শহীদ আল্লামা নূরুল ইসলাম ফারুকী (রহ.) ছিলেন সুন্নীয়তের পতাকাবাহী
ড. মাওলানা এ কে এম মাহবুবুর রহমান
শহীদ ফারুকী একটি নাম নয়, একটি ইতিহাস, একটি চেতনা, একটি বজ্রনিনাদ, বাতিলের আতঙ্ক, সত্যের অতন্দ্র প্রহরী, আপোষহীন মুজাহিদ, প্রেমের নবীর সত্যিকারের প্রেমিক, সাহাবায়ে কেরাম রেদওয়ানুল্লাহে তায়ালা আজমাঈনের তা’জীম ও সম্মান প্রদর্শনে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র, আহলে বাইতে রাসূলের প্রতি ভক্তি ও শ্রদ্ধায় জান-মাল উৎসর্গকারী, ওলী-আউলিয়ার শান ও মান উচ্চকিত করার ক্ষেত্রে অনন্য ব্যক্তিত্ব, সরদারে জান্নাত, শহীদে কারবালা ইমাম হোসাইন আলাইহিস সালামের মত সদা বিজয়ী, চির অম্লান। এজিদের প্রেতাত্মারূপী নব্য এজিদদের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ লড়াইয়ে বীর উত্তম, বীর প্রতীক, বীর বিক্রম। যার তুলনা তিনি নিজেই যার কথা লিখতে গেলে কাঁদে লেখক, কাঁদে লেখা, কাঁদে খোদ কলম। হযরত শাহজালাল, খান জাহান, মাহী সওয়ার, শাহ সুলতান রূমী, শাহ মখদুম, শাহ মিরান, শাহ আলী বাগদাদী, শরফুদ্দীন চিশতী রাহেমাহুমুল্লাহুমসহ হাজারো ওলীর দেশ বাংলাদেশের ঈমান-আকীদা সংরক্ষণে, মিডিয়া সন্ত্রাসীদের বদ আকীদার দাঁতভাঙ্গা জবাব দানে, কারবালার চেতনা উজ্জীবনে সর্ব শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রাণের স্পন্দন। বাংলার ইতিহাসে সত্যের জন্য বহু শহীদ শাহাদাতের নজরানা পেশ করেছেন ঠিক, কিন্তু শহীদ ফারুকীর শাহাদাতে যত চোখের পানি ঝরেছে বোধ হয় এরূপ কারো বেলায় ঘটেনি।
শহীদ আল্লামা ফারুকী রহমাতুল্লাহে আলাইহি’কে কেন শহীদ করা হল?
আল্লামা ফারুকী রহমাতুল্লাহে আলাইহির গোটা জীবনের মিশন ছিল-
১) ইশকে মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উন্মেষ সাধন।
২) মহব্বতে আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম মন মানসিকতায় জাগরুক করা।
৩) তা’জীমে সাহাবা রেদওয়ানুল্লাহে তায়ালা আলাইহিম আজমাঈনের সংরক্ষণ।
৪) শানে আউলিয়া ও সোহবতে ওলীর তাৎপর্য ও গুরুত্ব তুলে ধরা।
নব্য এজিদের অনুসারীরা যা সহ্য করতে পারেনি, তাইতো তারা এ কন্ঠকে স্তব্ধ করে দিতে এ নৃশংস লোমহর্ষক কাণ্ড ঘটিয়েছে।
রাসূলপ্রেমে ফারুকী প্রিয় নবীর শান-মানে আঘাত হানা, তাঁর সু উচ্চ শানে গোস্তাখীর জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রের স্বরূপ উন্মোচন করে দয়াল নবীর শান-মানকে কুরআন-সুন্নাহ- ইজমা কেয়াস ও যুক্তি দিয়ে জনগণের কাছে উপস্থাপন করেছেন অত্যন্ত খোলামেলাভাবে। টেলিভিশনের আলোচনায়, ওয়াজ মাহফিলে, হজ্ব কাফেলায়, মিলাদ মাহফিলে, বিভিন্ন সংগঠন-সংস্থার ফোরামে কোথাও তিনি চুপ থাকেননি। তিনি অত্যন্ত স্পষ্ট ভাষায় বলতেন আমার নবী নূর, যারা মাটির নবী বলে তারা রাসূলের শানে আঘাতকারী, তাঁর শান হেয় করছে। তাই তারা গোস্তাখে রাসূল।
মহান আল্লাহ নিজেই ঘোষণা করেছেন- “নিশ্চিত যে তোমাদের কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে নূর এবং সুস্পষ্ট কিতাব।” তিনি বলতেন প্রিয় রাসূল মানুষ ছিলেন কিন্তু আমাদের মতো নন। যারা আমার নবীকে বড় ভাইয়ের মতো বা আমাদের মতো মানুষ মনে করেন তারা রাসূলের শানে বেয়াদবী করে। তিনি বলতেন যারা “বলুন আমি তোমাদের সদৃশ বাশার” এ আয়াত এনে প্রিয় নবীকে সাধারণ মানুষের কাতারে নিয়ে আনে তারা দয়াল নবীর শানকে খাটো করছে। কারণ প্রিয় নবী নিজেই বলেছেন, অর্থাৎ- তোমাদের কে আছ আমার মতো? [সহিহ বুখারী]
আল্লাহ তায়ালা যেখানে পুরো কুরআন মজীদে নবীজীর নাম ধরে ডাকেননি। ত্বহা, ইয়াসিন, মুয্যাম্মিল, মুদ্দাস্সির, রাহামতুলি্লল আলামীন, সিরাজুম মুনীর, বাশীর, নাজীর, ইত্যাদি গুণবাচক নামে ডেকেছেন। তিনি বলতেন প্রিয় নবীজীকে ভক্তি ভরে সালাম দেয়ার মাধ্যম মিলাদ- কেয়াম। দীর্ঘকাল ধরে লাখ লাখ হক্কানী আলেম মিলাদ-কেয়াম করেছেন, যারা আজকে ওহাবী আকিদার ধারক- বাহক হয়ে মিলাদ-কেয়াম পালনকারীদের বেদআতী, মুশরেক, আবু লাহাবী ইত্যাদি গালী দিচ্ছে, তাদের তীব্র প্রতিবাদ করেন শহীদ ফারুকী।
যারা মিলাদ-কেয়াম পালনকারীদের বেদআতী ফতোয়া দিচ্ছেন তারা আল্লামা সুবকী, আল্লামা সাখাবী, আল্লামা সূয়ূতী, আল্লামা নববী, আল্লামা ইবনু হাজার আসকালানী, আল্লামা আল্লামা আইনী, আল্লামা আবদুল হক মোহাদ্দিস দেহলবী, ইমামে আহলে সুন্নাত আল্লামা আহমদ রেযা খান ব্রেলভী, আল্লামা সাইয়্যেদ আহমদ ব্রেলভী, আল্লামা এমদাদুল্লাহ মোহাজিরে মক্কী, আল্লামা কারামত আলী জৌনপুরী, আল্লামা নূর মোহাম্মদ নিযামপুরী, আল্লামা সুফী ফতেহ আলী ওয়াইসী, আল্লামা আবু বকর ফুরফুরী, আল্লামা নেছার উদ্দিন ছারছীনী, আল্লামা তৈয়ব শাহ কাদেরী, আল্লামা ছাহেব কেবলা ফুলতলী, আল্লামা মুফতী সাইয়্যেদ আমীমুল ইহসান মোজাদ্দেদী বারাকাতী, আল্লামা ইউসুফ রেফায়ী সহ গোটা বিশ্বের লাখ লাখ পীর-মাশায়েখ, আলেম-ওলামাদের জাহান্নামী বলার ধৃষ্ঠতা দেখাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে শহীদ ফারুকী রহমাতুল্লাহে আলাইহি ছিলেন আপোষহীন। সঠিক আকিদার পক্ষে বলিষ্ঠ ভূমিকার কারণেই তাকে জীবন দিতে হল। যারা আহলে বাইতে রাসূলকে সম্মান করে না, যারা শোহাদায়ে কারবালাকে শ্রদ্ধার চোখে দেখে না, কারবালার
নির্মম-লোমহর্ষক ঘটনায় যাদের চোখে পানি আসেনা তারা অভিশপ্ত এজিদের উত্তরসূরী। অথচ প্রিয় নবী এরশাদ করেন- “নিশ্চয়ই হাসান-হোসাইন জান্নাতের যুবকদের সরদার”। (সুনানে তিরমিজী-৫/৬৬০)
যারা এজিদকে নির্দোষ প্রমাণ করার চেষ্টা করে তাদের সাথে কোন মু’মিনের সম্পর্ক থাকতে পারেনা।
শহীদ আল্লামা ফারুকী রহমাতুল্লাহে আলাইহি মাঠে -ময়দানে, মিডিয়ায় এ সকল বিষয়ের জ্বালাময়ী আলোচনায় নব্য এজিদরা টিকতে না পেরে তাকে কারবালার আদলে জবাই করে নিজেদের ঘৃণ্য ও পাশবিক চরিত্রের জানোয়ারে পরিণত করেছে।
যারা কোন বাছ-বিচার ছাড়াই ওলী- আউলিয়াগণকে মুশরেক মনে করে, তরীকতের কাজকে শেরক মনে করে তাদের বিরুদ্ধে শহীদ ফারুকী ছিলেন জোরালো প্রতিবাদী কন্ঠ। ওলীগণের শানে আঘাতকারী বেআদবদের প্রতিহত করাই ছিল তার মিশন। তিনি বলতেন, যাদের উছিলায় আমরা আজ মুসলমান, যারা আমাদের টুপি পরিয়েছেন, দাড়ী রাখা,মুসলমানী লেবাস-পোষাক উপহার দিয়েছেন, যাদের অবদানে মসজিদ, মাদ্রাসা, খানকা, যাদের অবদানে ৯০ ভাগ মুসলমান এদেশে; তাদের বিরুদ্ধে যারা বিদেশী ইন্ধনে বেআদবীমূলক কথা বলছেন তারা দীনের দুশমন। তাদের এসকল অপতৎপরতার বিরুদ্ধে শহীদ ফারুকী সিপাহ-সালারের ভূমিকা পালন করেন। সাথে সাথে ভন্ডপীর, স্বার্থান্বেষী, ভোগবাদী, শরীয়ত বিরোধী কর্মকান্ডে লিপ্ত নামধারী পীরদের বিরুদ্ধেও তার অবস্থান ছিল অত্যন্ত সুদৃঢ়। তার এ যুগান্তকারী ভূমিকা নবী-ওলীর দুশমনরা সহ্য করতে পারেনি। তাই তারা এজিদের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে নিজেদেরকে জাহান্নামে পৌঁছিয়েছে। আর শাহাদাতের অমীয় সুধা পান করে তিনি হয়েছেন চির বিজয়ী। স্মৃতির পাতায় শহীদ ফারুকী (রঃ)
২০০১ সন। ফারুকী ভাইয়ের সাথে হজ্বে গমন ছিল একটি রূহানী সফর। প্রথমে আমি এবং আমার মোরশেদে বরহক শাহছুফি সাইয়্যেদ কমরুদ্দিন আহমদ রহমাতুল্লাহে আলাইহি মদীনা তাইয়্যেবায় পৌঁছলাম। ফারুকী ভাই আমাদেরকে নিয়ে রওজা মোবারকের পার্শ্বস্থ রওজাতুম মিন রিয়াজিল জান্নাহতে হাজির হলেন। হঠাৎ দেখলাম তিনি সতুনে তওবা ধরে অঝোর নয়নে কাঁদছেন আর বলছেন- “হে আল্লাহ ! আমার কাফেলায় যারা এসেছেন তোমার হাবীব যেন তাদের প্রতি দয়ার নজর দান করেন।” আমরা তার সাথে মুনাজাতে শরীক হলাম। মদীনা তাইয়্যেবায় যতগুলো স্থানের সাথে প্রিয় নবী ও আহলে বাইতের পবিত্র স্মৃতি জড়িত সকল স্থানে তাকে রাসূলপ্রেমে অশ্রু ঝরাতে দেখেছি। তার দরুদ, সালাম, মিলাদ মাহফিল সব কিছুই ছিল সত্যিকারের আশেকে রাসূলের নমূনা।
তেজগাঁও রহমতে আলম ইসলামী মিশন কর্তৃক পরিচালিত মদীনাতুল উলুম মহিলা কামিল মাদ্রাসায় আমি মুহাদ্দিস পরবর্তীতে উপাধ্যক্ষ হই। আল্লামা ফারুকী ছিলেন এ মাদ্রাসার আরবী প্রভাষক। শিক্ষক কমনরূমে তার হাসির গল্প, সবার সাথে আন্তরিকতা এবং ক্লাস পরিচালনার দক্ষতা ছিল অসাধারণ। তার উপস্থাপনা এমন ছিল যে, ইসলামের ইতিহাসের যে অধ্যায় তিনি আলোচনা করতেন মনে হতো ইতিহাসের ঐ স্থানে গোটা ক্লাস নিয়ে গেছেন। এটা ছিল তার বিশেষ যোগ্যতা। বন্ধু-বান্ধবদের প্রতিও তার সম্মানবোধ ছিল অনুপম। ফরিদগঞ্জ শহর থেকে একটু দূরে অজপাড়া গাঁয়ে তাকে দাওয়াত দিলাম যেখানে গাড়ি যায়না। রিকশায় বা হেঁটে যেতে হয়। তিনি মূল রাস্তায় গাড়ি রেখে আমার সঙ্গে হেটে যাচ্ছিলেন আর বলছিলেন “মাহবুব ভাই ! এত কষ্ট করে হেঁটে গিয়ে ওয়াজ করার কোনো প্রয়োজন ছিলনা। শুধু আপনার বন্ধুত্বের খাতিরে হেঁটেই মাহফিলে যাচ্ছি।
আপনি বলুন, কঠিন হাশরের ময়দানে আল্লাহর কাঠগড়ায় যদি আটকে যাই এই হাঁটার কারণে আল্লাহ কি আমাকে মাফ করবেন? আমি জবাব দিলাম “আল্লাহ তায়ালা এই ধরনের কোরবানীকেই নাজাতের উছিলা বানাবেন।” যতগুলো মাহফিলে তিনি আমার মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে গিয়েছেন কোথাও হাদিয়া নির্ধারণ করে যাননি। যখন যা হাদিয়া দেয়া হয়েছে তিনি তাই গ্রহণ করেছেন। আহলুস্ সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকীদাভূক্ত পীর-মাশায়েখ ও আলেমগণকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য তার প্রচেষ্টা ছিল অবিরত। দীর্ঘ ১০ বছর এ আহ্বান জানিয়ে বহুবার বৈঠক করেও যখন একটি প্লাটফর্মে আনতে পারলেনা একদিন দুঃখ করে বললেন ভাই কি পথ আছে যে বারবার বিভিন্ন দরবার ও আলেমগণকে ডাকা যায়। আমার পরামর্শে তিনি প্রতিষ্ঠা করলেন ‘ইসলামী মিডিয়া জনকল্যাণ সংস্থা’।
যার মাধ্যমে নির্বাহী পরিষদ ও উপদেষ্টা পরিষদ মিলে সমগ্র দেশের খ্যাতনামা দরবার ও ব্যক্তিত্বদের সমাবেশ ঘটলো। কয়েকটি প্রোগ্রাম করলেন অত্যন্ত জাঁকজমকভাবে। আহ্বান জানালেন একটি চ্যানেল প্রতিষ্ঠার। এ বিষয়ে বহু সম্মেলনে খোলামেলা আলোচনাও করলেন। এ মিডিয়া কল্যাণ সংস্থার রেজিষ্ট্রেশনের জন্য তিনি যে কষ্ট স্বীকার করেছেন তা সত্যিই স্মরণীয়। তার রেখে যাওয়া এ আমানতকে রক্ষা করা বর্তমানে খুবই জরুরি। তিনি ছিলেন নির্ভীক, আপোষহীন। সহি আকীদার যে কোন লোক ছিল তার অতি আপনজন। কোনো আলেমকে সামান্যতম বাতিলের সাথে আপোষ করেছেন দেখলে সাথে সাথে তিনি প্রতিবাদ জানাতেন। ফারুকী ভাই দলীল ভিত্তিক আলোচনার জন্য ব্যাপক লেখাপড়া করতেন। একবার তিনি আল্লামা শিনকীতি রহমাতুল্লাহে আলাইহির লেখা কিতাব মদীনা তাইয়্যেবা থেকে ছাপানো ‘আদ দুররুস সামীন ফি মা’আলীমে দারুর রাসূল আল আমীন’ গ্রন্থের এবারত পড়লেন। আমি বললাম, এ কিতাব কবে মোতালায়া করলেন? জবাবে বললেন, ভাই এ কিতাবখানা বহুবার আমি খতম করেছি। আরেকদিন তিনি কাশফুল মাহজুবের
রেফারেন্স দিলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম এ কিতাবতো ফার্সীতে লিখিত। কিভাবে এ কিতাব বুঝলেন? জবাবে বললেন এর উর্দূ তরজমা পড়ে পড়ে আমি কিতাবখানা হজম করেছি। তার কাফেলা অনুষ্ঠান তৈরি করা, রেকর্ডগুলো ঠিক করা ছিল বিস্ময়কর। যতগুলো স্থান তিনি সমগ্র বিশ্বের আশেকদের দেখিয়েছেন সবগুলোর সঠিক ইতিহাস সংগ্রহ করতে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। মাঝে মাঝে কোনো কোনো বিষয় সঠিক কিনা যাচাই করার জন্য আমাকে জিজ্ঞেস করতেন। এটা ছিল তার উদারতা ও জ্ঞান অন্বেষণের চেতনা।
ফারুকী ভাই যখন মিলাদ-মাহফিল পরিচালনা করতেন তার দু’চোখ বেয়ে অশ্র গড়িয়ে পড়তো। তিনিসহ বহু আল্লাহর ওলীর মাজার যেয়ারতের সুযোগ হয়েছে। তিনি ওলীগণের প্রতি যে ভক্তি-শ্রদ্ধা-সম্মান দেখাতেন তা ছিল অনন্য সাধারণ। কোনো মাজারে শরীয়ত বিরোধী কাজ দেখলে সাথে সাথে প্রতিবাদ করতেন। ভন্ড-শরীয়ত বিবর্জিত দরবারের বিরুদ্ধে তার প্রতিবাদী কণ্ঠ ছিল উচ্চকিত। আল্লাহর খাঁটি বন্ধুদের তিনি অত্যন্ত সম্মান করতেন। ২০০১ সালে হজ্ব সফরে আমার মোর্শেদ কেবলাসহ আরাফার ময়দানে জাবালে রহমতের সাদা স্তম্ভের পাশে দোয়া হবে। ফারুকী ভাই হুজুরকে বললেন, “হুজুর আজকে আপনি আমাকে খাছ দোয়া করতে হবে। হুজুর বললেন কি দোয়া করব? ফারুকী ভাই বললেন, বাবাজী ! আমি এবং আমার পরিবার যেন রাসূলপ্রেম নিয়ে থাকতে পারি এবং রাসূল প্রেমে জীবন উৎসর্গ করতে পারি।”
হুজুর কেবলা তার জন্য প্রাণ খুলে দোয়া করলেন। ফারুকী ভাই ছাহেব কেবলা ফুলতলী রহমাতুল্লাহে আলাইহকে প্রাণ দিয়ে ভালবাসতেন। কয়েকবার শুনেছি তিনি বলেছেন, ছাহেব কেবলার দিকে তাকালে নূর দেখি। ছারছীনা দরবারের সুন্নাতের পাবন্দি বহু মাহফিলে তিনি তুলে ধরেছেন। হযরত তৈয়্যব শাহ রহমাতুল্লাহে আলাইহি এবং তাহের শাহ মুদ্দা জিল্লুহুল আলিয়ার প্রশংসা ও সুন্নীয়তের খেদমতকে অত্যন্ত বলিষ্ঠভাবে উপস্থাপন করেছেন। বাংলাদেশ সহ বিশ্বের সকল হক্কানী দরবার ও ব্যক্তিত্বের সাথে তার সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত সুদৃঢ়। সবার কাছে তিনি ছিলেন আপনজন। কাফেলা অনুষ্ঠান, সত্যের সন্ধানে, রমজানুল মোবারক, মাই টিভির তাফসীর, বিভিন্ন উপলক্ষে তার উপস্থাপনা, আলোচনা ও প্রশ্নোত্তর দানের ভঙ্গি ও মার্জিত ভাষা, হাসি মুখের বচন কোটি কোটি নবী-ওলী প্রেমিকের মনকে জয় করে নিয়েছে।
বাংলাদেশের কোন নেতা, পীর- মাশায়েখ বা আলেমের মৃত্যুতে সর্বস্তরের নবীপ্রেমিদের এত চোখের পানি ঝরেছে বলে জানা নেই। লাখ লাখ মহিলা তার মর্মান্তিক শাহাদাতে অঝোর নয়নে কেঁদেছে। কারবালার ময়দানে হযরত ইমাম হোসাইন ও আহলে বাইতে রাসূল আলাইহিমুস সালামের নৃশংস শাহাদাতে বিশ্ববাসীর সাথে কেঁদেছে আকাশ কেঁদেছে চন্দ্র-সূর্য।
একজন সত্যিকারের হোসাইনী কাফেলার সৈনিক কারবালার সিপাহ সালারের মতই জবাই হলেন। এতে নবী-ওলীর দুশমনরা এজিদের মতই পরাজিত হয়েছে। লাখ ফারুকী তৈরি হচ্ছে তার রক্তের কণায় কণায়।
আল্লাহ তাকে কারবালার শহীদদের সাথে শামিল করুন। আমীন।
লেখক : যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন। অধ্যক্ষ, ফরিদগঞ্জ মজিদিয়া কামিল মাদরাসা, ফরিদগঞ্জ, চাঁদপুর।