সৈয়দ মাহমুদ আশরাফীর জীবনী
সৈয়দ মাহমুদ আশরাফ (আশরাফী)
সৈয়দ মাহমুদ আশরাফ ভারতবর্ষের একজন বিখ্যাত ইসলামিক স্কলার ও ধর্মপ্রচারক। তিনি শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর ৩৯তম বংশধর। তিনি বিখ্যাত কাছাউছা দরবার (ছিলছিলায়ে আশরাফীয়া) শরীফের বর্তমান সাজ্জাদানশীন। কাছাউছা দরবার শরীফ বিশ্বব্যাপী সুন্নী সুফিধারার ইসলাম প্রচারের একটি প্রধান কেন্দ্র। সৈয়দ মাহমুদ আশরাফ All India Ulema and Mashaikh Board এর সাবেক প্রেসিডেন্ট। তিনি একজন প্রজ্ঞাবান মুফতি ও শায়খুল হাদীস।তিনি ধর্মপ্রাণ মুসল্লীদের নিকট কায়েদ-এ-মিল্লাত নামে পরিচিত। দ্বীনের প্রচার ও প্রসারের উদ্দেশ্যে তিনি ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অনেকগুলো মাদ্রাসা পরিচালনা করছেন। তিনি আহলে সুন্নাত রিসার্চ সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা,যা দ্বীন ইসলামের সঠিক রূপরেখার প্রচারে অনন্য ভূমিকা রেখে চলেছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তাঁর অসংখ্য ভক্ত ও মুরিদ রয়েছেন। তিনি হলেন “শায়খ-এ-আজম” সৈয়দ মুহাম্মদ ইজহার আশরাফ আশরাফী (রহ:) এর জ্যেষ্ঠপুত্র এবং “ছরকারে কালা” হিসেবে সুপরিচিত সুফি দরবেশ সৈয়দ মুহাম্মদ মুখতার আশরাফ আশরাফী আল জিলানী (রহ:) এর নাতি। প্রকৃতপক্ষে, বিখ্যাত সুফি দরবেশ ও ধর্মপ্রচারক সৈয়দ আশরাফ জাহাঙ্গীর সিমনানী (রহ:), যিনি সিমনান এর বাদশাহ ছিলেন এবং ধর্মপ্রচারের জন্য রাজসিংহাসন পর্যন্ত ত্যাগ করেছিলেন, আশরাফীরা হচ্ছেন তাঁরই আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকারী। ইসলাম ধর্মের নবী হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর বংশধর এবং গাউছে পাক সৈয়দ আব্দুল কাদের জিলানী এর বংশধর হিসেবে আশরাফী পরিবার ভারতবর্ষে অত্যন্ত সম্মানিত। তাদের শাজরা (বংশপরম্পরা) বিশুদ্ধভাবে প্রমাণিত।
জন্ম ও পারিবারিক জীবন
কায়েদ-এ-মিল্লাত সৈয়দ মাহমুদ আশরাফ ৭ই জুলাই,১৯৬৪ খ্রীষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর ৩৯ তম বংশধর। তাঁর সম্মানিত পিতা হলেন “শায়খ-এ-আজম” সৈয়দ মুহাম্মদ ইজহার আশরাফ আশরাফী (রহ:) এবং দাদা হলেন “ছরকারে কালা” সৈয়দ মুখতার আশরাফ আশরাফী আল জিলানী (রহ:)।
শিক্ষাজীবন
সৈয়দ মাহমুদ আশরাফ তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা কাছাউছা দরবারে অর্জন করেন। পরবর্তীতে তিনি জামে আশরাফ এ অবস্থান করে উলুমে ইসলামীয়ার সর্বোচ্চ ডিগ্রী অর্জন করেন। অত:পর ১৪১০ হিজরীর ২৭শে মহররম নিজ দাদা আরেফে রব্বানী আল্লামা সৈয়দ মুখতার আশরাফ (রহ:) এর পবিত্র হাতে দরসে নেজামীর ডিগ্রী দস্তারে ফজিলত হাসিল করেন। দস্তারে ফজিলত অর্জন করে তিনি জামেয়া নঈমীয়া মুরাদাবাদে একজন সুদক্ষ মুফতির তত্ত্বাবধানে একাধারে ১২ মাস আরবী সাহিত্যে শিক্ষা অর্জন করেন। অত:পর তিনি লক্ষ্ণৌ ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন।
শিক্ষকতা
শিক্ষাজীবন শেষে তিনি অধ্যাপনার দ্বায়িত্বে নিযুক্ত হন। তিনি এক বছর জামে আশরাফে শিক্ষক হিসেবে খেদমত করেন। অত:পর তিনি শরীয়ত ও ত্বরীকত প্রচারের মহান কাজে আত্মনিয়োগ করেন।
বায়াত ও খেলাফত
সৈয়দ মাহমুদ আশরাফ তাঁর স্বীয় পিতা শায়খে আজমের হাতে সিলসিলায়ে আলীয়া কাদেরীয়া চিশতীয়া আশরাফীয়ায় বায়াত হন। অত:পর তিনি স্বীয় দাদা ছরকারে কালা সৈয়দ মুখতার আশরাফ(রহ:) থেকে কাদেরীয়া মুনাওয়াবিয়া মুয়াম্মারিয়া সিলসিলায় খেলাফত লাভ করেন।
আন্দোলন ও সমাজ সংস্কার
ভারতের মুসলিমদের অধিকার আদায়ের দাবীতে তিনি মুরাদাবাদে বিশাল জনসমাবেশ করেন। এ সমাবেশে তিনি ভারতীয় মুসলিমদের নিজ রাষ্ট্রীয় অধিকারের ব্যাপারে সচেতন হতে বলেন। একইসাথে, শিক্ষার অভাবকে মুসলিমদের পিছিয়ে পড়ার প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করে তাদেরকে শিক্ষা অর্জনের প্রতি সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করতে বলেন। এর পাশাপাশি ইসলামের শান্তির বাণী প্রচারকারী প্রকৃত রূপরেখা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত এর প্রচারে তিনি সরকারকে এগিয়ে আসতে বলেন। তিনি বলেন,ইসলামের প্রকৃত শান্তির বাণী প্রচারকারী খানকাহ ও দরবারসমূহের কর্মকান্ড বৃদ্ধি পেলে ইসলামের নামে উগ্রতা ও জঙ্গিবাদ অনেকাংশেই কমে আসবে। এ জনসমাবেশের আয়োজন করে অল ইন্ডিয়া উলামা মাশায়েখ বোর্ড এবং সৈয়দ মাহমুদ আশরাফ এ বোর্ডের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ছিলেন।
দ্বীন ও উম্মাহর খেদমত
জামে আশরাফ
সৈয়দ মাহমুদ আশরাফ ভারতবর্ষের অত্যন্ত সুপরিচিত মাদ্রাসা জামে আশরাফ এর পরিচালকের দ্বায়িত্ব পালন করছেন। এ মাদ্রাসা মুসলিম ছাত্রছাত্রীদের সুন্নী সুফি ভাবধারার দীক্ষা দিয়ে আসছে। তিনি আধুনিক ইনফরমেশন এন্ড টেকনোলজী সিস্টেম দিয়ে জামে আশরাফ মাদ্রাসাকে মর্ডানাইজ করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন।
এর পাশাপাশি তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মাদ্রাসা স্থাপন ও পরিচালনা করছেন।
আহলে সুন্নাত রিসার্চ সেন্টার
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত এর প্রকৃত শান্তির বাণী প্রচারের উদ্দেশ্যে সৈয়দ মাহমুদ আশরাফ ২০১৫ সালে
মুম্বাইয়ে প্রতিষ্ঠা করেন আহলে সুন্নাত রিসার্চ সেন্টার।এটি একটি অরাজনৈতিক ও অলাভজনক সংস্থা। সৈয়দ মাহমুদ আশরাফ অনুধাবন করেছিলেন যে,বাতিল ও উগ্রপন্থীদের হাত থেকে মুসলিম যুবকদের রক্ষা করার জন্য এমন একটি ইসলামিক সেন্টার প্রয়োজন যেখানে যুবকরা দ্বীনের প্রকৃত শান্তির বাণী জানতে পারবে এবং দ্বীন সম্বন্ধে তাদের নানাবিধ প্রশ্নের রেফারেন্সসহ উত্তর পাবে। এ উদ্দেশ্য নিয়েই মূলত আহলে সুন্নাত রিসার্চ সেন্টারের পথচলা শুরু। বর্তমানে আহলে সুন্নাত রিসার্চ সেন্টার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ইসলামিক গবেষক ও পন্ডিতদের রচিত বইসমূহ সহজবোধ্য উপস্থাপনের মাধ্যমে ইংরেজী,উর্দু ও হিন্দি ভাষায় প্রকাশ করার মূল লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে চলেছে।
প্রকাশনা ও সম্পাদনা
সৈয়দ মাহমুদ আশরাফের নির্দেশনায় আহলে সুন্নাত রিসার্চ সেন্টারের একদল গবেষক বিভিন্ন ভাষায় বেশ কিছু বই রচনা করেছেন এবং করে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে রচিত বইগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল:
- পয়গম্বরে ইনসানিয়াত (উর্দু ও হিন্দি ভাষায়)
- লক্বব-এ-ইমামে আজম
- ফিরকা-এ-মুর্জিয়া(উর্দু ও হিন্দি ভাষায়)
- শাহাদাত-এ-ইমাম হাসান
- ওহাবিয়্যত কা সফর নজদ-ছে-হিন্দ তক
- ফিসক-এ-ইয়াজিদ (উর্দু ও ইংরেজী ভাষায়)
- মাকতুবাত-এ-আশরাফী
- নুকুশ-এ-আশরাফী