যিলকদ ও যিলকদ মাসের বৈশিষ্ট্য
যিলকদঃ
যিলকদ মাস হলাে আশহুরুল হুরুম তথা সম্মানিত চার মাসের অন্যতম মাস। সম্মানিত মাস হলাে চারটি, তন্মধ্যে একটি রজব যা পৃথক। বাকী তিনটি হলাে ধারাবাহিক। আর তা হলাে যিলকদ, যিলহজ ও মহররম।
আবার যিলকদ মাস হলাে হজ্বের মাস। হজ্বের মাস হলাে তিনটি। যথা: শাওয়াল, যিলকদ ও যিলহজ্ব। যিলকদ মাসকে জাহেলী যুগেও সম্মান করা হতাে।কেননা এ মাসে হাজীগণ হজ্বের উদ্দেশ্যে মক্কায় রওয়ানা হতেন। এ সময় সম্মানিত মাস হওয়ার কারণে শত্রুর আক্রমণের ভয় থেকে নিরাপদে যাতায়াত করতে পারতাে।
আর যিলকদ শব্দের অর্থ হলাে উপবেষ্টনকারী। এ মাসকে এ নামে নামকরণের কারণ হলাে এ মাসে জাহেলী যুগেও লােকেরা যুদ্ধ-বিগ্রহ থেকে বসে (বিরত) থাকত। যিলহজ্ব মাসকে হজ্বের কারণে, মহররম মাসকে হজ্ব থেকে ফেরার কারণে আর রজব মাসকে উমরার কারণে সম্মানিত মাসের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। (লাতায়েফুল মা’আরিফ)
যিলকদ মাসের বৈশিষ্ট্যঃ
নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমস্ত উমরা যিলকদ মাসে সম্পাদন করেছিলেন। শুধু বিদায় হজ্বের
সময় হজ্বের সাথে যে উমরা করেছিলেন তা ব্যতীত। তবে এর ইহরামও বেঁধে ছিলেন যিলকদ মাসে।
ইবনে ওমর ও আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, যিলকদ ও শাওয়াল মাসের উমরা রমযান মাসের উমরার চেয়ে উত্তম। কেননা, নবী করিম যিলকদ মাসে উমরা করেছিলেন। (লাতায়েফুল মা’আরিফ)
এই মাসের ফযিলত সম্পর্কে কেউ কেউ বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা হযরত মুসা (আ.) থেকে ওয়াদা নিয়েছিলেন ত্রিশ রাতের এবং তা পূর্ণ করেছেন আরাে দশ দিনের মাধ্যমে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক বলেন- وواعدنا موسى ثلاثين ليلة وأتممنا ها بعشر “আমি মুসা থেকে ওয়াদা নিয়েছিলাম ত্রিশ রাতের আর তা পূর্ণ করেছি আরাে দশ দিনের মাধ্যমে।” (সূরা- আরাফ)
এখানে ত্রিশ রাত বা দিন দ্বারা উদ্দেশ্য হলাে যিলকদ মাসের ত্রিশ দিন আর দশ দিন দ্বারা উদ্দেশ্য হলাে যিলহজ্ব মাসের প্রথম দশদিন। (লাতায়েফুল মা’আরিফ)
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে যে, আল্লাহ তায়ালা হযরত মুসা (আ.) কে তাওরাত কিতাব প্রদানের জন্য শর্তারােপ করলেন যে, ত্রিশ রাত্রি তুর পর্বতে এতেকাফ থেকে আল্লাহর আরাধনায় অতিবাহিত করতে হবে। তাফসীরে কুরতুবীতে বলা হয়েছে যে, মুসা (আ.) এই ত্রিশ দিন এতেকাফের সাথে রােযা রেখেছিলেন। মাঝে তিনি কোন ইফতার করেননি।
ত্রিশ রােযার পর মিসওয়াক করে তিনি তুর পর্বতের নির্দিষ্ট স্থানে গিয়ে হাযির হলে আল্লাহর পক্ষ থেকে বলা হলাে- রােযাদারের মুখ থেকে যে সুগন্ধি বের হয় তা আল্লাহর কাছে অতি পছন্দনীয়, কিন্তু তুমি তা মিসওয়াক করে দূর করে দিয়েছ। কাজেই আরাে দশদিন রােযা রেখে মুখের সে বিশেষ সুগন্ধি সৃষ্টি করে এসাে।
অতএব তিনি আরাে দশদিন রােযা রেখে মােট চল্লিশ দিন পূর্ণ করে তুর পর্বতের নিদ্দিষ্ট স্থানে গিয়ে তাওরাত কিতাব লাভ করেন।