প্রবন্ধ

আদর্শ প্রচারে তথ্য প্রযুক্তির ভূমিকা ও আমাদের করণীয়

আদর্শ প্রচারে তথ্য প্রযুক্তির ভূমিকা  আমাদের করণীয়

আদর্শ-

আদর্শ হলো যা অনুসরণীয়, অনুকরণীয়। অনুসরণ ও অনুকরণ যোগ্য। আর এজন্যই কোন ঐশী শক্তিবিহীন মানুষ বা মানুষের আদর্শ অনুসরণ বা অনুকরণযোগ্য নয়। কারণ ঐশী শক্তি বিহীন মানুষ ভুলের উর্দ্ধে নয় বা পরিপূর্ণ নয়। আর ভুল ত্রুটি বিচ্যুতি-দোষ যেহেতু পরিত্যাজ্য সেহেতু নিছক কোন মানুষের মতবাদ ও গ্রহণযোগ্য নয়, মঙ্গলের ও নয়, পরিপূর্ণ ও নয়।

এ কারণেই মানব গড়া মতবাদ ব্যর্থ হতে বাধ্য। এজন্য একের পর এক সে মানব গড়া দর্শন ব্যর্থ হয়েছে, মানব সমাজ সেগুলো ছুঁড়ে ফেলেছে। দুনিয়ার সকল মানুষ কে তার চলার পথের সঠিক দিক নির্দেশনা দিতে পারে এমন আদর্শ যা ত্রুটিমুক্ত, সর্বকালে সর্বাবস্থায় সব মানুষের জন্য প্রযোজ্য ও কল্যাণকর, তা হচ্ছে মহানবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র আদর্শ। একমাত্র রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র আদর্শেই রয়েছে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, সাদা- কালো, নর- নারী নির্বিশেষে সকল মানুষের মানবিক চাহিদা বাস্তবায়নের সঠিক রূপলেখা।

মহানবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আদর্শ বাস্তবায়ন করে আল্লাহ ও তাঁর প্রিয় হাবীব মহানবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র সন্তুষ্টি অর্জনই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। অথচ এ আদর্শের লেবেলেও আজ বিভ্রান্তির অন্ত নেই। এক কোরআন, আল্লাহ ও তার রাসূলের পথে আহ্বানকারীরা বিভক্তি হয়েছে নানা দল-উপদলে।

ফলে সাধারণ মুসলমান নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র আদর্শের রূপরেখা সন্ধানে প্রতিনিয়ত হিমশিম খাচ্ছে। তাই সত্য সন্ধানীদের সঠিক দিক নির্দেশের মহান উদ্দেশ্যই আমরা কোন মতাদর্শে বিশ্বাসী তা স্পষ্ট করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। যা অন্যান্য ইসলামী সংগঠনের দাবিদারদের নিকট অনুপস্থিত, অন্যান্য ইসলমী সংগঠন গুলো বিভিন্ন ভ্রান্ত মতবাদের অনুসারী হলেও নিজের সঠিক পরিচয় গোপন করার সুবিধার্থে তারা ইসলামের কোন রূপরেখা বা মতবাদে বিশ্বাসী তা উল্লেখ করে না।

“আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত” ই- ইসলামের একমাত্র সত্যি কার রূপরেখা। এটাই একমাত্র আল্লাহ প্রদত্ত ও রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র বিধানানুসূত সঠিক পথ ও মত। অথচ এ সত্য অন্যান্য ইসলামী সংগঠন গুলোর ঘোষনাপত্র বা গঠনতন্ত্রে স্থান পায়নি। আর আপামর ছাত্র সমাজ তথা জনগণকে প্রতারণা মুক্ত করতেই “বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনা ” সুস্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে যে, তারা সুন্নী মতাদর্শের আলোকেই মানব জীবনে মহানবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র সু-মহান আদর্শ বাস্তবায়ন করতে চাই।

তথ্য প্রযুক্তি-

তথ্য প্রযুক্তি মানুষের জীবনে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে এসেছে যা আজ থেকে বেশকিছু দিন পূর্বে ও চিন্তা করা হয়নি। আজ খুব সহজে তা চিন্তা করা যাচ্ছে এবং বাস্তবে ও সম্ভব হচ্ছে। আমরা অনেকেই মনে করেছিলাম বিজ্ঞানের জ্ঞান ইসলাম বিরোধী। বাস্তবতা হচ্ছে বিজ্ঞানের ইলম ইসলাম বিরোধী নয়। আমরা পার্থিব জগতের জ্ঞাননের যে কোন বিষয়ই গ্রহণ করি না কেন তা জ্যোতিষ বিজ্ঞান হোক, নভোমণ্ডল ও ভূমন্ডল সম্পৃক্ত জ্ঞান হউক।

বস্তুতঃ ঐ জ্ঞান সৃষ্টির বাস্তবতা ও মূল দর্শনের সাথে সম্পৃক্ত। ইসলামী শিক্ষা নীতির কথা আমারা প্রায়শই বলি, অনেকে আবার ইসলামী শিক্ষানীতি বলতে কোরআনের অনুবাদ মনে করে। ইসলামী শিক্ষানীতির উদ্দেশ্য শুধুমাত্র এটা নয় যে, আমরা কোরআনের অনুবাদ ছাড়া কিছুই পড়বো না! যখনই আমরা শব্দ ও অর্থ সহ কোরআন পাঠ করবো এবং যেসব বিষয়াদি আলোচনা কোরআনে আসবে ঐ সবের বাস্তবতা ও প্রকৃতি কে জানার জন্য আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞান যখন আমরা অনুসন্ধান করবো তখনিই আমাদের জ্ঞানের প্রতিটি বিষয় ইসলমী জ্ঞান হিসাবে পরিগনিত হবে, ততক্ষণ পযর্ন্ত আমাদের জ্ঞানের উৎস আল- কোরআন হবে।

আদর্শ প্রচারে তথ্য প্রযুক্তি-

আদর্শ প্রচারে তথ্য প্রযুক্তির গুরুত্ব লিখে শেষ করা সম্ভব নয়। তবে এক কথায় বলা যায় যে বর্তমান সময়ে প্রযুক্তির সহায়তা ছাড়া ইসলামের মূল দর্শন, আদর্শ প্রচার সম্ভব না, আমাদের সুন্নী মতাদর্শের হাজার হাজার বই বাংলাদেশের হাজার হাজার লাইব্রেরীতে সংরক্ষিত আছে। কিন্তু দুঃখ জনক হলেও সত্য যে আমরা গুগল সার্চ করলে কয়টা বই আমাদের পড়ার সুযোগ হবে। বাংলা অনুবাদের হোক কিংবা ইংলিশ ভার্সনের হোক, আমি দাবি করছি না যে, তার অর্থ আমাদের অবস্থান পিছে পড়ে গেছে।

আমাদের আদর্শ প্রচারের আরো ও হাজার মাধ্যম আছে যা প্রযুক্তির ই অবদান। নিজের মাইন্ডে সর্ব প্রথম একটা বিষয় সেট আপ করতে হবে, তা হলো আমরা যে দর্শনের রাজনীতি করি, এটিই ইসলামের মূল দর্শন, আমরা যে আদর্শের কথা বলি, এটিই সর্বোত্তম আদর্শ, যেহেতু আমাদের আদর্শ সঠিক সেহেতু প্রযুক্তির যত জগৎ আছে, সব জগতে আমাদের পদচারণা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। ব্লগে ইসলাম বিদ্বেষী অনেক মন্তব্য আছে, পক্ষান্তরে আমাদের অনেক ভাইয়েরা তার দাঁতভাঙা জবাবও দেন। কিন্তু নিজেদের আদর্শ প্রচারে বর্তমান সময়ে ব্লগ হচ্ছে প্রযুক্তির অন্যতম জগৎ।

১| ফেসবুক ব্যবহার করে না বর্তমান সময়ে এমন মানুষ খুব কমই আছে। ফেসবুক ও আমাদের আদর্শ প্রচারের একটি মাধ্যম হিসাবে ব্যবহার করতে পারি। যদি আমরা সে ভাবে নিজেদের আইডিকে সাজায়। যেমন দৈনিক বা সাপ্তাহিক সংগঠনের আদর্শ, লক্ষ্য, উদ্দেশ্য নিয়ে বর্তমান অবস্থান, ভবিষ্যত পরিকল্পনা এবং সিনিয়র নেতৃত্ববৃন্দের ও কেন্দ্রীয় পেইজের স্ট্যাটাস শেয়ার করলে আমাদের অনেক অপরিচিত ভাইয়েরা বা ভিন্ন মতাদর্শের ভাইয়েরা দেখবে পড়বে। হেদায়েতের মালিক আল্লাহ।

কিন্তু দুঃখের বিষয় ফেসবুককে আমরা করে ফেলেছি ফেতনার স্থান। যে মানুষটি “ছাত্রসেনা” নামটি শুনে নাই সে প্রযুক্তির সহায়তায় সেনাকে নিয়ে গবেষণা করার সুযোগ ফেল। বাংলাদেশের যারা নেট ব্যবহার করে, তাদের প্রায়ই ফেইসবুক ব্যবহার করে। এটি একটি জনপ্রিয় সাইট, ছাত্রসেনার বিভিন্ন স্তরের হাজার হাজার কর্মীদের ফেসবুক আইডি আছে । আইডি যেমন বেড়েছে তেমন আমাদের ভুলেরও কমতি নেই, সংক্ষেপে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের উদ্দেশ্যে বলবো নিজেদের নূন্যতম একটি আইডি সাংগঠনিক ভাবে সাজান, যেখানে “political View” – র মাধ্যমে আপনি যে ছাত্রসেনা করেন তা স্পষ্ট করে লেখা থাকবে। দৈনিক সংগঠনের আপডেট কেন্দ্রীয় ও জেলার কর্মসূচি, সমসাময়িক ইস্যুতে দলীয় অবস্থান,আক্বীদা সংক্রান্ত তথ্য যুক্তি সহকারে ঐ আইডিতে থাকবে। এভাবে যদি আমরা আমাদের আইডি চালাতে পারি, তাহলে ফেইসবুক ও আমাদের আদর্শ প্রচারের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে সহায়ক হবে। ইনশাআল্লাহ

২| ওয়েবসাইট হচ্ছে একটি সংগঠনের আদর্শ প্রচারের প্রযুক্তির অন্যতম আবিষ্কার। যে কোন দল বা দর্শনের আইডিয়া খুব সহজে পাওয়া যায়, যদি ওয়েবসাইট থাকে। বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনার ৪১’বছর ইতিহাসে যা অর্জন, যা প্রচার হয়েছে তার বিশাল একটি অবদান ওয়েবসাইট, মাইকে পাবলিসিটি কিংবা স্থানীয় পত্রিকায় বিজ্ঞানের মাধ্যমে যে কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয় তা কেবলমাত্র নির্দিষ্ট একটি এরিয়াতে শুনা যায়। আর ওয়েবসাইটের মাধ্যমে একটি কর্মসূচি ঘোষণা, কর্মসূচির সচিত্র প্রতিবেদন সারা বিশ্ব জানে ও দেখে। ওয়েবসাইট নিজেদের আদর্শ প্রচারের গুরুত্বপূর্ণ একটি মাধ্যম।

৩| আদর্শ প্রচারে ই-মেইল ও আর একটি গুরুত্বপূর্ণ সাইট। বিশ্বের যে কোন সাইটে, যে কোন মাপের ব্যক্তিকে নিজেদের আদর্শের কথা উল্লেখ করে দাওয়াত দেওয়া যায়, যদিও বা এমন চর্চা আমাদের মধ্যে নেই। তারপর ও সাম্প্রতিক সময়ে সাংগঠনিক নোটিশ, কর্মসূচি ইত্যাদি প্রেরণে যথেষ্ট পরিমাণ ই-মেইল ব্যবহার হচ্ছে।

আমাদের করণীয়-

আমাদের করণীয় অনেক কিছু। তবে আমি মনেকরি এই মুহূর্তে আমাদের প্রধান করণীয় হল নিজদের মধ্যে সাংগঠনিক মনমানসিকতা সৃষ্টি করা, যদি তা সৃষ্টি হয়ে যায় তাহলে প্রযুক্তির যা যা সুযোগ সুবিধা সবকিছু সাংগঠনিক ভাবে কাজে লাগানো যাবে।

ওয়েবসাইট কে আরো ও তথ্যযুক্ত আপডেট করতে সর্বপ্রথম আমাদের সচেতন হওয়া জরুরী। আমরা যতবেশি সচেতন হবো ওয়েবসাইট ও ততবেশি আপডেট হবে। লাখ টাকা খরচ করে প্রোগ্রাম করতে পারি কিন্তু ১০ মিনিট সময় নিয়ে নেটে বসে প্রোগ্রামের নিউজটি ওয়েবসাইটের জন্য মেইল করতে পারলাম না। এই সব আমাদের অবহেলা।

সারা রাত বন্ধু বান্ধবীদের সাথে চেট করতে পারি কিন্তু কাল যে সংগঠনের বিশাল প্রোগ্রাম তা প্রচার করলাম না। এই সব অবহেলা একজন দায়িত্বশীল’র কাছে থাকা মানায় না। সংগঠনকে সংগঠনের আদর্শ কে প্রযুক্তি মুখি করতে সর্বস্তরের দায়িত্ব শীলের ভূমিকা রাখা জরুরী।

নিজ আদর্শ কে যদি প্রযুক্তির মাধ্যমে বিশ্বের দরবারে উপস্থাপন করা সম্ভব না হয়, তাহলে আমাদের অবস্থা যথারীতি পেছনের সারিতে থাকবে। আমরা যে আদর্শ প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করি, সে আদর্শ কে আল্লাহ সর্বোত্তম আদর্শ বলেছেন। সুতরাং আমাদের মনে কোন দুর্বলতা নেই। সত্যের জয় একদিন হবেই ইনশাআল্লাহ।

পরিশেষে সকল কর্মী ভাইদের প্রযুক্তিমুখী হয়ে সংগঠনের আদর্শ প্রচারে এগিয়ে আসার উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।

সাহিত্য  সাংস্কৃতিক সম্পাদক,
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনা কেন্দ্রীয় পরিষদ।