প্রবন্ধ

চিন্তার জগতে কুরআন (পর্বঃ১)

মুহাম্মদ আব্দুল আলিম

•কুরআনের অতি-সুক্ষ্ম বৈশিষ্ট্য যা মানব রচিত ধারণাকে নাকোচ করে।

[আল্লাহ বলেন,”তবে কি এরা কুরআন নিয়ে মনোনিবেশ সহকারে চিন্তা করে না? না কি তাদের অন্তর তালাবদ্ধ রয়েছে?” (সূরা মুহাম্মদ- ৪৭ঃ২৪)]

 

চিন্তার জগতে ঢুকার আগে দু’টো জিনিস প্রথমে জানিয়ে রাখি।

 

এক. বক্তার সম্মোধনের একটি প্রকৃতি বা রুলস আছে। সেটা হলো শ্রোতার আধিক্যতা এবং অবস্থা অনুযায়ী বক্তা সম্মোধন করে। ধরেন, আপনি কোথাও বক্তৃতা দিতে গেলেন। সেখানে নানান দল-উপদলের (মুমিন,বিভিন্ন মতাদর্শী কাফের) লোকজন এসেছে, সেখানে কি আপনি শ্রোতাদের সম্মোধন করার সময় শুধু একটি দলকে সম্মোধন করবেন, নাকি সবাইকে? অবশ্যই সবাইকে একসাথে সম্মোধন করবেন। আবার ধরেন, সেখানে একটি দল(মুসলিম) বেশি আসল, অন্যান্য দল(কাফের) গুটিকয়েক। তাহলে কিভাবে সম্মোধন করবেন? অবশ্যই বেশিরভাগই বড় দলের (মুসলমানকে) সম্মোধন করবেন। এবং মাঝেমধ্যে সবাইকেও করবেন। এটাই সম্মোধনের রুলস। আর এই রুলসের বিপরীতে বেখাপ্পা দেখায়, বক্তার অদক্ষতার প্রমাণ দেয়।

 

দুই. আমরা মক্কার ইতিহাস থেকে জানতে পারি যে, রাসূলের যুগে মক্কায় ১০,০০০ লোকের আবাসস্থল ছিলো। তারমধ্যে অল্পসংখ্যক মুমিন(৩০০-৪০০+) ব্যতিত অধিকাংশই কাফের (মূর্তিপূজারী, ইহুদি, নাসারা, মুনাফেক) ছিলো। অর্থাৎ রাসূল হেদায়েতের বাণী যাদের শুনাতেন তাদের (শ্রোতাদের) অধিকাংশই মুশরিক। অন্যদিকে মদিনায় মক্কার বিপরীত ছিলো। মুমিনদের সংখ্যা মুশরিকদের চেয়ে বেশি ছিলো। অর্থাৎ শ্রোতাদের মধ্যে অধিকাংশই মুমিন ছিলো।

 

প্রসঙ্গে আসা যাক। আল্লাহ কুরআনের মাধ্যমে মানব জাতিকে হেদায়েতের বাণী শুনানোর জন্য ৩ ভাবে সম্মোধন করেছেন।
এক. “ইয়া আইয়্যুহান নাস”-হে মানবজাতি।
দুই. ” ইয়া আইয়্যুহাল লাযিনা আমানু”-হে ঈমানদারগণ। তিন. “ইয়া আহলাল কিতাব”-হে আহলে কিতাবগণ।

 

• কুরআনে ‘ইয়া আইয়্যুহান নাস’ বলে ২০ বার সম্মোধন করেছে। ১০ বার মাক্কী সূরাতে(রাসূলের মাক্কী জীবন সংশ্লিষ সূরা); ১০ বার মাদানী সূরাতে(মাদানী জীবন সংশ্লিষ্ট সূরা)। ‘ইয়া আহলাল কিতাব’ ৫ বার এসেছে। ৪ বার মাক্কী সূরাতে, ১ বার মাদানী সূরাতে। ‘ইয়া আইয়্যুহাল লাযিনা আমানু’ ৮৯ বার এসেছে। প্রতিবারই মাদানী সূরাতে এসেছে, একবারও মাক্কী সূরাতে আসেনি।

 

• সূক্ষ্মতাঃ
মক্কাতে এবং মদিনাতে মুমিন,ইহুদি,নাসারা,মূর্তিপূজারী সবাই ছিলো। তাই সম্মোধনার্থে ‘ইয়া আইয়্যুহান নাস’ এবং ‘ইয়া আহলাল কিতাব’ শব্দদ্বয় উভয় স্থানে ব্যবহার হয়েছে। আর মক্কাতে যেহেতু মুমিন কম,কাফের শ্রোতা অধিকতর বেশি তাই একবারও ‘ইয়া আইয়্যুহাল লাযিনা আমানু’ একবারও মক্কায় অবতীর্ণ হয়নি। সব মদিনায় এসেছে। অপরদিকে মদিনায় যেহেতু কাফের এর সংখ্যা কম,মুমিন বেশি। তাই মদিনাতেই ‘ইয়া আইয়্যুহাল লাযিনা আমানু’ শব্দটিই ব্যবহার হয়েছে, ‘নাস’,’কিতাব’ কম ব্যবহার হয়েছে।

 

খেয়াল করেছেন কিনা জানিনা। একটা কিতাবে কতটা নৈপুণ্যতা অবলম্বন করলে পরে সম্মোধনের ব্যাপারে এতটা সূক্ষ্ম কৌশল অবলম্বন করা যায়। যা কুরআনের মানব রচিত ধারণাকে নাকোচ্ করে। কারণ কোনো মানবের পক্ষে এতটা সূক্ষ্মদর্শী হয়ে কিতাব রচনা করা অসম্ভব। তাও মূর্খদের মাঝে! কোনো মানবের পক্ষে এসবকিছু মেইনটেইন করা সম্ভবপর হতো না, নড়বড় করে ফেলতো।