ইতিকাফ প্রভুভক্তির অনন্য নিদর্শন
সাইফুল ইসলাম চৌধুরী
ঈমানদারদের সৌভাগ্যের পূর্ণচন্দ্র আস্তে আস্তে হেলে পরছে। মুমিন হৃদে প্রাণোচ্ছল ইবাদতের ভরা মৌসুম মাহে রমজান শেষ হয়ে যাচ্ছে। রহমতের দশক শেষ হয়ে মাগফিরাতেরও যবনিকালগ্নে মাহে রমজান। এ লগ্নে অসংখ্য মুমিন মুসলমান প্রস্তুতি নিচ্ছেন, দুনিয়ার মোহনিদ্রা ত্যাগ করে আল্লাহ সন্তুষ্টি অর্জনের প্রয়াসে মসজিদের কোনে অবস্থান নেবার। আল্লাহর জিকির, নবী (সাঃ)-এর দরুদ, ইবাদাত বান্দেগীর মাধ্যমে খোদাভীতি ও রসুলপ্রীতির সমন্বয় ঘটানোর মোক্ষম সময় মাহে রমজানের শেষাংশে (নাজাত) তথা ইতিকাফ।
ইবাদতের ভরা বসন্ত মাহে রমজানের বিশেষ অংশ পবিত্র ইতিকাফ। মহাগ্রন্থ আল কুরআনের সুরা বাকারার এরশাদ হচ্ছে “এবং আমি ইবরাহিম ও ইসমাঈলকে আদেশ করলাম তোমরা আমার গৃহকে তাওয়াফকারী, ইতেকাফকারী ও রুকু-সিজদাকারীদের জন্য পবিত্র করো।” প্রকৃতপক্ষে মোহমুক্তির অন্যতম উপায় হচ্ছে নিজেকে পাপ থেকে দূরে রাখা। আর ইতিকাফ হচ্ছে পাপ-পঙ্কিলতা হতে দূরে থাকার পরীক্ষিত মাধ্যম। ইতিকাফে বান্দাহ দুনিয়ার সব মোহ-মায়া ত্যাগ করে একাগ্রচিত্তে মহান আল্লাহর মহানুভবতার সান্নিধ্যে চলে যায়। ইবনে মাজাহ শরীফের বর্ণনা মতে ইতিকাফকারী গুনাহ্ থেকে বিরত থাকে এবং নেক আমল দ্বারা এতো অধিক পরিমাণে পুণ্য হাসিল করে যেন সে সকল নেক আমল সম্পন্ন করলো। সুবহানাল্লাহ। অপর এক হাদিসে শান্তিদূত প্রিয় নবী (সাঃ) ইরশাদ করেন, আমি (প্রথমে) এ রাতের সন্ধানে প্রথম দশে ইতিকাফ পালন করি। হাদিসে এ রাত বলতে লাইলাতুলকদরকে বুঝানো হয়েছে। অতঃপর ইতিকাফ পালন করি মাঝের দশে। পরবর্তীতে ওহির মাধ্যমে আমাকে জানানো হয় যে, এ রাত শেষ দশে রয়েছে। সুতরাং তোমাদের মাঝে যে (এ দশে) ইতিকাফ পালনে আগ্রহী, সে যেন তা পালন করে। লোকেরা তার সাথে ইতিকাফ পালন করল। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ রাষ্ট্রপ্রধান প্রিয় নবী (সাঃ) বলেন, আমাকে তা এক বেজোড় রাতে দেখানো হয়েছে এবং দেখানো হয়েছে যে, আমি সে ভোরে কাদা ও মাটিতে সেজদা দিচ্ছি। অতঃপর রসুলে পাক (সাঃ) একুশের রাতের ভোর যাপন করলেন, ফজর পর্যন্ত তিনি কিয়ামুল্লাইল করেছিলেন। তিনি ফজর আদায়ের জন্য দণ্ডায়মান হয়েছিলেন। তখন আকাশ থেকে বৃষ্টি নেমে এল, এবং মসজিদে চুঁইয়ে চুঁইয়ে পানি পড়ল। আমি কাদা ও পানি দেখতে পেলাম। ফজর সালাত শেষে যখন তিনি বের হলেন, তখন তার কপাল ও নাকের পাশে ছিল পানি ও কাদা। সেটি ছিল একুশের রাত। উম্মুল মুমিনীন আম্মাজান আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, “রাসূলে পাক (সাঃ) মাহে রমজানের শেষ দশদিন ইতিকাফ করতেন।” উল্লেখিত হাদিসের আলোকে এটাই স্পষ্ট হয় যে, ইতিকাফ একটি উত্তম ইবাদত। এর বদৌলতে গুনাহ্ থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি সার্বক্ষণিক আল্লাহর ইবাদতে নিয়োজিত থাকার সৌভাগ্য নসীব হয় এবং দুনিয়ায় থেকে দুনিয়াবিমুখ জীবন যাপনের একটি সুবর্ণ সুযোগ সৃষ্টি হয়। ইতিকাফের সাথে পরিচিত হওয়া যাক।
ইতিকাফ শুদ্ধ হওয়ার জন্য মুসলমান বিবেক সম্পন্ন এবং নারীর ক্ষেত্রে হায়েস ও নেফাস থেকে মুক্ত হওয়া বাঞ্চনীয়। ইতিকাফের জন্য জুমা মসজিদ শর্ত নয়। যে কোন মসজিদে ইতিকাফ যায়েয। ইতিকাফ অবস্থায় বিনা অযুহাতে মসজিদ থেকে এবং মহিলাদের বেলায় নির্ধারিত কামরা থেকে বের হওয়া সম্পূর্ণ রূপে হারাম।
অন্য কোন কারণে, যেমন পানাহারের জন্য, এমনকি জানাযার নামাজের জন্যও ইতিকাফকারী বের হওয়া যায়েজ নেই। ইতিকাফ অবস্থায় স্ত্রীকে স্পর্শ করা চরমভাবে নিষিদ্ধ। সহবাসের কারণে ইতিকাফ নষ্ট হয়ে যায়। ইতিকাফকারী যেন একেবারে চুপচাপ না থাকে এবং দুনিয়াবী কথাবার্তাও না বলে, বরং ইতিকাফ অবস্থায় কোরআন তিলাওয়াত, ধর্মীয় কিতাব, নবী ওলীর জীবনী পাঠ করাই শ্রেয়।
আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত আমাদেরকে রমজানের পরিপূর্ণ হাকিকত অনুধাবনের পাশাপাশি ইতিকাফকারী সৌভাগ্যবানদের কল্যাণে হাজার মাসের চেয়ে দামী রজনী ‘লাইলাতুল ক্বদরথ নসীব করুন। সারাবিশ্বের কোটি কোটি নবীপ্রেমিক রোজাদার মুনিন মুসলমানের উসিনায় এ বিশ্বকে মহামারি করোনা ভাইরাস থেকে আল্লাহ মুক্তি দান করুন। আমিন।