হেফাজতে ইসলামকে উগ্র জঙ্গি সংগঠন ঘোষণা দিয়ে এর কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত বাংলাদেশের’ শীর্ষ ৫৫১ আলেম। তাদের মতে, রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের উচ্চাভিলাষ থেকে দেশজুড়ে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড এবং মানবিক বিয়ে বা চুক্তিভিত্তিক বিয়ের নামে জঘন্য অপরাধ ঢাকতে হেফাজতে ইসলাম প্রচলিত ইসলামের মৌলিক বিধিবিধানের ওপর হস্তক্ষেপ করছে, যাতে দেশের আলেম সমাজ লজ্জিত।
শনিবার (২৪ এপ্রিল) সকালে আহলে সুন্নাতে ওয়াল জামাআতের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এসব কথা বলা হয়েছে।
তারা সরকারের উদ্দেশে বলেন, ‘হেফাজতকে উগ্র জঙ্গি সংগঠন ঘোষণা করে নিষিদ্ধ করুন। দেশে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখুন। দেশে প্রচলিত শিক্ষানীতি, আইন এবং নীতিমালাবিরোধী কওমি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান-বোর্ডগুলোর ওপর পরিপূর্ণ সরকারি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করুন।’ এ ছাড়া দেশবাসীকে আলেম লেবাসধারী এই জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করারও আহ্বান জানিয়েছেন আহলে সুন্নাতের নেতারা।
বিবৃতিতে আহলে সুন্নাতের আলেমরা বলেন, ‘সামাজিক অনাচারে যুক্ত হওয়া, রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করা, জানমালের ক্ষতিসাধন করা ইসলাম সমর্থন করে না। এ ধরনের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তি বা সংগঠনের কাছে দেশ- মিল্লাত- মাযহাব কখনও নিরাপদ নয়। ২০১০ সালে হেফাজতের জন্মের পর থেকেই তারা সহিংসতা ছড়িয়ে দিচ্ছে। কখনও ইসলাম প্রচারক আল্লাহর ওলিদের মাজার-খানকাহ শরিফ ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে। আবার কখনও দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ সুফিবাদী জনতাকে প্রকাশ্যে হামলার হুমকি দিয়ে তারা এদেশে উগ্র জঙ্গিবাদ প্রতিষ্ঠা করতে চায়।
‘হেফাজতের সঙ্গে ইসলামের মৌলিক বিশ্বাসের দূরতম সম্পর্কও নেই। ইসলাম হেফাজতের নামে উগ্র হেফাজতিদের রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের উচ্চাভিলাষ ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে গোটা আলেম সমাজ আজ লজ্জিত হয়েছে।’
আলেমরা বিবৃতিতে বলেন, ‘ইসলামে নারী-পুরুষের বন্ধনের বৈধ পন্থা হল বিয়ে। আল্লাহ বিয়েকে হালাল করেছেন, বিপরীতে বিবাহবহির্ভূত সব অবৈধ মেলামেশা নিষিদ্ধ করেছেন। চার মাযহাবের ইমামগণসহ সমস্ত আইম্মায়ে কিরামের ঐকমত্য হল-নিকাহের বিপরীতে চুক্তিভিত্তিক সাময়িক যৌন সম্পর্ক স্থাপন করা সম্পূর্ণ হারাম ও ইসলামের দৃষ্টিতে তা শাস্তিমূলক অপরাধ।
‘বর্তমানে ইসলাম রক্ষার কথা বলে হেফাজতের কিছু চিহ্নিত দায়িত্বশীল নেতা হাজার বছর ধরে প্রচলিত ইসলামের মৌলিক বিধানের ওপর হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করছে। শরীয়তের শাশ্বত বিধান পাল্টে দিয়ে চুক্তিভিত্তিক সাময়িক বিয়ের প্রবর্তন করার দুঃসাহস দেখাচ্ছে, যা সমাজে অবাধ অনাচার, যৌনাচার ও যুবসমাজকে বিকৃত পথে চলতে উৎসাহ দেবে। ইসলাম সম্পর্কে ভুল বার্তা পৌঁছাবে। অন্যদিকে ইসলামী সামাজিক রীতিনীতি ও পরিবার প্রথা ভেঙ্গে সামাজিক অশান্তি সৃষ্টির পথ দেখাবে।’
আলেমরা আরও বলেন, ‘হেফাজতের তথাকথিত দায়িত্বশীলরা মূলত নিজের কৃত জঘন্য অপরাধ ঢাকতেই ইসলামকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। কখনও মানবিক বিয়ে বা কখনও চুক্তিভিত্তিক বিয়ের কথা বলে নিজেকে রক্ষা করতে চাইলেও সবকিছু বিবেচনা ও পর্যবেক্ষণ করে শরিয়তের ফয়সালা হল- ইসলামে চুক্তিভিত্তিক বিয়ে হারাম। সুতরাং, যে বা যারা এ ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকবে, বিবাহিত হলে প্রমাণসাপেক্ষে তাদেরকে পাথর নিক্ষেপ করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার বিষয়ে ইসলামে ফয়সালা দেয়া হয়েছে’
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন- আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান কাজী মুহাম্মদ মুঈনুদ্দীন আশরাফী ও মহাসচিব সৈয়দ মছিহুদ্দৌলাহ, সৈয়দ অছিয়র রহমান, সোলাইমান আনসারী, আব্দুল বারী জিহাদি, এম এ মান্নান, নুরুল আলম হেজাজী, কাজী আব্দুল ওয়াজেদ, এম এ মতিন, কাজী হারুনুর রশীদ, আশরাফুজ্জমান কাদেরি, স উ ম আবদুস সামাদ, মুখতার আহমদ, শাইখুল হাদিছ ড. আফজাল হোসাইন, অধ্যক্ষ আল্লামা আব্দুল আলিম রেজভী, অধ্যক্ষ ড. মাহবুবুর রহমান, অধ্যক্ষ আল্লামা মুফতি আহমদ হোসাইন কাদেরী, আবুল কাশেম ফজলুল হক, লিয়াকত আলী, ছাদেকুর রহমান হাশেমী, জুলফিকার আলী চৌধুরী, আবু বকর ছিদ্দিকী, আব্দুল মতিন, খোরশিদ আলম, আব্দুর রহিম কাদেরী, ইসমাইল নোমানী, গোলাম মুস্তফা, আব্দুল আজিজ আনোয়ারী, আলী আকবর রেজভি, মহিউদ্দীন হাশেমী, বদিউল আলম রেজভি, শোয়াইব রেজা, খলিলুর রহমান নিজামী, মুহাম্মদ ইদ্রিস, মুশতাক আহমদ, ছালেকুর রহমান কাদেরী, আবুল কালাম আমিরী, খলিলুর রহমান, আবুল আসাদ মুহাম্মদ জুবাইর রজভি, শাহ নুর মুহাম্মদ আল কাদেরী, জসিম উদ্দীন আজাহারি, মুহাম্মদ উল্লাহ, অধ্যক্ষ মুফতি আবদুল আওয়াল কাদেরী, আলাউদ্দিন আল কাদেরী, গোলাম মুস্তফা মুহাম্মদ নুরুন্নবী, মুহাম্মদ আনিসুজ্জামান, জালাল উদ্দীন কাদেরি, মাহমুদুল হাসান, জামেউল আখতার আশরাফী, জসিম উদ্দীন কাদেরী, মুহাম্মদ সরওয়ার উদ্দীন, আনোয়ার হোসাইন, জালাল উদ্দীন আজহারী, মুহাম্মাদ আব্দুল হালিম, মুহাম্মদ নাসির উদ্দীন, মুহাম্মদ সাইফুল আলম, মুহাম্মদ হাফিজুর রহমান, শাহজালাল আহমদ আখঞ্জি, সোলাইমান খান রব্বানী, বদিউজ্জমান হামদানী, মুনিরুজ্জমান কাদেরী, আমিনুর রহমান, হাফেজ আহমদ আল কাদেরী, সিরাজ উদ্দীন কাদেরী, আলাউদ্দিন, ইউনুছ রেজভি, আবুল হাসান মুহাম্মদ ওমাইর রজভি, সেকান্দর হোসাইন আল কাদেরী, আহমদুল্লাহ ফোরকান খান কাদেরী, শাহাদাৎ হোসাইন, ইকবাল হোসাইন কাদেরীসহ আহলে সুন্নাতের বিভিন্ন পদে থাকা ৫৫১ জন শীর্ষ আলেম।