ধর্ম

আজ পবিত্র শবে কদর

সেনানী ডেস্ক

লায়লাতুল ক্বদর:

إِنَّآ أَنزَلْنَٰهُ فِى لَيْلَةِ ٱلْقَدْرِ – وَمَآ أَدْرَىٰكَ مَا لَيْلَةُ ٱلْقَدْر – لَيْلَةُ ٱلْقَدْرِ خَيْرٌ مِّنْ أَلْفِ شَهْرٍ – تَنَزَّلُ ٱلْمَلَٰٓئِكَةُ وَٱلرُّوحُ فِيهَا بِإِذْنِ رَبِّهِم مِّن كُلِّ أَمْرٍ – سَلَٰمٌ هِىَ حَتَّىٰ مَطْلَعِ ٱلْفَجْرِ

 

আমি এটি (কুরআন) অবতীর্ণ করেছি শবে ক্বদরে। শবে ক্বদরের মর্যাদা সম্পর্কে আপনি কি জানেন? শবে ক্বদর এক হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। এতে প্রত্যেক কাজের জন্য ফেরেশতাগণ বিশেষতঃ জিব্রাইল (আ.) দুনিয়াতে আসেন তাদের প্রভুর নির্দেশক্রমে। এ শান্তি বা নিরাপত্তা ফজর উদয় হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। (সূরা ক্বদর)

 

শানে নুযুল:

 

একদিন রাসূল বনী ঈস্রাঈলের জনৈক আবেদ মুজাহিদ সম্পর্কে সাহাবায়ে কেরামের সামনে আলােচনা করলেন। কারাে মতে ঐ ব্যক্তির নাম ছিল শামউন। সে এক হাজার মাস পর্যন্ত অবিরাম দিনে জিহাদ এবং রাতে ইবাদতে মশগুল ছিলেন। মুসলমানগণ একথা শুনে বিস্মিত হলাে এবং নিজেদের অল্প বয়সের কারণে এত বেশী ইবাদতের অক্ষমতার জন্য চিন্তিত হলাে। তখন আল্লাহ তাদের সান্তনার জন্য এ সূরা নাযিল করে ঘােষণা করেন যে, উম্মতে মুহাম্মদীর এ একটি রাতের এবাদত বনী ইসরাইলের ঐ আবেদের হাজার মাসের ইবাদত অপেক্ষা উত্তম।

 

তাফসীরে আযিযীতে আল্লামা আব্দুল আযিয মুহাদ্দেস দেহলভী (র.) বলেন, একদিন নবী করিম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেরউম্মত এবং অন্যান্য নবীগণের উম্মতের বয়সের তুলনা করেন। অন্য নবীর উম্মতগণ দীর্ঘ জীবনের ফলে তারা অনেক আমল করতে সক্ষম হন। পক্ষান্তরে আমার উম্মতের বয়স কম হওয়ার দরুন অন্যদের মত বেশী আমল করতে পারেনা। এ ভাবনায় রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চেহারা মােবারক মলিন হয়ে উঠে। আল্লাহ তায়ালা স্বীয় হাবিবের সম্ভুষ্টির জন্য এ সূরা নাযিল করে ঘােষণা করলেন যে, আমি আপনার উম্মতের জন্য হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ রাত শবে ক্বদর উপহার দিয়েছি।

 

লায়লাতুল ক্বদরের অর্থ:

 

রাত আর ক্বদর অর্থ মাহাত্ম্য ও সম্মান। অন্যান্য রাতের চেয়ে যেহেতু এ রাত সম্মানীয় ও মর্যাদাপূর্ণ সেহেতু এ রাতকে মহিমান্বিত রজনী বলা হয়। আবার কেউ কেউ বলেছেন, ইতিপূর্বে যারা নেক কাজের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সম্মানিত বা মহিমান্বিত হতে পারে নি তারা এই একটি মাত্র রজনীতে ইবাদত ও এস্তেগফারের মাধ্যমে আল্লাহর নিকট সম্মানিত হতে পারে। ক্বদরের আরেক অর্থ তকদীর। এ রাত্রিতে পরবর্তী একবছরে অবধারিত বিধিলিপি দায়িত্বে নিয়ােজিত ফেরেশতাগণের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তাই এটাকে লায়লাতুল ক্বদর বলা হয়। এটা উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য বিশেষ নেয়ামত যা অন্য কোন উম্মতকে দেয়া হয়নি।

 

লায়লাতুল ক্বদরের ফযিলত:

 

হযরত আবু হুরাইরা (রা.) রাসুল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, যে ব্যক্তি ক্বদর রাতে ঈমান ও ইখলাসের সাথে কিয়াম করবে তার পূর্ববর্তী যাবতীয় গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।(বুখারি ও মুসলিম শরিফ)

 

হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রমযান মাস আসলে রাসুল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন, নিশ্চয় রমযান মাস তােমাদের নিকট উপস্থিত হয়েছে। এতে এমন বরকত মণ্ডিত রাত নিহিত আছে যা হাজার মাস থেকে উত্তম। যে একে সম্মান করবে সে যেন

 

পুরাে কল্যাণকেই সম্মান করল আর যে এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হল সে পুরাে কল্যাণ থেকেই বঞ্চিত হল।(ইবনে মাজাহ)

লায়লাতুল ক্বদর ২৭ তারিখ রাতে নিহিত:

 

যদিও লায়লাতুল ক্বদর রমযানের শেষ দশ দিনের যে কোন বেজোড় রাতে নিহিত রয়েছে। তবুও ওলামায়ে কেরাম ও বুযুর্গানেদ্বীনগণ বলেছেন, রমযানের ২৬ তারিখ দিবাগত ২৭ তারিখের রাতে নিহিত আছে। তারা প্রমাণস্বরূপ বলেন, সূরা ক্বদরে لیلة قدر শব্দটিতে নয়টি হরফ আছে। আর এই শব্দটি মােট তিনবার ব্যবহার হয়েছে।

 

তিন দিয়ে গুণ করলে (৯x ৩=২৭) সাতাশ হয়। অথবা উক্ত সূরায় ত্রিশটি শব্দ আছে। তম্মধ্যে ھی শব্দটি হল সাতাশ নম্বর শব্দ। আর দ্বারা লায়লাতুল ক্বদর উদ্দেশ্য। সুতরাং লায়লাতুল কদর সাতাশ তারিখ রাতে নিহিত রয়েছে। আর এটাকে গােপন রাখার উদ্দেশ্য হল লােকেরা শুধুমাত্র ঐ রাতের উপর ভরসা করে অন্যান্য দিবা-রাতের ইবাদত পরিত্যাগ করবে এবং ঐ রাতে মাগফিরাতের আশায় পাপ কাজে লিপ্ত হতে দ্বিধাবােধ করবেনা।

 

বিশুদ্ধ রেওয়ায়েতে বর্ণিত আছে যে, হযরত ওসমান ইবনে আস (রা.) এর গােলাম একদিন তার কাছে আরয করল যে, হে মুনিব! আমি দীর্ঘদিন যাবৎ নৌকা চালিয়েছি।মাঝে মধ্যে নদীর পানিতে এক বিষ্ময়কর ঘটনা আমি অনুভব করেছি যা আমার জ্ঞানে মেনে নিতে পারছেনা। তিনি জিজ্ঞেস করলেন তা কি? উত্তরে সে বলল, প্রতি বছর এমন এক রাত আসে যে রাতে নদীর পানি মিষ্টি হয়ে যায়। তিনি গােলামকে বললেন,এবার

 

তুমি খেয়াল রাখবে যদি এরূপ হয় তবে তারিখ সহ আমাকে বলবে। যখন রমযানের সাতাশ তারিখ আসল তখন খাদেম তাঁকে বলল, হে মুনিব! আজ রাতে নদীর পানি মিষ্টি হয়ে গিয়েছিল।