চট্টপ্রাম প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত ২৫তম আ’লা হজরত কনফারেন্সে বক্তারা
আ’লা হজরত ইমাম আহমদ রেজা খান ফাজেল বেরলভি রহমাতুল্লাহি আলাইহি শুধু একজন আলেম তথা ইসলামি শিক্ষায় পন্ডিত ছিলেন না, ছিলেন একাধারে দার্শনিক, বিজ্ঞানী, ইতিহাসবিদ, ভুগোলবিদ, তার্কিক ও ইসলামি আইনবিদ। কুরআন, হাদিস, ফিকহ তথা ইসলামী আইন শাস্ত্রের উপর তার অগাধ পান্ডিত্য বিস্ময়কর। আ’লা হজরতের সৃজনশীল সৃষ্টির বিস্তৃতি ঘটেছে, তার হাদায়েকে বখশিশ নামক কাব্য গ্রন্থটি। ইশকে রাসুলের এক অনবদ্য প্রকাশ এ কাব্যের সুর ও মূর্চ্ছনা আশেকে রাসুলদের প্রাণে নবউদ্দীপনা সৃষ্টি করে। ইসলামের এমন কোন দিক নেই যা আলা হজরতের রচনাবলি স্থান পায়নি।
ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে সুন্নি মুসলমানদের অংশগ্রহণে উজ্জীবীত করেছিলেন আলা হজরত। তার সমকালীন শীষ্য ইমাম নঈমিুদ্দিন মুরাদীবাদীর নেতৃত্বে বেনারসে তিনদিনব্যাপী আহলে সুন্নাত ওয়াল জমাআতের কনভেনশনের মাধ্যমে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলেনের প্রত্যক্ষ কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। এর আগে আল্লামা ফজলুল হক খায়রাবাদী, বাদায়ুনীর নেতৃত্বে ভারতীয মুসলমানরা ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে আন্দোলন জোরদার করেছিলেন। ড. আল্লামা ইকবাল ছিলেন আলা হজরতের একজন একনিষ্ঠ অনুগামী। আলা হজরত ব্রিটিশ বিচরোধী আন্দোলন, খিলাফত আন্দোলনের পক্ষে থাকলেও এ আন্দোলনের নানা বিভ্রান্তি কর্মসুচি নিয়েও তিনি একাধিক গ্রন্থ রচনা করেন।
এককথায় আলা হজরতের বহুমূখী জ্ঞান-সাধনার লিখনী তত্ত্ব ও বক্তব্যগুলো বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে হবে। এ জন্য ব্যাপক গবেষণা ও আলোচনার প্রয়োজন। বিশ্বের আশিটি দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁকে নিয়ে গবেষণা হচ্ছে, বাংলাদেশের সাধারণের কাছে আ’লা হজরতের লিখনী সমগ্র ও তাঁর পূণ্যময় জীবন-কর্ম বাংলায় সহজবোধ্য করে তুলে ধরা সময়ের দাবি।
(২৪ সেপ্টেম্বর) শনিবার বিকেলে নগরীর চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব বঙ্গবন্ধু হলে আ’লা হজরত কনফারেন্সে আমন্ত্রিত দেশি-বিদেশি বক্তারা এ কথাগুলো বলেন।
আ’লা হজরত ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যক্ষ আল্লামা বদিউল আলম রিজভীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কনফারেন্সে প্রধান অতিথি ছিলেন আনজুমান রিসার্চ সেন্টারের মহাপরিচালক, আ’লা হজরত গবেষক আল্লামা এম. এ. মান্নান। প্রধান আলোচক ছিলেন আহলে সুন্নাত ওয়াল জমা’আত বাংলাদেশ’র চেয়ারম্যান, শায়খুল হাদীস আল্লামা কাজী মুঈনুদ্দিন আশরাফী। বিশেষ অতিথি ছিলেন, ভারতের রাজস্থান থেকে আগত আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ইসলামিক স্কলার আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ কাদেরী, মুসলিম স্টুডেন্ট অর্গানেইজেশন অব ইন্ডিয়ার চেযারম্যান মাওলানা মুহাম্মদ মুদাসসির রিজভী আশরাফি, আনজুমানে রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, ফিনেন্স সেক্রেটারি এনামুল হক বাচ্চু, জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলীয়ার সাবেক অধ্যক্ষ আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ অসিয়র রহমান আল কাদেরী, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের নব-নির্বাচিত মহাসচিব অধ্যক্ষ স.উ.ম আব্দুস সামাদ প্রমুখ।
মুহাম্মদ এরশাদ খতিবী ও মাওলানা জহির উদ্দিন তুহিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত ও শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন আলা হজরত ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক আবু নাসের মুহাম্মদ তৈয়্যব আলী।
এতে বক্তব্য রাখেন আহলে সুন্নাত ওয়াল জমা’আত বাংলাদেশ চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি আল্লামা নুর মোহাম্মদ আরকাদেরী, সংবর্ধিত অতিথি আল্লামা হাফেজ আনিসুজ্জমান, মাওলানা নিজাম উদ্দিন, বেতাগী দরবার শরীফের সাজ্জাদানশীন আল্লামা গোলামুর রহমান আশরফ শাহ, অধ্যাপক সৈয়দ জালাল উদ্দিন আল আজহারী, অধ্যাপক রিদওয়ান আশরাফি, মাওলানা ছগির আহমদ, ইঞ্জিনিয়ার আবদুল হান্নান চৌধুরী, কলেজিয়েট স্কুল এন্ড কলেজের সিনিয়র শিক্ষক মাওলানা মুনিরুল হাসান, ডায়মন্ড সিমেন্ট এর ডিজিএম আবদুর রহিম, সৈয়দ আবু আজম, মাস্টার আবুল হোসাইন, মানবাধিকার সংগঠক মোহাম্মদ নুরুদ্দিন, গাউসিয়া কমিটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাহবুবুল হক খান, মহানগর সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আবদুল্লাহ, সাংগঠনিক সম্পাদক মনিরুদ্দিন সোহেল, দক্ষিণ জেলার মোজাফফর আহমদ, মাওলানা ইউনুস তৈয়বী, মাওলানা ইকবাল হোসাইন আলকাদেরী, শেখ আরিফুর রহমান, মাওলানা কফিল উদ্দিন, সৈয়দ মুহাম্মদ হোসাইন, ইতিহাস গবেষক, সোহেল মোহাম্মদ ফখরুদ্দিন, সাবেক ছাত্র নেতা ইমরান হোসেন তুষার, ইয়েমেন ইউনিভার্সিটির ছাত্র মুহিব উল্লাহ সিদ্দিকী, ক্যান্টনম্যান্ট পাবলিক কলেজের ছাত্র মোহাম্মদ ইয়াসির বিন তালেব আবরার, মাওলানা আনিসুর রহমান রিজভী, আবদুল্লাহ আল নোমান, ইব্রাহিম কুতুবী প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে আ’লা হজরতের কাব্য গ্রন্থ হাদায়েকে বখশিশের বাংলা অনুবাদ এবং আলা হজরতের কর্মময় জীবনের উপর মৌলিক গ্রন্থ রচনার জন্য মাওলানা হাফেজ মুহাম্মদ আনিসুজ্জামান ও মাওলানা মুহাম্মদ নেজাম উদ্দিনকে গুণীজন সম্মাননা প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে কনফারেন্স উপলক্ষে স্মারক আল-মোখতার ২৪তম সংখ্যার মোড়ক উন্মোচন করা হয়।