পবিত্র লাইলাতুল কদরের ফযিলত ও পালনীয় আমল
মাওলানা আবুল আসাদ মুহাম্মদ জোবাইর রজভী
পবিত্র কুরআনুল কারীম ও হাদীস শরীফে পবিত্র লাইলাতুল কদরের অনেক ফজিলত বর্ণিত আছে। কদরের রজনী হাজার মাসের চেয়েও অনেক উত্তম। লাইলাতুল কদর পবিত্র রমজান মাসের শেষ দশকের বেজোড় পাঁচটি রাতের যে কোনো একটি রাতে নিহিত রয়েছে। তাই সেই পাঁচ রাতে লাইলাতুল কদর তালাশ করার জন্য প্রিয় নবীজি নির্দেশ দিয়েছেন।
আমরা পবিত্র রমজান মাসের ২৭ রাতে বেশি তালাশ করি:
কেননা অধিকাংশ বুযুর্গানে দ্বীনের বর্ণনায় পাওয়া যায় যে, তারা ২৭ রজনীতে লাইলাতুল কদর পেয়েছেন এবং কোরআন শরীফে ‘লাইলাতুল কদর’ শব্দটি ৩ বার এসেছে, ‘লাইলাতুল কদর’ শব্দটিতে ৯ টি অক্ষর রয়েছে আর এই ৯ অক্ষরকে ৩ দ্বারা গুণ করলে ২৭ হয়। এটাও ২৭ রজনীর দিকে ইঙ্গিত করছে। আবার সুরাতুল কদরের শুরু থেকে ১০ পর্যন্ত ২৭ টি শব্দ রয়েছে, ইহাও ২৭ রজনীর দিকে ইঙ্গিত করছে। যার কারণে অধিকাংশ মুসলমান নর-নারী ২৭ রজনীকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন।
এই রাতে ফেরেশতাকুল সম্রাট হযরত জিবরাইল (আ.) অসংখ্য ফেরেশতাদের নিয়ে জমিনে আসেন এবং সমগ্র পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েন। ফেরেশতাগণ ইবাদতকারীদের দোয়ার মধ্যে শরিক হয়ে আমিন আমিন বলতে থাকেন এবং ইবাদতকারীদের সাথে করমর্দন-আলিঙ্গন করেন। এ ধারাবাহিকতা সূর্যাস্ত থেকে শুরু করে ফজর হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। যার কারণে ওই রাতের ইবাদতে বেশি শান্তি পাওয়া যায়।
এই রাতে যত বেশি পারেন নফল নামাজ আদায় করবেন। কুরআনুল কারীমের তেলাওয়াত করবেন, দান-সদকা করবেন, মরহুমীন-মরহুমাতদের কবর জিয়ারত করবেন। সাবধান! মাতা-পিতার অবাধ্য সন্তান, মদ্যপায়ী, ব্যভিচারী, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী, বান-টুনাকারী ইত্যাদি শরীয়তবিরোধী কাজে লিপ্ত থাকলে, এই অভ্যাস গুলো পরিহার করে খালেস তাওবা নিয়ে ইবাদতে মশগুল হবে অন্যতায় কোন ইবাদত কবুল হবে না।
জামাআত সহকারে নামাজ আদায় করলে ২০ রাকাত তারাবির নামাজ শেষে বিতিরের নামাযের আগে দুই দুই রাকাত করে ১২ রাকাত লাইলাতুল কদরের নফল নামাজ আদায় করে বিতরের নামাজ জামাআত সহকারে আদায় করে নিবেন। এরপর সারারাত ইবাদত করতে পারবেন।
• এই রাতে অবশ্যই কিয়ামুল লাইলের নামাজ, সালাতুত তাসবীহ’র নামাজ আদায় করার চেষ্টা করবেন।
উপকারিতা: মৃত্যু যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাবে ও কবরের আযাব থেকে নিরাপদ থাকবে, সুবহানাল্লাহ।
উপকারিতা: ওই স্থান থেকে উঠার আগে তার উপর এবং তার মা বাবার উপর রহমতে ঝরনা ধারা প্রবাহিত হবে, সুবহানাল্লাহ।
উপকারিতা: দয়াময় আল্লাহ তাআলা ওই ব্যক্তির অতীত জীবনের শুনাহ ক্ষমা করে নবজাতক শিশুর মত পবিত্র করে দিবেন এবং বেহেশতে তাকে ১০০০ মহল দান করবেন, সুবহানাল্লাহ্।
উপকারিতা: আল্লাহ তাআলা তার নফল ইবাদত কবুল করবেন এবং তাকে শবে কদরের সাওয়াব প্রদান করবেন, সুবহানাল্লাহ।
উপকারিতা: আল্লাহর দরবারে যত প্রকার জায়েজ দোয়া করবে তা কবুল হবে। আল্লাহ তাআলা তাকে অসংখ্য নেয়ামত দান করবেন এবং তার বিগত জীবনের শুনাহ মাফ করে নিবেন।
কেননা হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, একবার আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলাম- হে আল্লাহর রাসুল! (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনি বলে দিন, লাইলাতুল কদর কোন রাতে হবে তা যদি আমি জানতে পারি, তাহলে আমি কোন দোয়াটি পড়বো? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তুমি বলবে-
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুয়্যুন; তুহিব্বুল আফওয়া; ফাফু আন্নি।’
অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল; ক্ষমা করতে ভালোবাসেন; অতএব আমাকে ক্ষমা করে দিন। (মুসনাদে আহমাদ, ইবনে মাজাহ, তিরমিজি, মিশকাত)
খতিব, জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া দায়েম নাজির জামে মসজিদ, চট্টগ্রাম।