যাকাত বিধান
মুহাম্মদ আবদুল করিম
ইসলামের মৌলিক পঞ্চভিত্তির একটি হলো যাকাত। নামায, রোযা ও হজের ন্যায় এটিও একটি ফরয ইবাদত। নির্ধারিত নিসাবের মালিক ধনী মুসলমানদের উপর এর বিধান সম্পূর্ণরূপে আরোপিত। না আছে এর অস্বীকৃতি। না অবহেলা। বছর শেষে শরিয়‘ত কর্তৃক নির্ণীত হিসেবে সম্পদের নির্ধারিত অংশ গরিব মুসলিমকে প্রদান করতে হয়। ধনী কর্তৃক এ প্রদানে কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি ব্যতীত থাকবে না কোনো বিনিময় গ্রহণের চিন্তা এবং উপকার অর্জনের মানসিকতা।
যাকাত মানে সমৃদ্ধি, ক্রমবৃদ্ধি ও পবিত্রতা। যাকাত আদায়ের মাধ্যমে ব্যক্তির অবশিষ্ট সম্পদ পবিত্র হয়ে যায়। আসমানি রবকত এসে সমৃদ্ধ করে। আর পরকালীন পাথেয় হিসেবে ক্রমবৃদ্ধি হতে শুরু করে। পবিত্র কুরআন-হাদিসে ভূরিভূরি যাকাত প্রদানের গুরুত্ব এবং অনাদায়ের ভয়াবহ পরিণামের বর্ণনা এসেছে। কুরআন মজিদ বত্রিশ জায়গায় যাকাতের আলোচনা করেছে। তন্মধ্যে আটশ জায়গায় নামায এবং যাকাতের সমন্বিত আলোচনার মাধ্যমে বিত্তবানদের চিত্তাকর্ষণ করা হয়েছে। কারণ শারীরিক ইবাদতের মধ্যে যেমন নামায শ্রেষ্ঠ তেমনি আর্থিক ইবাদতের মধ্য শ্রেষ্ঠ হলো যাকাত।
যাকাতের এ বিধান কেবল স্বাধীন, প্রাপ্তবয়স্ক ও সম্পদশালী মুসলমানদের উপর ফরয। সম্পদের উপর যাকাত ফরয হওয়ার জন্য প্রথমত সম্পদের মালিকানা সুনির্দিষ্ট ও পূর্ণাঙ্গ হওয়া জরুরী। দ্বিতীয়ত সম্পদ অবশ্য বর্ধনশীল বা প্রবৃদ্ধমান হতে হবে। এ ক্ষেত্রে বৃদ্ধি পাওয়ার যোগ্যতা থাকাই যথেষ্ট, বৃদ্ধি পাওয়া জরুরী নয়। তৃতীয়ত নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকা আবশ্যক। নিসাব হলো-প্রয়োজনীয় ব্যয় বাদ দিয়ে সাড়ে বায়ান্ন তোলা (ভরি) রৌপ্য বা সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ অথবা স্বর্ণরৌপ্যের সমমূল্যের সম্পদের মালিক হওয়া। অথবা উভয়টি মিলে সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ কিংবা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপার মূল্যের সমান বা সব সম্পদ মিলে উভয়টি থেকে যে কোনো একটির নিসাবের সমান হলে যাকাত দিতে হবে। মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে গরিবের জন্য যা অধিকতর লাভজনক, তার মূল্য ধরতে হবে। চতুর্থত নিসাব পরিমাণ সম্পদ পূর্ণ একবছর মালিকানায় থাকতে হবে। [জামে‘উস সগির, মাবসূত, কানযুদ দাক্বাইক, দুররূল মুখতার, হেদায়া, রদ্দুল মোহতার, মুখতাসারুল কুদূরি, নুরুল ঈদ্বাহ সহ ফিহকের বিভিন্ন গ্রন্থের যাকাত অধ্যায়।]
আসমানি বিস্ময় মহাগ্রন্থ আল-কুরআনে মহান রাব্বুল আলামিন যাকাত প্রদানের আটটি খাত নির্ধারণ করে দিয়েছেন। ইরশাদ হচ্ছে, যাকাত কো এসব লোকেরই জন্য, যারা অভাবগ্রস্ত, নিতান্ত নিঃস্ব, যারা তা সংগ্রহ করে আনে, যাদের অন্তরসমূহকে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করা হয়, ক্রীতদাস মুক্তির ক্ষেত্রে, ঋণগ্রস্তদের জন্য, আল্লাহর পথে এবং মুসাফিরদের জন্য। এটা আল্লাহর নির্ধারিত বিধান। আর আল্লাহ পাক সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। [আল-কুরআন, সুরা তাওবা, আয়াত : ৬০।] আয়াতের আলোকে যাকাত বণ্টনের আটটি খাত হলো-১. ফকির (যার নিতান্ত সামান্য পাথেয় আছে), ২. মিসকিন (যার কিছুই নেই), ৩. যাকাত সংগ্রহের কার্যে নিয়োজিত ব্যক্তি (তার পারিশ্রমিক অনুযায়ী), ৪. দ্বীন ইসলামের প্রতি চিত্তাকর্ষণে কোনো অমুসলিম কিংবা ইসলামে অটল রাখার্থে নও মুসলিম, ৫. দাসদাসীর মুক্তি, ৬. ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির ঋণমুক্তি, ৭. একান্ত ও শরিয়‘ত সম্মত আল্লাহর পথে যুদ্ধের ক্ষেত্রে এবং ৮. রিক্তহস্ত মুসাফির।