ইমাম শেরে বাংলা আল্লামা গাযী সৈয়দ মুহাম্মদ আজিজুল হক আল-কাদেরী (রা.)’র সংক্ষিপ্ত জীবনী
আল্লামা এম.এ মান্নান, বিশিষ্ট গবেষক ও রাজনীতিবিদ
কোন আদর্শ এবং ওই আদর্শের অনুসারী জনগােষ্ঠীর যখন ক্রান্তিকাল অতিবাহিত হয়, যুগােপযােগী ও যথাযথ উদ্যোগের অভাবে যখন ওই আদর্শ ও আদর্শের অনুসারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, বিরুদ্ধবাদী চক্র যখন তৎপর হয়ে নিজেদের অবস্থান গড়ে নেয় এবং ওই আদর্শের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে সেটাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে সমাজে আদর্শ বিরােধী মতবাদ প্রচার ও প্রতিষ্ঠার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়, তখন ওই আদর্শের কোন প্রকৃত কর্ণধার নির্বিকার হয়ে বসে থাকতে পারেন না। তখন তিনি ওই সব প্রতিকূলতা ও আশঙ্কার সফল মােকাবেলার জন্য অস্থির হয়ে ওঠেন, পালন করেন অতন্দ্র সিপাহসালারের ভূমিকা। এদেশে সুন্নিয়াতের ইতিহাসে ইমামে আহলে সুন্নাত আল্লামা গাযী শেরে বাংলা রাহমাতুল্লাহি তা’আলা আলায়হিও এমনি একজন প্রকৃত কর্ণধার (ইমাম) ছিলেন। সুন্নিয়াতের ক্রান্তিকালে তিনিও সুন্নিয়াতের প্রতি তাঁর অকৃত্রিম আন্তরিকতা ও অসাধারণ ত্যাগের চির অম্লান উদাহরণ প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। আদর্শের সৈনিকরা তাঁর আদর্শ জীবন থেকে সত্য প্রতিষ্ঠার ও বাতিলের মােকাবেলার অনুপ্রেরণা লাভ করেন। আল্লাহ তা’আলা তাঁর মধ্যে বংশীয় গৌরব, জ্ঞান-গভীরতা, আত্মবিশ্বাস ও অসাধারণ সৎসাহসসহ বহু গুণ ও বৈশিষ্ট্য দান করেছিলেন। তিনি বেলায়তের উঁচু মর্যাদারও অধিকারী ছিলেন।
জন্ম
আল্লামা গাযী শেরে বাংলা বিগত ১৩২৩ হিজরী/১৯০৬ ইংরেজীর একটি বিশেষ দিনের এক শুভ মুহূর্তে চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী থানার মেখল গ্রামে এক সন্ত্রান্ত ‘সাইয়্যেদ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা হযরত সাইয়্যেদ আবদুল হামীদ আল-কাদেরী এবং দাদা হযরত সাইয়্যেদ মুহাম্মদ হাশমত উল্লাহও ছিলেন যুগখ্যাত আলিম-ই দ্বীন ও বুযুর্গ ব্যক্তিত্ব। তাঁর আম্মাজান সাইয়্যেদা মায়মুনা খাতুনও ছিলেন বিদূষী, পুণ্যবর্তী ও রত্নগর্ভা। পিতা ও মাতা উভয়ের দিক দিয়ে তিনি ছিলেন খাঁটি আওলাদে রসূল।
হযরত আল্লামা আজিজুল হক আল্-কাদেরী ছিলেন অসাধারণ মেধাশক্তি ও উন্নত চরিত্রের অধিকারী। তিনি স্থানীয় মাদ্রাসাগুলাে থেকে নিয়মিতভাবে অধ্যয়ন করে টাইটেল পাশ করার পর ভারতের প্রসিদ্ধ ফতেহপুর মাদরাসা থেকে হাদীস ও ফিক্বহ ইত্যাদি শাস্ত্রে উচ্চতর শিক্ষা লাভ করেন। পুঁথিগত ও অধ্যয়নগত শিক্ষায় তিনি ছিলেন এক অপ্রতিদ্বন্দ্বী আলিম-ই দ্বীন। ভারতে অধ্যয়নকালে তিনি দেওবন্দ মাদরাসার শিক্ষা ব্যবস্থা ও শিক্ষকমণ্ডলীর জ্ঞানের গভীরতা সম্পর্কে জানার জন্য সেখানে যান। বাংলাদেশসহ এতদঞ্চলে প্রসারিত ওহাবিয়াতের সুতিকাগার এ দেওবন্দ মাদরাসার অবস্থান যাচাই করা ভবিষ্যতে তাঁর কর্মময় জীবনের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ ছিলো। কারণ এতদৃঞ্চলের মুসলিম সমাজ থেকে ইসলামী আল-খেল্লা পরিহিত, আল্লাহ ও রসূলের দুশমনদের উৎখাত কিংবা চিহ্নিত করে সুন্নিয়াতের পতাকাকে উড্ডীন করতে তিনি ছিলেন দৃঢ়প্রত্যয়ী। তিনি প্রথমে ছাত্র বেশে দেওবন্দ মাদরাসায় গিয়ে মুহাদ্দিস আশফাকুর রহমান সহ তাদের অন্যান্য শীর্ষস্থানীয় শিক্ষকদের মুখােমুখি হন। তারা তাঁকে ভর্তিচ্ছু ছাত্র মনে করে কতিপয় প্রশ্ন করেন। তিনি তাদের সব প্রশ্নের যথাযথ জবাব দেন। অতঃপর তাদের অনুমতি নিয়ে তিনিও কয়েকটা প্রশ্ন করলেন। কিন্তু তারা তাঁর একটি প্রশ্ন ব্যতীত বাকী প্রশ্নগুলাে এড়িয়ে যান। সুতরাং তিনি ওই দিনই বলে এসেছিলেন, “আল্-হামদু লিল্লাহ! আমি আপনাদের নিকট থেকে শিক্ষা গ্রহণ নয়, বরং আপনাদেরকে শিক্ষা দেওয়ারই উপযােগী।” তিনি তা-ই করেছিলেন জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত। ওহাবী-দেওবন্দীসহ সমসাময়িক সব ধরনের বাতিলের সফল মােকাবেলা করেছিলেন তিনি।
জ্ঞানগত দক্ষতা
আল্লামা গাযী শেরে বাংলা রাহমাতুল্লাহি তা’আলা আলায়হির দৃঢ় প্রত্যয় ছিলাে যে, তিনি জ্ঞানাস্ত্র দ্বারাই সত্য প্রতিষ্ঠা ও সব ধরনের বাতিলের মােকাবেলা করবেন। তাই তিনি প্রথমে প্রাতিষ্ঠানিক ও পঁথিগত শিক্ষার ক্ষেতত্রে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হন। তাছাড়া আল্লাহ তা’আলা তাঁকে ইলমে লাদুন্নী দ্বারাও সমৃদ্ধ করেছিলেন। এক শুভ মুহুর্তে তিনি হযরত খাদ্বির আলায়হিস্ সালাম-এরও সাক্ষাৎ পেয়ে যান। হযরত খাদ্বির আলায়হিস্ সালাম তাঁর সাথে সস্নেহে আলিঙ্গন করেন এবং পবিত্র হাদীস শরীফ থেকে চারটি সবক পড়িয়ে অদৃশ্য হয়ে যান। এর মাধ্যমে তাঁর মধ্যে ইলমে লাদুন্নীও স্থান পায়। তদুপরি তাঁর ধমনীতে ছিলাে নবী পাক সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর পবিত্র বংশের রক্ত, হৃদয়ে ছিলাে অকৃত্রিম খােদা ও রসূলপ্রেম। অধিকন্তু তাঁর মধ্যে ছিলোে অসাধারণ ও নির্ভূল জ্ঞানানুসারে আমল করার অদম্য স্পৃহা। আরাে ছিলোে রূহানী শক্তি। সর্বোপরি, কুদরতিভাবে তাঁর মধ্যে খােদাপ্রেম ও ইশকে রসূল এমনভাবে স্থান পেয়েছিলাে যে, আল্লাহ্-রসূলের শানমান রক্ষার জন্য তিনি সত্যিকার অর্থে সব সময় অতন্দ্র-সচেষ্ট ও অকুতােভয় ছিলেন। এর ফলে তিনি তজ্জন্য নিজের জীবনের সবকিছু, এমনকি নিজের প্রাণটুকু পর্যন্ত উৎসর্গ করতে দ্বিধাবােধ করেন নি। আল্লামা গাযী শেরে বাংলা ছিলেন জ্ঞানসমুদ্র। তিনি ইলমে লাদুন্নী দ্বারাও সমৃদ্ধ তাে ছিলেনই। যাহেরী ও বাতেনী জ্ঞানের এ অপূর্ব সমন্বয় ছিল তাঁর মধ্যে। আরবী, ফার্সী ও উর্দু ভাষায় ছিলাে তাঁর অসাধারণ পাণ্ডিত্য। ফার্সী ও উর্দূ ভাষায় তিনি উচ্চাঙ্গের কবি ছিলেন, ‘দীওয়ান-ই আযীয’ শরীফই এর প্রকৃষ্ট প্রমাণ।
ভারত থেকে তিনি দেশে ফিরে দ্বীন ও মাযহাবের খিদমতে আত্মনিয়ােগ করেন। তাঁর কর্ম জীবনে দেখা যায় যে, রসূলে পাকের সুন্নাত পালনের জন্য তিনি বিবাহ-শাদী করেছেন। সত্য, কিন্তু যাবতীয় যােগ্যতাকে পুঁজি করে পার্থিব জীবনকে বর্ণাঢ্য করার দিকে তাঁর কোন আগ্রহই ছিলাে না। জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি একথাই প্রমাণ করেছেন- “মাইতাে বীমারে নবী হোঁ!” (আমি তাে নবীর প্রেমরােগেই ভুগছি)। এ জন্য তিনি কতগুলোে বাস্তব ও ফলপ্রসু পদক্ষেপও গ্রহণ করেছেন। স্বদেশে এসে তিনি দেখতে পান-
প্রথমতঃ এদেশে প্রকৃত দ্বীনি শিক্ষা (সুন্নী মতাদর্শের শিক্ষা)’র ব্যাপক প্রসার একান্ত দরকার। দ্বিতীয়তঃ মুসলিম সাধারণকে ওয়ায-নসীহতের মাধ্যমেও হিদায়ত করা যেতে পারে। তৃতীয়তঃ বিক্ষিপ্ত সুন্নী মুসলমানদেরকে সুসংগঠিত করা প্রয়ােজন। চতুর্থতঃ রাজনৈতিক এবং সামাজিক অঙ্গনেও সুন্নীদের অংশগ্রহণ অপরিহার্য। পঞ্চমতঃ ভারতের দেওবন্দ মাদরাসা থেকে শিক্ষা ও দীক্ষা নিয়ে এসে কতিপয় লােক এদেশের বিভিন্ন এলাকায় ওহাবী-খারেজী মাদরাসা ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান গড়ে বিনা বেতনে ও ফ্রি খােরপােষ দিয়ে এদেশের গরীব ও অসচেতন মুসলমানদের সন্তানদের ওহাবী-দেওবন্দী ভ্রান্ত চিন্তাধারায় শিক্ষিত ও উদ্ধুদ্ধ করার যেসব পাঁয়তারা চালাচ্ছিল সেগুলাে সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করা দরকার। উল্লেখ্য, বর্তমানে তাদের এ তৎপরতা এক আশঙ্কাজনক আকার ধারন করেছে। ষষ্ঠতঃ মি. মওদূদীর মারাত্মক ভ্রান্ত চিন্তাধারা রাজনীতির আদলে এদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মধ্যে প্রতিষ্ঠা করার যে অশুভ পাঁয়তারা চলছিলাে, সে সম্পর্কেও এ দেশের মানুষকে সচেতন করতে হবে। সপ্তমতঃ এদেশে কাফির ভণ্ডনবী গােলাম আহমদ কাদিয়ানীর অনুসারীরাও যেসব পদক্ষেপ নিচ্ছিলো সেগুলো সম্পর্কে এদেশের মানুষকে সতর্ক করে দেওয়া আবশ্যক। অষ্টতমঃ ইসলামের সঠিক রূপরেখা (সুন্নী মতাদর্শ) প্রতিষ্ঠা এবং এর পরিপন্থী মতবাদগুলাের সফল মােকাবেলা করার জন্য শুধু আলিম তৈরি করে ক্ষান্ত না হয়ে তাঁদেরকে মুনাযির (তর্কযােদ্ধা) এবং সৎসাহসী করে তােলারও বিকল্প পথ নেই। নবমতঃ সুন্নীদের মধ্যে কোন উদাসীনতা ও সুন্নীয়তের প্রতি অপবাদ আসে এমন কিছু থাকলে সেগুলাের সংশােধন করারও প্রয়ােজন। দশমতঃ এদেশে ইসলাম প্রচারকারী অগণিত পীর-মুর্শিদের সন্ধান দিয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকার মুসলিম সমাজকে ওইসব শরীয়ত ও তরীক্বতের কেন্দ্রগুলােতে কেন্দ্রীভূত করা অত্যন্ত ফলদায়ক হবে। একাদশতঃ সুন্নী সমাজে লেখনীর চাহিদা পূরণের প্রয়ােজনও অনস্বীকার্য ইত্যাদি। সুতরাং তিনি কালক্ষেপণ না করে এসব ক’টি বিষয় বাস্তবায়নের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করে দিলেন এবং বাস্তব ক্ষেত্রে সফলও হয়েছিলেন। তাঁর সুচিন্তিত পদক্ষেপগুলােও ছিলো নিম্নরূপ:
দ্বিতীয়ত: ওয়াজ-নসীহতঃ বলাবাহুল্য, তখনাে সরলপ্রাণ সাধারণ মুসলমানদের, বিশেষ করে দ্বীনী শিক্ষার আলাে পাবার অন্যতম প্রধান উপায় ছিলাে ওলামা-ই কেরামের শিক্ষাদান ও ওয়াজ-নসীহত। আল্লামা গাযী শেরে বাংলার ওয়াযের প্রভাব ছিলাে অকল্পনীয়। তাঁর নির্ভীক বর্নাভঙ্গি, আকর্ষণীয় কণ্ঠ ও হৃদয়গ্রাহী যুক্তি-প্রমাণ শ্রোতাদের মনে অকল্পনীয়ভাবে রেখাপাত করতে। তিনি যেদিকেই যেতেন জ্ঞান-পিপাসুদের ঢল নামতাে। তিনিও ওয়াজ-নসীহতের প্রতি অতি আন্তরিকতা প্রদর্শন করতেন। উদ্যোগীদের আহবানে, দ্বীনী প্রয়ােজনে, দ্বীনের আলাে বিকিরণের জন্য তিনি চলে যেতেন দূর-দূরান্তরে। তাঁর ওয়ায মাহফিলগুলােও ছিলাে ওলামা-সাধারণের জন্য একেকটা নির্ভুল শিক্ষাক্ষেত্র। কারণ, তাঁর যুক্তি-প্রমাণগুলাে ছিলাে তার় বিরল ও সূক্ষ্ম তত্ত্ব ও তথ্য ভাণ্ডারের নির্যাস। ওইগুলাে সাধারণ মানুষকে।করতে তৃপ্ত আর ওলামা ও জ্ঞানী সমাজকে করতাে আরাে জ্ঞানসমূদ্ধ।
চতুর্থত: অসাধারণ ত্যাগস্বীকারঃ আল্লামা গাযী শেরে বাংলা সুন্নিয়াতের প্রসার ও প্রতিষ্ঠার মােকাবেলায় কখনাে পার্থিব কোন কিছুকে প্রাধান্য দেননি। একদা তিনি ঘরে মৃত শিশু-সন্তানকে এক নজর দেখে দাফন করার জন্য অনুমতি দিয়ে মুনাযারায় চলে গিয়েছিলেন। যাবতীয় আয়ের বেশীর ভাগ ব্যয় করতেন তাঁর বিরুদ্ধে ওহাবীদের কৃত মামলা-মুকাদ্দমা চালাতে এবং ধর্মীয় কার্যাদিতে। তিনি ইনতিকালের সময় বিশেষ কোন সম্পদ কিংবা নগদ টাকা পয়সা রেখে যান নি। পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে যে, মুনাযারাগুলােতে নিয়মিতভাবে ওহাবীরা শােচনীয়ভাবে পরাজিত হয়ে আসছিলাে। তাছাড়া, অব্যাহত গতিতে সুন্নিয়াতের প্রচারণা চালিয়ে যাওয়া সত্ত্বেও হতভাগা অস্বীকারকারীরা তাদের ভ্রান্তচিন্তা পরিহার করার পরিবর্তে বেছে নিলাে, তাঁকে নানাভাবে কোণঠাসা, এমনকি হত্যা (শহীদ) করার যড়যন্ত্রের মতাে জঘন্য পন্থাকেই। হাটহাজারী থানার খন্দকিয়া গ্রামে কিছু কট্টরপন্থী ও কাণ্ডজ্ঞানহীন ওহাবী বসবাস করে আসছিলাে। একদা ওই এলাকায়ও তাঁকে ওয়াযের দাওয়াত দেওয়া হয়েছিলাে। এলাকা তাঁর অনুকূলে ছিলাে না। তবুও দ্বীন ও মাযহাবের প্রচারণার তাগিদে তিনি নিজের জীবনের নিরাপত্তার বিষয়টিকে প্রাধান্য না দিয়ে সুন্নিয়াতের প্রচারনাকেই প্রাধান্য দিলেন। তিনি সেখানে ওয়ায করতে গিয়েছিলেন এবং সুন্নী মতাদর্শের বিষয়গুলার পক্ষে যুক্তি প্রমাণ দিয়ে ওয়ায আরম্ভ করেছিলেন। কিন্তু ওহাবীরা তাঁকে শহীদ করার তখনই মুখ্য সুযোগ মনে করে ওয়াযের মধ্যভাগে তাঁর উপর অতর্কিতভাবে হামলা চালিয়েছিলোে। তাদের নির্মম আঘাতে তিনি বেহুশ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েছিলেন। হামলাকারী ওহাবীরা তাঁকে মৃত মনে করে পার্শ্ববর্তী কাঁটা ঝাড়ের মধ্যে ফেলে চলে গিয়েছিল। তারপর তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতাল তাঁকে ‘মৃত’ ঘােষণা করেছিলাে; কিন্তু আল্লাহ্ ও রসূলের দরবারে এ মাক্ববূল মুজাহিদের বহু কাজ তখনও বাকী ছিলোে বিধায় তাঁকে আল্লাহ্ ও রসূলের পক্ষ থেকে পুনরায় জীবন প্রদান করা হয়েছিলাে। আল্লামা গাযী শেরে বাংলা বলেছেন, হযরত আযরাঈল আলায়হিস্ সালাম তাঁর রূহ কব্জ করে আসমানের দিকে চলে যাবার সময় হযরত ফাতিমা যাহরা রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা রূহানী ক্ষমতা বলে হস্তক্ষেপ করলেন এবং হুযূর-ই আকরামের মহান দরবারে তাঁর হায়াত বৃদ্ধির জন্য সুপারিশ করলেন। সুতরাং ওই সুপারিশ হুযূর গ্রহণ করলেন। হুযূর-ই পাকের কৃপাদৃষ্টির কারণে আল্লাহ্ পাক তাঁকে হায়াত দান করলেন। অতঃপর হুযূর-ই আকরাম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম নিজেই সদয় তাশরীফ এনেছিলেন এবং আল্লামা শেরে বাংলাকে নিজের সন্তুষ্টির সুসংবাদ দিলেন আর এরশাদ করলেন, “আজিজুল হক! আমি তােমার উপর সন্তুষ্ট হয়েছি। তােমার অকৃত্রিম মুহাব্বতের কারণে তােমার আয়ু বৃদ্ধি করা হলাে।” আল্লামা গাযী শেরে বাংলা রাহমাতুল্লাহি আলায়হির নবীপ্রেমের এমন দৃষ্টান্ত খুবই বিরল। বর্তমানেও আমাদের নবীপ্রেম ও ইশকে রসূলের বাস্তবতা প্রমাণের উপযুক্ত সময় এসেছে। বলাবাহুল্য, সুন্নিয়াতের এহেন ক্রান্তিলগ্নে আল্লামা গাযী শেরে বাংলাকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করার বিকল্প পথ নেই।
ষষ্ঠতঃ আদর্শ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে চাই যথােপযুক্ত ও যুগোপযোগী লেখনী। এত কর্মব্যস্ততার মধ্যেও তাঁর লেখনী চলছিলাে সমান্তরালভাবে। তাঁর লেখনীগুলোর মধ্যে ‘দিওয়ান-ই আযীয’, ‘মাজমূ’আহ-ই ফাতা-ওয়া-ই আযীযিয়া’, ‘ঈযাহুদ দালালাত’ (ফাতওয়া-ই মুনাজাত) বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য। এসব কিতাবে তিনি অকাট্য প্রমাণাদি সহকারে যুগ জিজ্ঞাসার জবাব ও শরীয়ত-তরীক্বতের যথাযথ দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন।
অষ্টমতঃ সমসাময়িক প্রশ্নাবলীর অকাট্য সমাধান প্রদান বেলায়তের একটি অতি উচ্চ পদ হচ্ছে ‘গাউসুল আযম’। তাবেঈ’র পরই এ মহামর্যাদা। আল্লামা গাযী শেরে বাংলা রাহমাতুল্লাহি তা’আলা আলায়হিও তাঁর ‘দিওয়ানে আযীয’- মহান উপাধি সম্পর্কেও সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। তিনি হুযূর গাউসে পাক শায়খ আবদুল কাদের জিলানী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুকে ‘শাহে বেলায়ত’ বলেছেন। আর হুযূর গাউসে পাকের ওই ঘােষণাটি (কাদামী হা-যিহী ‘আলা রাকবাবাতি কুল্লি ওয়ালিয়্যিল্লাহ্ অর্থাৎ আমার এ কদম আল্লাহর সমস্ত ওলীর গর্দানের উপর) এভাবে বর্ণনা করেছেন- পা-য়ে পা-কশ বর রেক্বা-বে হার ওলী-উল্লাহ বুয়াদ।’ অর্থাৎ “তাঁর কদম প্রত্যেক ওলীর গর্দানের উপরই।” তিনি আরাে বলেছেন, তিনি হলেন ‘গাউসুল আযম ও কুত্ববে আলম’ ইত্যাদি। তিনি বলেছেন, এ কারণে তাঁর পা মুবারক প্রতিটি ওলীর গর্দানের উপর স্থান পেয়েছে। ‘ গাউসুল আযম’ উপাধি ব্যবহারের ক্ষেত্রে আল্লামা গাযী শেরে বাংলা রাহমাতুল্লাহি তা’আলা আলায়হির সিদ্ধান্ত একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। সুতরাং সুন্নী মুসলমানগণ আল্লামা গাযী শেরে বাংলা রাহমাতুল্লাহি আলাইহির এ ফয়সালা ও সুবিন্যস্থ বিবরণকে নির্দ্বিধায় মেনে নেওয়াকে এ ক্ষেত্রে নিরাপদ ও সঠিক বলে মনে করেন। তাছাড়া, যামানার গাউসগণ (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুম)-এর উল্লেখও রয়েছে তাঁর ‘দিওয়ান-ই আযীয’-এ।
ওহাবীরা আল্লাহ তা’আলা ও নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর মানহানি করে থাকে। তারা আল্লাহর জন্য মিথ্যা বলা সম্ভব (ইমকানে কিযব) ইত্যাদি এবং নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামকে বড় ভাইয়ের মতাে বলে, আরাে বলে- নবী পাক গায়ব জানেন না। নবীর খেয়াল নামাযে আসলে…ইত্যাদি। এগুলােই হচ্ছে ওহাবীদের সাথে সুন্নী মুসলমানদের বিরােধের মৌলিক কারণ। এ আক্বীদা গুলাের সাথে সংশ্লিষ্ট শরীয়তের এমন কিছু মাসআলাও রয়েছে, যেগুলাে শরীয়ত মতে বৈধ ও বরকতময় হওয়া সত্ত্বেও ওহাবীরা মনগড়াভাবে সেগুলােকে হারাম, শির্ক নাজায়েয ফাত্ওয়া দিয়ে বসে। আল্লামা গাযী শেরে বাংলা আকাইদ সংক্রান্ত হােক আর শরীয়ত সংক্রান্ত হােক যে কোন মাস’আলা বা বিষয়ে যখন ও যেখানে ভুল ফাত্ওয়া দেওয়া হয়েছে তখনই সেখানে গিয়ে সেটার প্রতিবাদ ও প্রতিকার করেছেন। মাঠে-ময়দানে প্রকাশ্যে ওয়ায ও মুনাযারার মাধ্যমেতাে তা করেছেনই, লেখনীর মাধ্যমেও তিনি প্রায় সব বিতর্কিত মাসআলার সমাধান
দিয়েছেন। ‘দিওয়ান-ই আযীয’ ও ‘মজমুআহ-ই ফাতাওয়া-ই আযীযিয়াতে তিনি একেকটা মাসতআলার পক্ষে এতােগুলাে কিতাবের সূত্র ও বরাত উন্বেখ করেছেন যে, তা দেখে নবী হতবাক হতে হয়। যেমন: কিয়াম-মীলাদ শরীফ, এয়া রসূলুল্লাহ বলে ডাকা,ওলীগণের নিকট সাহায্য চাওয়া, ওরশ-ফাতিহাখানি, আশুরায় উন্নত মানের খাবার তৈরি করা, হাপ্তদানার ফাতিহা, হুযূর করীমের নাম শুনলে দু’বৃদ্ধাঙ্গুলীতে চুমু খেয়ে দুচোখ ও মসেই করা, কবর যিয়ারত, নফল নামায জমা’আত সহকারে পড়া, শবে ক্বদরের নফল নামায, ফরয নামাযের পর মুনাজাত, মাইকযােগে ওয়াজ-নসীহত করা, সঠিক মুর্শিদের পরিচয়, অমুসলিম সম্প্রদায়ের সাথে সামঞ্জস্য রাখার কুফল, নযর-নিয়াযের বিধান, মাযারে বাতি ও লােবান জ্বালানাে, বরকত লাভের জন্য বুযুর্গদের আস্তানায় চুমু খাওয়া ইত্যাদি তাছাড়া, তিনি সামা’ ও সাজদায়ে তাহিয়্যাহ (পীরকে ও বুযুর্গের মাযারকে সাজদা করা) ইত্যাদি স্পর্শকাতর বিষয়েরও একেবারে গ্রহণযােগ্য সমাধান দিয়েছেন।
ধর্মীয় কাজে মাইক ব্যবহার প্রসঙ্গেঃ বক্তার আওয়াযকে বড় করে একসাথে বেশী শ্রোতার নিকট পৌছানাের জন্য বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়ে আসছিলাে। বিদায় হজ্বে হযূর সাল্লাল্লাহু তাআলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী মুবারক উপস্থিত লক্ষাধিক সাহাবীর নিকট পৌঁছানাের জন্য হুযূর হযরত আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুকে এ জন্য নিয়ােগ করে উটের পিঠের ওপর চড়িয়ে দিয়েছিলেন। এতে একথার পক্ষে দলীল কায়েম হয়েছে যে, যদি আওয়াজকে পৌঁছানাের জন্য অন্য কোন বিকল্প পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয় তাও বৈধ।
নবমত: তিনি তার সাথে রেখে হাতে কলমে শিক্ষা এবং উৎসাহ দিয়েও বহু যোগ্য আলিম, মুনাযের, সচেতন ও নিষ্ঠাবান উত্তরসূরী তৈরি করে গেছেন, যা বর্তমানে বিশেষ করে আমাদের সুন্নী অঙ্গনে খুব কমই দেখা যায়! অথচ এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণও।
ওফাত শরীফ
১৩৮৯ হিজরীর ১২ রজব, মােতাবেক ১৯৬৯ ইংরেজীর ২৫ সেপ্টেম্বর এবং ১৩৭৬ বাংলার ৮ আশ্বিন এ দেশের সুন্নিয়াতের ইতিহাসে এক বেদনা বিধূর দিন। এ দিন ছিলাে সুন্নিয়াতের আকাশ মেঘাচ্ছন্ন ও বিচ্ছেদকাতর বর্ষণমুখর। কারণ, এ ১২ রজব বুধবার দিবাগত রাতে
সুবহে সাদেকের সময় এ দেশের সুন্নিয়াতের আন্দোলনের সর্বোজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক, সুন্নী জনতার প্রাণস্পন্দন হযরত আল্লামা গাযী সৈয়দ মুহাম্মদ আজিজুল হক শেরে বাংলা
রাহমাতুল্লাহি তা’আলা আলায়হি লক্ষ-কোটি সুন্নী জনতাকে শােকসাগরে ভাসিয়ে করে এ নিশ্বর পৃথিবী থেকে পর্দা করেন। বেসাল শরীফের সময় এ অকৃত্রিম আশিকে রসূলের বয়স হয়েছিলাে ৬৩ বৎসর। হযরত শেরে বাংলা রাহমাতুল্লাহি তা’আলা আলায়হির ওফাত শরীফের খবর বিদ্যুৎগতিতে চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে। দলে দলে আশিক্বানে রসূল সুন্নী জনতা শোকে মুহ্যমান হয়ে হযুরের হাটহাজারীস্থ বাসভবনে পতঙ্গের ন্যায় ছুটে আসতে থাকে। পিতাকে হারিয়ে সন্তান যেমন ইয়াতীম ও অসহায় হয়ে আহাজারি করতে থাকে, তেমনি আজ লক্ষ কোটি সুন্নী জনতার নয়নমণি গাযী শেরে বাংলা রাহমাতুল্লাহি তা’আলা আলায়হিকে এক নজর দেখার জন্য ও শেষ বিদায় জানানাের জন্য তাঁরা অশ্রুসিক্ত নয়নে সমবেত হলাে।
শুক্রবার সকাল বেলা হাটহাজারী কলেজ ময়দানে হযরত শেরে বাংলার প্রথম নামায়ে জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। বর্ষার মৌসুম হওয়া সত্ত্বেও এ ঐতিহাসিক জানাযায় লক্ষাধিক লােকের সমাগম হয়েছিলাে। ইতিপূর্বে সেখানে এতবড় জমায়েত আর কোন দিন ঘটেনি। এতে কয়েক সহস্রাধিক আলেম, ফাযেল ও অসংখ্য মাদরাসার ছাত্রও উপস্থিত ছিলেন। এমনকি হাটহাজারী (খারেজী) মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষকদের অনেকও জানাযায় শরীক হয়ে হুযূরকে শ্রদ্ধা জানিয়েছে। হযরতুল আল্লামা কাজী মুহাম্মদ নূরুল ইসলাম হাশেমী সাহেব ইমামে আহলে সুন্নাত আল্লামা গাযী শেরে বাংলা রাহমাতুল্লাহি তা’আলা আলায়হির জানাযা নামাযের ইমামত করেন। বলাবাহুল্য, এরপর ‘ইমামে আহলে সুন্নাত’-এর মর্যাদায় অভিষিক্ত হয়ে আল্লামা গাযী শেরে বাংলা রাহমাতুল্লাহি তা’আলা আলায়হির সুযােগ্য উত্তরসূরি হিসেবে আল্লামা হাশেমী সাহেব কেবলা সুন্নী মুসলমানদের নেতৃত্ব দিয়ে গেছেন। এরপর সিদ্দীক সওদাগরের বর্তমান পেট্রোল পাম্পের সামনে হুযূরের দ্বিতীয় নামাযে জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। অতঃপর হাটহাজারীর প্রাণকেন্দ্রে হুযুরেরই নির্দেশ মােতাবেক পূর্বে খরিদকৃত জায়গায় তাঁকে দাফন করা হয়। শুক্রবার জুমার পূর্বে এই পবিত্র দাফন কার্য সম্পন্ন হয়। এখানে উল্লেখ্য যে, হুযূরেরই নসীহত মোতাবেক ক্ববর শরীফকে খুবই উঁচু ও প্রশস্ত করা হয়। কারণ তিনি জীবদ্দশায় ওসিয়ত করে গেছেন, “তােমরা দাফনের সময় আমার কবরকে অন্তত মাথা বরাবর উঁচু করবে। যাতে করে আমি প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে দাঁড়িয়ে সালাম জানাতে পারি। আমার রওযায় যখন মিলাদ মাহফিল হবে তখনও যেন আমি দাঁড়িয়ে ক্বিয়াম করতে পারি।” ইশকে রসূলের এ এক বিরল দৃষ্টান্ত! এখানে আরাে উল্লেখ্য যে, মুজাদ্দিদে যামান আলা হযরত ইমাম শাহ্ আহমদ রেযা খান ফাযেলে ব্রেলভী রহমাতুল্লাহি তা’আলা আলায়হিও ইন্তিকালের পূর্বে তাঁর কবর শরীফকে প্রশস্থ ও উঁচু করার জন্য নসীহত করেছিলেন।
ওরস মুবারক ও যিয়ারত
প্রতি বৎসর ১২ রজব হাটহাজারী দরবার শরীফ প্রাঙ্গণে মুজাদ্দিদে দ্বীন ও মিল্লাত হযরত আল্লামা গাযী সৈয়দ মুহাম্মদ আজিজুল হক শেরে বাংলা রাহমাতুল্লাহি তা’আলা আলায়হির পবিত্র বার্ষিক ওরস শরীফ মহাসমারােহে অনুষ্ঠিত হয়। এ আযীমুশ্ শান ওরস মুবারকে অগণিত আশেকে রসূল সুন্নী জনতার সমাগম ঘটে। বলতে গেলে এই জনসমাগম এক বিরাট সুন্নী সমাবেশের রূপ ধারণ করে। মাযার শরীফের পশ্চিম পার্শ্বস্থ ময়দানে মাহফিলের নিমিত্তে সুদৃশ্য প্যান্ডেল ও মঞ্চ নির্মিত হয়। ওরস শরীফে অগণিত পীর-মাশাইখ ও ওলামা-ই কেরাম তাশরীফ আনেন। তাঁরা হযরত শেরে বাংলা রহমাতুল্লাহি তা’আলা আলায়হি’র জীবনাদর্শ ও সুন্নিয়াতের আন্দোলনের উপর সারগর্ভ তাকুরীর পেশ করেন। প্রত্যক্ষ অথবা পরােক্ষভাবে সুন্নিয়াতের আন্দোলনের সাথে জড়িত সুন্নী মুসলমানদের বিপুল সমাগম এখানে লক্ষ্য করা যায়। নারায়ে তাকবীর, নারায়ে রিসালাত, নারায়ে গাউসিয়া ও সুন্নিয়াতের স্লোগানে ভক্তরা আকাশ-বাতাস মুখরিত করে তােলে। এ নয়নাভিরাম দৃশ্য চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। ওই দিন হুযূরের পবিত্র মাযার পাকে একের পর এক মিলাদ ও ক্বিয়াম অনুষ্ঠিত হয়, যা সচরাচর অন্য কোন দরবারে দৃষ্টিগােচর হয় না। যাঁর গােটা জীবন সালাত-সালাম, দুরূদ-কিয়ামকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্যই উৎসর্গ করে গেছেন, তাঁর মাযার শরীফে কেউ দুরূদ ও ক্বিয়াম ব্যাতিরেকে শুধুমাত্র যিয়ারত করে ফিরে যাবার দুঃসাহস দেখায় না। আসলে তিনি মিলাদ ও ক্বিয়ামকে কতটুকু ভালবাসতেন তাঁর পবিত্র মাযার শরীফে আসলে তা উপলব্ধি করা যায়। তাছাড়া ওরস মুবারকের আরেকটি বরকতময় বিশেষ আকর্ষণ হচ্ছে তাবাররুক’। তাঁর পবিত্র ওরসের তাবাররুক লাভ করার জন্য অনেককে বিশেষ তৎপর হতে দেখা যায়।
আল্লামা গাযী শেরে বাংলা রাহমাতুল্লাহি তা’আলা আলায়হি-এর পবিত্র মাযার শরীফ যিয়ারতের ফযীলত ও বরকত অকল্পনীয়। তাঁর মহান দরবারে গরীব-দুঃখী সকলের অভাব মােচন হয় বলে প্রখ্যাত সুন্নী ওলামা-ই কেরাম তাঁকে ‘খাজায়ে বাঙ্গাল’ উপাধিতে ভূষিত করেন। বিশেষতঃ সুন্নিয়তের আন্দোলনের বীর সৈনিকদের জন্য তাঁর দরবার একটি বিশেষ আকর্ষণ। কারণ তিনি তাে বাংলার আলা হযরত, সুন্নিয়াতের মহান বীর সিপাহ সালার। এ দরবার তাে নক্বশায়ে বেরেলী শরীফ। তাই তাে তিনি এরশাদ করে গেছেন, “তােমরা যদি বাতিলদের সাথে মুনাযারায় অবতীর্ণ হও কিংবা কোন সংঘর্ষ হয়, আমার রওযা শরীফ যিয়ারত করবে। তার ফায়সালা ও প্রতিকার ইনশা-আল্লাহ্ আমি করে দেব।”
সন্তান-সন্ততি
প্রথম স্ত্রীর সন্তানঃ ১. সৈয়দ মুহাম্মদ আমীনুল হকু আলক্বাদেরী, ২. সৈয়দ মুহাম্মদ যিয়াউল হক আলক্বাদেরী, ৩. সৈয়দ মুহাম্মদ বদরুল হকু আলক্বাদেরী।
চারকন্যাঃ ১. সৈয়দা হাসীনা বেগম, ২. সৈয়দা কসীদা বেগম, ৩. সৈয়দা সাকীনা বেগম, ৪. সৈয়দা চমন আরা বেগম (বুলবুল)। দ্বিতীয় স্ত্রীর সন্তানঃ ১. সৈয়দ মুহাম্মদ আবদুল হক্ব আলক্বাদেরী, ২. সৈয়দ মুহাম্মদ নূরুল হক্ব আলক্বাদেরী, এক কন্যা: ১. সৈয়দা মমতায বেগম
তৃতীয় স্ত্রীর সন্তান: একপুত্র- ১. সৈয়দ মুহাম্মদ মােজাহেরুল হক্ব আলক্বাদেরী