ধর্ম

কুরআন ও সংবিধান অবমাননার বিচার চাই | Senani News

সাইফুল ইসলাম চৌধুরী

সরকারি ভাষ্যমতে বিশ্ব সভায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য নজির বাংলাদেশ। সাংবিধানিকভাবে বাংলাদেশ ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র হলেও এদেশের মোট জনসংখ্যার ৯০.৪ শতাংশ মুসলমান। সন্দেহাতীতভাবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। মুসলমানদের ধর্মীয় গ্রন্থ আল-কুরআন মানব রচিত নিছক কোন বই নয়; বরং এটি মহান আল্লাহ প্রদত্ত পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান। যেটার সাথে বিশ্ব-মুসলিমের আবেগ-অনুভূতি, ভালোবাসা মিশে আছে। মুসলিম হৃদয়ের সর্বোচ্চ সম্মানের পাত্র মহান আল্লাহর কালাম। আমাদের বুকে-মুখে, অন্তরে ও শিরে কুরআনের বাস। কুরআন-সুন্নাহ আমাদের অন্তরাত্মা। নির্ভুল জ্ঞানের সামগ্রিক খনি হলো কুরআন শরীফ। যা মুসলমানরা যেমন বিশ্বাস করে, ঠিক একইভাবে ভিন্ন ধর্মাবলম্বী গবেষকরাও স্বীকার করেছে। সর্বযুগে সর্বাধুনিক গ্রন্থের নাম আল-কুরআন। সৃষ্টির শুরু-শেষ সবকিছুর ব্যাখ্যা সমেত বর্ণনা রয়েছে পবিত্র কুরআনে। কুরআন ঘোর তিমিরে আলোর মিনার। যে কুরআন আমাদের হৃদ মাজারে সমুজ্জল, সে কুরআনকে কেউ অসম্মান, অমর্যাদা, অবমাননা করলে বিশ্ব মুসলিমের অন্তরে আগুন জ্বলবে, এটাই স্বাভাবিক।

সংখ্যাগরিষ্ঠতার দিক দিয়ে এদেশে মুসলমানের পরে হিন্দু সম্প্রদায়ের অবস্থান। শারদীয় দুর্গাপূজা হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। ১১ই অক্টোবর থেকে শুরু হয়েছে দুর্গোৎসব। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের বাংলাদেশে নির্ভয়ে দেশব্যাপী ৩২ হাজার ১১৮ টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা পালন করছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। কোন মুসলিম তাদের পূজা মণ্ডপে হামলা করেনি। করার প্রশ্নই আসে না। তাদের ধর্মকে কটাক্ষ করেনি। শান্তির ধর্ম ইসলামের অনুপম আদর্শ হলো কোন ধর্মের প্রতি অবৈধ হস্তক্ষেপ না করা। ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি না করা। ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের অন্যায়ভাবে কষ্ট না দেওয়া। মুসলমানরা যখন শান্তির বাণী প্রতিষ্ঠায় ব্যস্ত, অন্যদিকে ধর্মের প্রতি বিদ্বেষপ্রসূত একটি দল ধর্মীয় উগ্রতাকে উস্কে দিতে উঠেপড়ে লেগেছে।

কুমিল্লা জেলার নানুয়া দীঘির পাড় দুর্গাপূজার মণ্ডপে মূর্তির পায়ের উপর পবিত্র কুরআন শরীফ রেখে অবমাননা মূলত মুসলমানদের অন্তরে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়ার নামান্তর। তারা শুধু পবিত্র কুরআনকে অবমাননা করেনি; অবমাননা করেছে তাদের ধর্মকেও। কারণ, ধার্মিক মানুষ মাত্রই সহনশীল। তারা শুধু কুরআন অবমাননা করেনি; বরং দেশের সংবিধানকে অবমাননা করেছে। ধর্মীয় স্বাধীনতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। সংবিধানের স্বার্থকতা ও রাষ্ট্রের অনন্য অর্জন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করেছে। আমরা পবিত্র কুরআন অবমাননার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। প্রতিবাদ জানাচ্ছি সংবিধান অবমাননার। আমরা আশংকা করছি এ ঘটনার মিলনস্থল সুদূরপ্রসারী। এটা ধর্ম ও দেশের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রের পূর্বাভাস। উগ্রবাদীদের লাগাম এখনই টেনে না ধরলে ধর্মীয় দাঙ্গা মাথা ছাড়া দিয়ে উঠবে। তাই ঘটনার সাথে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করে ষড়যন্ত্রের মূলোৎপাটনপূর্বক কুরআন অবমাননা ও রাষ্ট্রদ্রোহিতার আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।

লেখক: প্রাবন্ধিক ও সংগঠক
খতিব, গাউসিয়া উসমান চৌধুরী জামে মসজিদ, চট্টগ্রাম