوَالِيَةً عَقِبَ يَوْم الْفِطْرِ، فَإِنْ فَرَّقَهَا أَوْ أَخَّرَهَا عَنْ أَوَائِل شَوَّال إِلَى أَوَاخِره حَصَلَتْ فَضِيلَة الْمُتَابَعَةُ، لِأَنَّهُ يَصْدُقُ أَنَّهُ أَتْبَعَهُ سِتًّا مِنْ شَوَّال، وَقَدْ جَاءَ هَذَا فِي حَدِيثٍ مَرْفُوعٍ فِي كِتَابِ النَّسَائِيِّ). شرح مسلم ৫৬/৮
শাওয়ালের রোযা ধারাবাহিকভাবে একসাথে রাখা জরুরি নয়, তবে ধারাবাহিকভাবে একসাথে মাসের শুরুতেই আদায় করা উত্তম বা মুস্তাহাব। একসাথে বা ভিন্ন-ভিন্ন উভয় ভাবেই আদায় করা যায়। যত দ্রুত রাখা যায় ততোই কল্যাণ। তবে দ্রুত আদায় না করলেও কোনো সমস্যা নেই। সে হিসেবে যদি মাসের মাঝখানে অথবা শেষে আদায় করে নেয়া যায় তবুও কোনো অসুবিধা হবে না।
(নুভুভী: ‘শরহে মুসলিম-৮/৫৬ )
রমযান ব্যতীত বছরের অন্য নফল রোযা:
রমযানের রোযা ফরয রোযা। রমযান ব্যতীত অন্য আরো রোযা আছে যেগুলো সুন্নত। হযরত আয়েশা সিদ্দীক্বা রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা বলেন,
مَا رَأَيْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اسْتَكْمَلَ صِيَامَ شَهْرٍ إِلَّا رَمَضَانَ، وَمَا رَأَيْتُهُ أَكْثَرَ صِيَامًا مِنْهُ فِي شَعْبَانَ
)أخرجه البخاريُّ في الصوم بابُ صومِ شعبان (١٩٦٩)، ومسلمٌ في الصيام (١١٥٦)، روى أحمد (২৬০২২) , وأبو داود (২৩৩৬) والنسائي (২১৭৫) وابن ماجه (১৬৪৮)
عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ رضي الله عنها قَالَتْ : مَا رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَامَ شَهْرَيْنِ مُتَتَابِعَيْنِ إِلا أَنَّهُ كَانَ يَصِلُ شَعْبَانَ بِرَمَضَانَ
ولفظ أبي داود : أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَمْ يَكُنْ يَصُومُ مِنْ السَّنَةِ شَهْرًا تَامًّا إِلا شَعْبَانَ يَصِلُهُ بِرَمَضَانَ ) أبي داود (২০৪৮
রমযান ব্যতীত অন্য কোন মাসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পূর্ণ মাস রোযা পালন করতে দেখিনি। আর শাবান মাস ব্যতীত অন্য মাসে অধিক পরিমাণে নফল রোযা পালন করতে দেখিনি।( বোখারি-১৯৬৯. মুসলিম-১১৫৬)
এ হাদিস শরীফগুলো দ্বারা বুঝা যায় যে, রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিক পরিমাণে নফল রোযা পালন করতেন। তিনি কি কি ধরনের নফল রোযা পালন করতেন তা নিম্নে আলোচনা করা হল:
আরাফাত দিবসের রোযা:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আরাফা দিবসের (জিলহজ মাসের নবম তারিখের) রোযা সম্পর্কে আরয করা হলে তিনি এরাশাদ করেন,
” صِيَامُ يَوْمِ عَرَفَةَ أَحْتَسِبُ عَلَى اللَّهِ أَنْ يُكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِي قَبْلَهُ وَالسَّنَةَ الَّتِي بَعْدَهُ وَصِيَامُ يَوْمِ عَاشُورَاءَ أَحْتَسِبُ عَلَى اللَّهِ أَنْ يُكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِي قَبْلَهُ ”
رواه مسلم ১১৬২.
‘আরাফা দিবসের রোযা সম্পর্কে আল্লাহর কাছে আশা করি যে, তা বিগত এক বছর ও আগত এক বছরের পাপের মার্জনা বা কাফফারা হবে। আর আশুরা দিবসের রোযা সম্পর্কে আল্লাহর কাছে আশা করি যে, তা বিগত এক বছরের পাপের মার্জনা বা কাফফারা হবে। ’ (মুসলিম-১১৬২)
তবে যারা হজ পালন অবস্থায় থাকবে তারা আরাফা দিবসে দিন রোযা রাখবে না।
মহররম মাসের রোযা:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন:
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم “ أَفْضَلُ الصِّيَامِ بَعْدَ شَهْرِ رَمَضَانَ شَهْرُ اللَّهِ الْمُحَرَّمُ وَأَفْضَلُ الصَّلاَةِ بَعْدَ الْفَرِيضَةِ صَلاَةُ اللَّيْلِ )رواه مسلم ১১৬৩ (
‘রমযান মাসের পর সবোর্ত্তম রোযা হল আল্লাহর মাস মুহাররমের রোযা। আর ফরয নামাযের পর সবোর্ত্তম নামায হল রাতের নামায।’ (মুসলিম-১১৬৩)
শাবান মাসের রোযা:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শাবান মাসে অধিক পরিমাণে নফল রোযা পালন করতেন। এর কারণ সম্পর্কে হযরত উসামা বিন যায়েদ রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন,
عن أسامةَ بنِ زيدٍ رضي الله عنه قال: قلت: يا رسولَ اللهِ! لَمْ أَرَكَ تَصُومُ شَهْرًا مِنْ الشُّهُورِ مَا تَصُومُ مِنْ شَعْبَانَ؟ قال: ذَلِكَ شَهْرٌ يَغْفُلُ النَّاسُ عَنْهُ بَيْنَ رَجَبٍ وَرَمَضَانَ، وَهُوَ شَهْرٌ تُرْفَعُ فِيهِ الأَعْمَالُ إِلَى رَبِّ الْعَالَمِينَ، فَأُحِبُّ أَنْ يُرْفَعَ عَمَلِي وَأَنَا صَائِمٌ.
أخرجه النسائي (২৩৫৮)، وأحمد (২১৭৫৩) مطولاً باختلاف يسير
আমি আরয করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! নফল রোযার ব্যাপারে আমি তো শাবান মাস ব্যতীত অন্য কোন মাসে আপনাকে এত বেশি রোযা পালন করতে দেখিনা। তিনি বললেন: ‘শাবান’ রজব ও রমযানের মধ্যবর্তী এমন একটি মাস যাতে মানুষ রোযা সম্পর্কে উদাসীন থাকে। এটি এমন মাস যাতে বান্দার আমলগুলো রাব্বুল আলামীনের দরবারে পেশ করা হয়। আর আমি চাই যে, আমার আমালগুলো আমার রোযা রাখাবাস্থায় পেশ করা হোক। (নাসায়ী-২৩৫৮, আহমদ-২১৭৩৫)
প্রতি মাসে তিন দিন রোযা রাখা:
عَنْ أَبي هُريرةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ : أَوْصَانِي خَلِيلِي صَلَّى اللهُ عَلَيهِ وَسَلَّمَ بِصِيَامِ ثَلاثَةَ أَيَامٍ مِنْ كُلِّ شَهْرٍ ، وَرَكْعَتَي الضُّحَى ، وَأَنْ أُوتِرَ قَبْلَ أَنْ أَرْقُدَ
)صحيح مسلم كِتَابُ صَلَاةِ الْمُسَافِرِينَ وَقَصْرِهَا بَابُ اسْتِحْبَابِ صَلَاةِ الضُّحَى ، وَأَنَّ أَقَلَّهَا رَكْعَتَانِ ، وَأَكْمَلَهَا ثَمَانِ حديث رقم ১২২৯(
হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে তিনটি বিষযের উপদেশ দিয়েছেন: প্রত্যেক মাসে তিন দিন (‘আইয়ামুল বিদ্ব’- চান্দ্র মাসের তেরো, চৌদ্দ ও পনেরো তারিখ।) রোযা রাখা, দ্বি-প্রহরের আগে দু’রাকাত নামায আদায় করা ও নিদ্রার আগে বিতিরের নামায আদায় করা। (বোখারি-১১২৪, মুসলিম-১২২৯)
এ তিনটি রোযা আদায় করলে পূর্ণ বছর নফল রোযা আদায়ের সওয়াব লাভের কথা এসেছে। একটি নেক আমলের সওয়াব কমপক্ষে দশগুণ দেয়া হয়। তিন দিনের রোযার সওয়াব দশগুণ করলে ত্রিশ দিন হয়। যেমন হযরত আবু কাতাদা রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত এক হাদিসে এসেছে: প্রত্যেক মাসে তিনটি রোযা ও এক রমযানের পর পরবর্তী রমযানে রোযা পালন পূর্ণ বছর রোযা পালনের সমান। (মুসলিম)
من صامَ من كُلّ شهرٍ ثلاثةَ أيّامٍ، فذلكَ صيامُ الدَهْرِ
হযরত ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুমা থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসাফির ও মুকিম কোন অবস্থাতেই এ রোযা ত্যাগ করতেন না। ( নাসায়ি)
رُوي عن النبيّ -صلّى الله عليه وسلّم-: يا أبا ذَرٍّ إذا صُمْتَ من الشهرِ ثلاثةَ أيام، فصُمْ ثلاثَ عَشْرَةَ، وأَرْبَعَ عَشْرَةَ، وخَمْسَ عَشْرَةَ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত আবু যর গিফারী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আন কে বললেন, হে আবু যর! যদি তুমি প্রতি মাসে তিনটি রোযা রাখতে চাও তাহলে ১৩,১৪,১৫ তারিখ রোযা রাখ।
সোমবার ও বৃহস্পতিবারের রোযা:
সপ্তাহে দু’দিন সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোযা পালন সুন্নত। হাদিসে এসেছে
عَنْ أَبِي قَتَادَةَ الْأَنْصَارِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سُئِلَ عَنْ صَوْمِ الِاثْنَيْنِ فَقَالَ : فِيهِ وُلِدْتُ وَفِيهِ أُنْزِلَ عَلَيَّ )رواه مسلم ১১৬২ ( .
হযরত আবু কাতাদা রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সোমবারে সিয়াম পালন সম্পর্কে আরয করা হলে তিনি এরাশাদ করেন, এ দিনে আমার জন্ম হয়েছে এবং এ দিনে আমার উপর কোরআন নাযিল শুরু হয়েছে। ( মুসলিম-১১৬২)
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : تُعْرَضُ الأَعْمَالُ يَوْمَ الِاثْنَيْنِ وَالخَمِيسِ ، فَأُحِبُّ أَنْ يُعْرَضَ عَمَلِي وَأَنَا صَائِمٌ
جامع الترمذي أبواب الصوم باب ما جاء في صوم يوم الاثنين والخميس حديث رقم ৭৩৪ “صحيح الترغيب” (১০৪১ .
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, ‘সোমবার ও বৃহস্পতিবার বান্দার আমল আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয়। কাজেই আমি পছন্দ করি যখন আমার আমল পেশ করা হবে তখন আমি রোযা অবস্থায় থাকব।’ (মুসলিম ও তিরমিযি-৭৪৭)
وعَنْ رَبِيعَةَ بْنِ الْغَازِ أَنَّهُ سَأَلَ عَائِشَةَ رَضِي اللهُ عنها عَنْ صِيَامِ رَسُول اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَتْ: “كَانَ يَتَحَرَّى صِيَامَ الِاثْنَيْنِ وَالْخَمِيسِ”
رواه ابن ماجه- كتَابُ الصِّيَامِ، بَابُ صِيَامِ يَوْمِ الاِثْنَيْنِ وَالْخَمِيسِ، حديث رقم: ১৭৩৯)رواه الترمذي (৭৪৫) والنسائي (২৩৬১) وابن ماجه (১৭৩৯)
হযরত আয়েশা সিদ্দীক্বা রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোযার রাখার বিষয়ে অধিক যত্নবান ছিলেন। (ইবনু মাযা-১৭৩৯, তিরমিযী-৭৪৫, নাসায়ী-২৩৬১)
একদিন পর পর রোযা পালন:
عَنْ عَمْرِو بْنِ أَوْسٍ الثَّقَفِيِّ ، سَمِعَ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عَمْرٍو ، قَالَ : قَالَ لِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : أَحَبُّ الصِّيَامِ إِلَى اللَّهِ صِيَامُ دَاوُدَ ، كَانَ يَصُومُ يَوْمًا وَيُفْطِرُ يَوْمًا ، وَأَحَبُّ الصَّلاَةِ إِلَى اللَّهِ صَلاَةُ دَاوُدَ ، كَانَ يَنَامُ نِصْفَ اللَّيْلِ وَيَقُومُ ثُلُثَهُ ، وَيَنَامُ سُدُسَهُ
” . رواه البخاري، كتاب: التهجد، باب: من نام عند السحر رقم (১১৩১)، ومسلم كتاب الصيام باب: النهي عن صوم الدهر رقم (১১৫৯)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, ‘আল্লাহর কাছে (নফল রোযার মধ্যে) সবচেয়ে প্রিয় রোযা হল হযরত দাউদ আলাইহিস সালামের রোযা । তিনি একদিন নফল রোযা রাখতেন ও একদিন ভঙ্গ করতেন (রাখতেন না)।’ , ‘আল্লাহর কাছে (নফল নামাযের মধ্যে) সবচেয়ে প্রিয় নামায হল হযরত দাউদ আলাইহিস সালামের নামায । তিনি প্রথমে অর্ধেক রাত ঘুমাতেন তারপর রাতের এক তৃতীয়াংশ ইবাদত করতেন এবং বাকী এক ষষ্টমাংশ ঘুমাতেন।’ ( বুখারী-১১৩১, মুসলিম-১১৫৯)
আশুরার রোযা:
عن أبي قتادة – رضي الله عنه – قال: قال رسول الله – صلى الله عليه وسلم -: وَصِيَامُ يَوْمِ عَاشُورَاءَ أَحْتَسِبُ عَلَى اللَّهِ أَنْ يُكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِي قَبْلَهُ ”
رواه مسلم ১১৬২.
হযরত আবু কাতাদা রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট আশুরার রোযা সম্পর্কে আরয করা হলে তিনি এরাশাদ করেন, আশুরা দিবসের রোযা সম্পর্কে আল্লাহর কাছে আশা করি যে, তা বিগত এক বছরের পাপের মার্জনা বা কাফফারা হবে। ’ ( মুসলিম-১১৬২ তিরমিজি)
عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ رضي الله عنه قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : صُومُوا يَوْمَ عَاشُورَاءَ ، وَخَالِفُوا فِيهِ الْيَهُودَ ، صُومُوا قَبْلَهُ يَوْمًا أَوْ بَعْدَهُ يَوْمًا). رواه أحمد (২১৫৫)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরাশাদ করেন, ‘তোমরা আশুরা দিবসে রোযা পালন করো ও এ ক্ষেত্রে ইহুদিদের বিরোধীতা করো। তোমরা আশুরার একদিন পূর্বে (নবম ও দশম তারিখে- এ পদ্ধতি অতি উত্তম।) অথবা একদিন পরে (দশম ও একাদশ দিবসে) রোযা পালন করবে। (আহমদ২১৫৫)
শুধু মহররম মাসের দশম তারিখে রোযা রাখা মাকরূহ। কারণ এটা ইহুদিদের আমলের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
রোযা রাখার নিষিদ্ধ দিনগুলো:
জিলহজ মাসের দশ, এগারো, বার, ও তেরো তারিখ এবং ঈদুল ফিতরের দিন।